সোনুকে সাহায্য। ছবি: গৌর আচার্য
এ বছর মাধ্যমিকে সফল এক মেধাবী ছাত্রের পাশে দাঁড়াল রায়গঞ্জের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। মঙ্গলবার দুপুরে রায়গঞ্জের সুদর্শনপুর এলাকায় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংগঠনের তরফে রায়গঞ্জের শক্তিনগর এলাকার বাসিন্দা অভাবী পরিবারের ২২ বছর বয়সী পৌনে দুই ফুট উচ্চতার সোনু গুপ্তর হাতে সংগঠনের তরফে একাদশ শ্রেণির কলাবিভাগের সমস্ত বিষয়ের পাঠ্যবই, পর্যাপ্ত খাতা, পেন সহ নানা উপহারসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি, ওই সংগঠনের একাধিক সদস্য সহ স্থানীয় বিদ্যাচক্র হাইস্কুলের শিক্ষক দেবাশিস দত্ত ও মালদহের রতুয়া পারমিতা দাস সহ বহু পথচারী সোনুর হাতে আর্থিক সাহায্যও তুলে দেন।
সংগঠনের সম্পাদক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দরিদ্র পরিবারের প্রতিবন্ধী হয়ে নানা প্রতিকূলতা সামলে সোনু এ বছর মাধ্যমিকে সফল হয়ে নজির সৃষ্টি করেছেন। ওঁকে দেখে পড়ুয়ারা অনুপ্রাণিত হয়েছে বলে আমাদের ধারণা। ভবিষ্যতে পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে যে কোনও সমস্যায় আমাদের সংগঠন ওঁর পাশে থাকবে।’’
জন্মের পর থেকে অন্য শিশুদের মতো সোনুর স্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি ঘটেনি। ২২ বছর বয়সী পৌনে দুফুট উচ্চতার সোনু ১০০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। সোনু এ বছর রায়গঞ্জের মোহনবাটি হাইস্কুল থেকে ২১৩ নম্বর পেয়ে সি গ্রেড পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছেন। ওই স্কুলেই তিনি একাদশ শ্রেণির কলাবিভাগে ভর্তি হয়েছেন।
সোনুর বাবা বাবলুবাবুর বাড়ির সামনে একটি ছোট মুদিখানা দোকান রয়েছে। কিন্তু সেই দোকান ঠিক মতো চলে না। ফলে গত তিন মাস ধরে মেয়ে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী নেহাকে দোকানের দায়িত্ব দিয়ে তিনি বিভিন্ন হোটেলে ঠিকা কাজ করছেন। তাঁর স্ত্রী আরতীদেবীর সারা দিন ছেলেকে দেখভাল করতেই সময় কেটে যায়। ফলে তাঁর পক্ষে বাইরে কোথাও গিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়।
আরতিদেবী জানিয়েছেন, ২২ বছর আগে সোনু অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেয়। এরপর থেকেই অন্য শিশুদের মতো ছেলের স্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি ঘটেনি। সোনু হাঁটাচলা করতে পারেন না। মাথা ও অপরিণত হাত বাদে শরীরের বাকি সব অংশ অসাড়। চার বছর বয়সে পৌনে দুফুট উচ্চতায় পৌঁছনোর পরে সোনুর উচ্চতা বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। সোনুর ১০ বছর বয়স পর্যন্ত কখনও আত্মীয় আবার কখনও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে তাঁকে বহু চিকিত্সককে দেখানো হলেও সোনুর শারীরিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয়নি। পরীক্ষার দিনগুলিতে আরতিদেবীই সোনুকে কোলে নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করেছেন।
সোনু বলেন, ‘‘শারীরিক অক্ষমতার জন্য কোনওদিনও স্কুলে গিয়ে ক্লাস করতে পারি না। সেই পঞ্চম শ্রেণি থেকে শুধু পরীক্ষার দিনগুলিতেই মায়ের কোলে চড়ে স্কুলে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। এখন উচ্চমাধ্যমিকও সেভাবেই পাশ করতে চাই।’’ সোনুর বাবা বাবলুবাবু ও মা আরতিদেবী জানান, আর্থিক অনটনের জেরে তাঁরা মাধ্যমিকে ছেলেকে গৃহশিক্ষক দিতে পারেননি। বোন নেহা ও প্রতিবেশী কয়েকজন শিক্ষক বিনা পয়সায় সোনুকে পড়িয়েছেন। তাঁদের দাবি, তিন বছর আগে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় সোনুকে মাসিক ৬০০ টাকা করে প্রতিবন্ধী ভাতা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু ওই টাকা সংসারের পিছনেই খরচ হয়ে যায়। তাই অতিরিক্ত সরকারি সাহায্যের ব্যবস্থা হলে সোনু ভাল মতো খেয়ে পড়ে পড়াশোনা করতে পারবে। সোনু মাধ্যমিকে অঙ্ক ও ভুগোলে ৩৫ করে, ইংরেজি ও ইতিহাসে ২৬ করে, বাংলায় ২৮, জীবনবিজ্ঞানে ৩২ ও ভৌতবিজ্ঞানে ৩১ নম্বর পেয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy