আয়োজন: জামাইষষ্ঠীর আগে পাখার পসরা। বালুরঘাটে। নিজস্ব চিত্র
শ্বশুরবাড়িতে গেলে ঢুকতে না হয় কোয়রান্টিনে— সেই আশঙ্কায় এ বার জামাইষষ্ঠীতে যেতে গররাজি অনেক জামাই।
‘বহিরাগত’ জামাইকে আদৌ পাড়ার লোক ঢুকতে দেবেন কিনা, সেই আতঙ্কে রয়েছেন শ্বশুরমশাইরাও। কিন্তু শাশুড়ির মন কি তা মানে? তাই জামাইদের ফোন করে ষষ্ঠী করতে আসার জন্য জোরাজুরি চলছেই। একমাত্র ব্যতিক্রম একই পাড়ায় বিয়ে করা জামাইরা।
দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুরের বাসিন্দা, রেলকর্মী তাপস মণ্ডল সদ্য বিয়ে করেছেন। এ বছর তার প্রথম জামাই ষষ্ঠী। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ থেকে শাশুড়ি একাধিক বার ফোনও করেছেন। কিন্তু যাওয়ার উপায় নেই। তাপসের কথায়, "জীবনের প্রথম জামাইষষ্ঠীতে যেতে পারলাম না। পরিস্থিতি বুঝে নিজেকে সান্ত্বনা দিলেও স্ত্রীকে কিছুতেই বোঝাতে পারছি না।’’ মালদহের মকদুমপুরের শ্যামল ঘোষের আট মাস আগে বিয়ে হয়েছে। স্ত্রীয়ের বাপের বাড়ি মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে। শাশুড়ি ষষ্ঠীতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিন্তু লকডাউনে শ্বশুরবাড়ি যাবেন কী ভাবে, তাতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শ্যামল। তিনি বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে মালদহ থেকে বহরমপুর যাওয়ার জন্য গাড়ির প্রশাসনিক অনুমতির বিষয়টি জটিল। চিকিৎসার জন্য ছাড় রয়েছে, কিন্তু জামাইষষ্ঠী বলে গাড়ির অনুমতি করা যাবে না। সব ঠিক থাকলে আগামী বার একসঙ্গে দু’বারের ষষ্ঠী সেরে নেব।’’
রায়গঞ্জের উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা দেবশ্রী বড়ালের সাত বছর আগে হুগলির শ্রীরামপুরে বিয়ে হয়েছে। প্রতি বছর জামাইষষ্ঠীতে দেবশ্রী তাঁর স্বামী শুভজিৎকে নিয়ে বাপের বাড়িতে আসেন। দেবশ্রীর কথায়, ‘‘এ বছর জামাইষষ্ঠীতে গেলে বাসিন্দারা আমাদের হোম কোয়রান্টিনে পাঠিয়ে দিতে পারেন। তাই যাচ্ছি না।’’ শহরের মোহনবাটী এলাকার বাসিন্দা তবলার শিক্ষক দীপেন্দু কর্মকারের শ্বশুরবাড়ি বিহারের কিসানগঞ্জে। তারও আশঙ্কা শ্বশুরবাড়িতে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের হোম কোয়রান্টিনে পাঠিয়ে দিতে পারেন। ইসলামপুরের আর এক বাসিন্দা, স্কুলশিক্ষক উদয় দাস বলেন, "মুর্শিদাবাদ থেকে শ্বাশুড়ি বার বার ফোন করেই চলেছেন। কিন্তু যাওয়া হবে না। গেলে যদি কোয়রান্টিন করে দেয়!’’
এলাকাবাসীর অনেকে বলছেন, জামাইষষ্ঠী না হওয়ায় আড়ালে হাসছেন শ্বশুরমশাইরা। কারণ সব জিনিসের দামে কার্যত আগুন লেগেছে। এক কেজি খাসির দাম ৮০০ টাকা। রুই মাছ ৩০০ টাকা কেজি, কাতলা ৪০০ টাকা কেজি থেকে শুরু, আড় ৭০০-৮০০ টাকা কেজি। জামাই এলে তাঁদের আপ্যায়নে লকডাউনের বাজারে বেরিয়ে যেত কয়েক হাজার টাকা। সেই খরচের হাত থেকে ‘বেঁচে’ যাওয়ায় তাই আড়ালে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন অনেক শ্বশুর-ই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy