রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রজনীকান্ত সেনের কলমে উঠে এসেছিল চড়ুই পাখির কথা। রজনীকান্ত সেনের ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতায় চড়ুই বাবুই পাখির উদ্দেশে বলেছিল, “আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে...”। আবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কলমে উঠে এসেছিল, “চড়ুই পাখির আনাগোনা মুখর কলভাষা/ ঘরের মধ্যে কড়ির কোণে ছিল তাদের বাসা।”
তবে পাখি প্রেমিকদের মতে, বর্তমানে সময়ে চড়ুই আর মহাসুখে নেই। চড়ুইয়ের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে বলে দাবি। বৃহস্পতিবার ২০ মার্চ বিশ্ব চড়ুই দিবসে চড়ুইয়ের পুরনো সে দিন ফেরানোর উদ্যোগ দেখা গেল কোচবিহারে। বন দফতর জানিয়েছে, জেলার রসিকবিল মিনি জ়ুতে বিভিন্ন পাখি দেখার সুযোগ রয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে সেখানে ঘুরতে আসা স্কুল পড়ুয়াদের কাছে চড়ুই রক্ষার ব্যাপারে বাড়তি জোর দিয়ে বার্তা দেওয়ার কাজ শুরু হয়।
কোচবিহারের ডিএফও অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “চড়ুই রক্ষায় সচেতনতা বাড়ানো সব থেকে বেশি জরুরি। আমরা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এ দিন থেকেই বাড়তি জোর দিয়ে প্রচারে উদ্যোগী হয়েছি। পড়ুয়াদের ওই ব্যাপারে বোঝাতে মিনি জ়ুয়ের কর্মীরাও উৎসাহী।” কোচবিহারের একটি পরিবেশপ্রেমী সংস্থা পর্যাবরণ সংরক্ষণের আহ্বায়ক বিনয় দাস বলেন, “আগের তুলনায় কোচবিহার শহরে গাছের সংখ্যা কমেছে। বিভিন্ন ফল বা পাখির পছন্দের গাছের সংখ্যা বাড়াতে সে জন্য চেষ্টা হচ্ছে। বৃহস্পতিবারও ৩০টি পাখিদের পছন্দের গাছের চারা রোপণ করা হয় রাজবাড়ির পিছনের দিকের ফাঁকা জায়গায়।”
চড়ুই-সহ অন্য পাখিদের জন্য ফল, পছন্দের গাছ বাড়ানোর ওই উদ্যোগের প্রশংসা করছেন অনেকেই। কোচবিহারের পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাস গ্রূপের সম্পাদক অরুপ গুহ বলেন, “চড়ুই দানা শস্য, পোকামাকড় খেতে পছন্দ করলেও ছোট জামের মতো ফল খায়। কিছু ডাল পাতার ঝোপযুক্ত গাছেও ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে। ফলে সে রকম গাছ লাগানোর চেষ্টা হলে তা চড়ুইয়ের জন্য ভাল।”
বাসিন্দারা জানান, এক দশক আগেও কোচবিহারের বহু বাড়িতে চড়ুই দেখা যেত। পাখির কিচিরমিচির সকালে অন্য রকম পরিবেশ তৈরি করত। চড়ুইয়ের পছন্দের বাড়ি, ঘুলঘুলি কমে যাওয়ায় সঙ্কট বাড়ে বাসস্থানের। এ ছাড়াও কীটনাশকের ব্যবহার থেকে দূষণ নানা সমস্যার প্রভাব পড়ে ছোট্ট সুন্দর পাখিদের জীবনচক্রে। ২০১০ সাল থেকে ফি বছর বিশ্ব চড়ুই দিবস পালন যেন পুরনো সুদিন ফেরানোর লড়াইও।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)