দার্জিলিং হিলস বিশ্ববিদ্যালয়।
এই প্রথম ‘অফলাইন’-এ ক্লাস করার সুযোগ পেতে চলেছেন দার্জিলিং হিল্স ইউনিভার্সিটির চূড়ান্ত শিক্ষাবর্ষের তথা চতুর্থ সিমেস্টারের পড়ুয়ারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম। খুশির হাওয়া পড়ুয়াদের মধ্যে।
সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ১২-২৩ জুন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে তাঁদের ক্লাস হবে। ছয়টি বিভাগে মোট ১৬৩ জন পড়ুয়া ক্লাস করবেন। বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলো থেকে জনা ৩০ শিক্ষক-শিক্ষিকা তাদের ক্লাস নেবেন। শুরুতে কোভিড পরিস্থিতির সময় থেকে কেবল ‘অনলাইন’ ক্লাস হয়েছে। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতি কাটিয়ে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘অফলাইন’-এ স্বাভাবিক নিয়মে ক্লাস শুরু হলেও, পরিকাঠামো না থাকায় দার্জিলিং হিল্স ইউনিভার্সিটিতে তা শুরু করা যায়নি। বিপাকে পড়েন পড়ুয়ারাও। উপাচার্য প্রেম পোদ্দার বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। তাদের ক্যাম্পাসে চতুর্থ সিমেস্টারের পড়ুয়াদের ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিক্ষক, পড়ুয়াদের ইতিমধ্যেই তা জানানো হয়েছে। ক্লাসে বসে পরীক্ষা ব্যবস্থাও হবে।’’
মংপু আইটিআই কলেজে হিল্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ভবন চালু হলেও, সেখানে শিক্ষক-পড়ুয়াদের থাকার ব্যবস্থা নেই। পাহাড়ে যাতায়াতের সমস্যায় প্রতিদিন গিয়ে ক্লাস করাও সম্ভব নয়। এ দিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের পড়ুয়াদের চূড়ান্ত শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষারও দেরি নেই। আগামী জুলাই মাসের শেষে বা অগস্টে পরীক্ষা। অথচ, ক্লাসে গিয়ে তাঁদের পড়াশোনার ব্যবস্থা না হলে, বা ক্যাম্পাসে বসে পরীক্ষা দিতে না পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশন থেকে পরবর্তীতে তাঁদের শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা কর্তৃপক্ষের একাংশের।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, গত ২৪ মার্চ অস্থায়ী উপাচার্য হিসাবে যোগ দেওয়ার পরে, প্রেম পোদ্দার কার্শিয়াঙের ডাউহিলে প্রেসিডেন্সি কলেজের নতুন ভবনে অস্থায়ী ভাবে ক্লাস চালুর প্রস্তাব দেন উচ্চ শিক্ষা দফতরে। তাতে লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ক্লাসের ব্যবস্থা হচ্ছে। এর আগে ওমপ্রকাশ মিশ্র উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য থাকার সময় তা নিয়ে আলোচনা হয়। তিনি কলা, বাণিজ্য ও আইন বিভাগের ডিন রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়িত্ব দিয়ে যান বিষয়টি দেখতে। ডিন বলেন, ‘‘জুন মাসের এ সময় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি থাকে। তাই দার্জিলিং হিল্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস হতে সমস্যা নেই। তা নিয়ে বৈঠক করা হয়। যে সমস্ত বিভাগে পড়াশোনা হচ্ছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপকদের কাছেও অনুরোধ করা হয় এ সময় ক্লাসের জন্য। তাতে সাড়া মিলেছে। সে মতো ক্লাস করানো হবে।’’
অঙ্ক এবং মাস কমিউনিকেশনের মতো বিষয়ে ল্যাবরেটরির সুযোগও মিলবে। সরঞ্জাম ব্যবহারের কিছু খরচ দিতে হবে হিল্স বিশ্ববিদ্যালয়কে। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে শিক্ষা মহল। পাহাড়-সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা, কলকাতারও কতিপয় পড়ুয়া রয়েছেন হিল্স বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করাতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যাতায়াতের খরচ এবং পড়ুয়াদের টিফিনের মতো কিছু সুবিধা দিতে উচ্চ শিক্ষা দফতরে অর্থ মঞ্জুরের আবেদন করলেও, সাড়া মেলেনি বলে দাবি সূত্রের। আপাতত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অন্য তহবিল থেকে সে ব্যাপারে কিছু ব্যবস্থা করছেন। পড়ুয়ারা নিজেদের মতো থাকার ব্যবস্থা করবেন বলে জানা গিয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি নিবাসে রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে।
কোচবিহারের তুফানগঞ্জের বাসিন্দা হিল্স ইউনিভার্সিটির চতুর্থ সিমেস্টারের ছাত্র জ্যোতিষ্ময় সরকার বলেন, ‘‘ভাল উদ্যোগ। আরও আগে হলে ভাল হত। তবে অল্প সময়ের জন্য হলেও শেষ পর্যন্ত ক্লাস করতে পারায়, আমরা খুশি।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী জলপাইগুড়ি বাসিন্দা নমিতা রায়ের কথায়, ‘‘কয়েক দিনের ক্লাসে শিক্ষক-শিক্ষিকারা হয়তো সব কিছু পড়াতে পারবেন না। তবে এটার দরকার ছিল।’’ ‘অফলাইন’ ক্লাসের জন্য তাঁরা শিলিগুড়ি শহরে থাকার ঘর খুঁজছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy