প্রতীকী ছবি
লকডাউনে দু’মাস ধরে স্কুল বন্ধ। গোড়ায় কিছু দিন নিজেকে গৃহবন্দি রেখেছিলেন। কিন্তু এর পরেই তাঁর দৈনন্দিন রুটিন বদলে যায়। তিনি ইটাহারের চালুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পার্থসারথি মিত্র। রায়গঞ্জ শহরের রমেন্দ্রপল্লির বাসিন্দা পার্থসারথি ভোরের আলো ফুটতেই গত দেড় মাস ধরে সাইকেল বা টোটোয় ব্যাগ, বস্তা নিয়ে বার হয়ে পড়ছেন। দিনভর ঘুরছেন ইটাহারের বিভিন্ন গ্রামে। এখন সেই গ্রামগুলিতে লোকজন তাঁকে চিনে ফেলেছে। তিনি এলেই সাড়া পড়ে যাচ্ছে, মাস্টারমশাই এসে গিয়েছেন!
পার্থসারথি বলেন, ‘‘লকডাউনের ফলে ইটাহার ব্লকের দুর্লভপুর, দুর্গাপুর, মারনাই ও ইটাহার পঞ্চায়েতের বহু মানুষ কর্মহীন। দু’বেলা দুমুঠো খাবার জুটছে না। নিজের সাধ্য মতো তাই চাল, ডাল, আটা, সয়াবিন ও আনাজপাতি দিচ্ছি।’’
শুধু পার্থসারথিই নন, লকডাউনের দু’মাস ধরে রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, হেমতাবাদ, ইটাহার, করণদিঘি, ইসলামপুর, চোপড়া, গোয়ালপোখর-১ ও ২ ব্লকের কর্মহীন হয়ে পড়া দুঃস্থ বাসিন্দাদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী, মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার বিলি করে চলেছেন অনেকেই। যেমন ধরা যাক, রায়গঞ্জের শিলিগুড়ি মোড় ও ইসলামপুর শহরের দু’টি কমিউনিটি কিচেনের কথা। দু’টি রাজনৈতিক দলের উদ্যোগে গত দু’সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ওই কমিউনিটি কিচেন থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে রান্না করা খাবার বিলি করা হচ্ছে। এঁরা কেউ এসেছেন ভিন্ রাজ্য থেকে তো কেউ ভিন্ জেলা থেকে।
কয়েক দিন আগে পটনা থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন চাঁচলের বাসিন্দা পরিযায়ী শ্রমিক আলি ইমরান সরকার। তিনি বলেন, ‘‘মাইলের পর মাইল খালি পেটে হেঁটেছি। শিলিগুড়ি মোড়ে কমিউনিটি কিচেনের ভাত ও সয়াবিনের তরকারি হাতে পেয়ে মনে হয়েছে যেন অমৃত!’’
রায়গঞ্জের ব্যবসায়ী কৃষ্ণ কল্যাণী, উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের রায়গঞ্জ ডিপোর কর্মী কৌশিক দে, রায়গঞ্জের দু’টি ক্লাবের কর্ণধার অর্ণব মণ্ডল, সম্রাট বসু, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কৌশিক ভট্টাচার্য, কৌশিক চক্রবর্তীর মতো অনেকেই লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে কখনও রান্না করা খাবার, আবার কখনও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী ও মাস্ক নিয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কর্মহীন ও দুঃস্থ মানুষদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। ইটাহারের দুর্লভপুর পঞ্চায়েতের ভাগনইলের বাসিন্দা ওই পঞ্চায়েতেরই কর্মী আব্দুল সাত্তার তো আবার ঘোড়ার গাড়ি ছুটিয়ে ইটাহারের বিভিন্ন এলাকায় চাল, ডাল, তেল, নুন, সাবান, মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিলি করে চলেছেন। বহু পশুপ্রেমী বাসিন্দাও লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে পথকুকুর, ষাঁড় ও গরুদের খাবার বিলি করে চলেছেন।
তবে এত কিছুর মধ্যেও জেলার পিছিয়ে পড়া ব্লক বলে পরিচিত গোয়ালপোখর-২ ব্লকের চাকুলিয়া থানার বিভিন্ন এলাকায় এখনও পর্যন্ত সব দুঃস্থ পরিবারের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
রায়গঞ্জের শক্তিনগরের বাসিন্দা চন্দন সাহার বক্তব্য, ‘‘ছোট চায়ের দোকানের রোজগার থেকে স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সংসার চলে। লকডাউনের গোড়ায় খাবার জোগাড় করতে পারছিলাম না। খবর পেয়ে আমার দোকানের বেশ কয়েক জন খদ্দের বাড়িতে এসে আমাকে খাবার দিয়ে যান।’’ নিঃশব্দে চোখের জল মুছে তিনি বলেন, ‘‘সমাজ এখনও মানবিকতা হারায়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy