ছবি: সংগৃহীত
উত্তরবঙ্গের আদিবাসী ভোটবাক্সে যে ভাঙন ধরেছে, গত পঞ্চায়েত ভোটেই কিছুটা মালুম পেয়েছিল শাসকদল। লোকসভা ভোটে উত্তরে যে ভরাডুবি তৃণমূলের, তার পিছনে এটাও বড় কারণ ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। এ দিন আদিবাসীদের জন্য বার্ধক্য ভাতা এবং চা বাগানে মহিলা ও আদিবাসী শ্রমিকদের জন্য চা সুন্দরী প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্য সরকার সেই ক্ষোভে কিছুটা মলম লাগাতে সচেষ্ট হলেন বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
এ বারের বাজেটে ৬০ বছর বা তার বেশি আদিবাসী ব্যক্তির জন্য ‘জয় জহার’ বার্ধক্য ভাতা চালুর কথা ঘোষণা করেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। এই ভাতা অনুসারে মাসে হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে চা সুন্দরী প্রকল্পে চা বাগানের স্থায়ী কর্মীদের জন্য আবাসন করে দেওয়ার কথাও এ দিন বাজেটে ঘোষণা করা হয়। স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘোষণার পরে আলোচনা শুরু হয়েছে গৌড়বঙ্গের জেলাগুলিতে।
প্রশ্ন উঠেছে, লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে ভরাডুবির পরেই কি সেখানকার আদিবাসী সমাজকে তুষ্ট করতে এই ধরনের পদক্ষেপ করা হচ্ছে? তৃণমূলের মালদহ জেলা সভাপতি মৌসম নুর বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার বরাবরই আদিবাসী মানুষদের উন্নয়নে কাজ করে চলেছে। এর আগে মাঝির থান সংস্কারে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। আদিবাসীদের জন্য নানা সরকারি প্রকল্প চালু হয়েছে। এই বার্ধক্য ভাতা তারই অঙ্গ। এর সঙ্গে ভোটের কোনও যোগ নেই।’’ যদিও বিজেপির জেলা সভাপতি গোবিন্দচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার আদিবাসী মানুষদের উন্নয়নে কিছুই করেনি। তার ফল তারা হাতে হাতে পেয়েছে। এখন বিধানসভা ভোটের আগে মন জয় ভাতা চালু করছে তারা।’’
দক্ষিণ দিনাজপুরের বিজেপি জেলা সভাপতি বিনয় বর্মণও দাবি করেন, ‘‘আদিবাসীদের প্রকৃত উন্নয়ন কখনওই চায় না তৃণমূল। যদি আদিবাসীদের উন্নয়ন তারা চাইত, তা হলে তাদের বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় আনত।’’ উত্তর দিনাজপুরের বিজেপি সভাপতি বিশ্বজিৎ লাহিড়ী বলেন, ‘‘আদিবাসীরা এতে প্রভাবিত হবেন বলে মনে হয় না।’’
তৃণমূলের দুই জেলার শীর্ষ নেতৃত্ব, দক্ষিণ দিনাজপুরের অর্পিতা ঘোষ এবং উত্তর দিনাজপুরের অমল আচার্য বিজেপির এই দাবির বিরোধিতা করেছেন। অর্পিতার কথায়, ‘‘রাজ্য সরকার বরাবরই আদিবাসী মানুষদের পাশে রয়েছে। এবারের বাজেটেও তার প্রতিফলন ঘটল।’’ অমল আচার্যের দাবি, ‘‘গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির নেতারা জেলার আদিবাসীদের একাংশকে ভুল বুঝিয়ে ভোট নিয়েছিল। রাজ্য সরকার আদিবাসীদের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছে। এবারে তাঁদের জন্য সরকারি ভাতাও চালু করা হল।’’
এর পরেও প্রশ্ন থেকেই যায়। যে আদিবাসী সমাজ মোটের উপরে এককাট্টা হয়ে পঞ্চায়েতে ভোটে হিংসার অভিযোগ সত্ত্বেও শাসকের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল, লোকসভা ভোটে হাত উপুড় করে দিয়েছিল বিজেপিকে, তাদের মধ্যে কি এ বারে প্রভাব ফেলতে পারবে তৃণমূল? তৃণমূলের একটি অংশের দাবি, এমনিতেই এনআরসি-র ধাক্কায় বিজেপি কিছুটা ব্যাকফুটে। আদিবাসী সমাজেও এই নিয়ে ভয় এবং আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তার সঙ্গে বার্ধক্য ভাতার বিষয়টি যোগ হলে এই ভোট ব্যাঙ্কে ধস নামতে বাধ্য। তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব অবশ্য এখন দেখতে চান, এই প্রকল্পের সুবিধা যেন সঠিক লোকেরাই পান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy