গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান অনন্ত রায়ের সঙ্গে কালচিনির প্রাক্তন তৃণমূল ব্লক সভাপতি পাসাং লামা। রবিবার কালচিনিতে। নিজস্ব চিত্র
বার বার আলাদা রাজ্যের দাবিদার অনন্ত রায়কে (মহারাজ) কেন গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল? কিছু দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চে দেখা গিয়েছে তাঁকে। আমন্ত্রণ পেয়েছেন রাসমেলাতেও। তা নিয়ে দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক তৃণমূল নেতা দাবি করছেন, অনন্তের সঙ্গে দলের এমন সম্পর্কে কর্মীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। দলের আর একটি অংশ অবশ্য তা মানতে নারাজ। তাদের দাবি, তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কের জন্যেই বিজেপির ইন্ধনেও অনন্ত আলাদা রাজ্য নিয়ে বড় কোনও আন্দোলনের দিকে যাচ্ছেন না। তার বাইরেও তারা মনে করছে, অনন্তের হাতে একটি বড় ভোট ব্যাঙ্ক রয়েছে। যা এত দিন পুরোপুরি বিজেপির হাতে ছিল। ভাল সম্পর্ক বজায় রাখলে সেই ভোটব্যাঙ্কেও থাবা বসাতে পারবে তৃণমূল। অনন্তের সঙ্গে সব থেকে ভাল সম্পর্ক তৃণমূলের প্রাক্তন মন্ত্ৰী তথা কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি প্রেমানন্দ দাসের। রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘অনন্ত মহারাজ কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। আর সব কিছুর মধ্যেই রাজনীতি মিশিয়ে দেওয়া ঠিক না। এক জন মানুষের সঙ্গে আর একজন মানুষের ভাল সম্পর্ক থাকতেই পারে।’’ প্রেমানন্দ বলেন, ‘‘এখানে রাজনীতির বিষয় নেই। অনন্ত মহারাজ দিদির (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেন। দিদি হিসেবে তাঁকে শ্রদ্ধা করেন। আমরাও মহারাজকে শ্রদ্ধা করি।’’
কোচবিহার রাজনীতিতে গুঞ্জন রয়েছে, তৃণমূলের মধ্যে অনন্ত মহারাজের সঙ্গে সব থেকে খারাপ সম্পর্ক উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী উদয়ন গুহ এবং তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়ের। কিছু দিন আগেও নাম না করে উদয়ন ও অনন্ত একে-অপরকে তোপ দেগেছেন। উদয়নের বিরুদ্ধে আলাদা রাজ্যের দাবিদারদের ‘হাঁটু ভেঙে দেওয়ার’ হুঁশিয়ারি দেওয়ার অভিযোগ যেমন রয়েছে, তেমনই অনন্তও উদয়নকে ভাষা সংযত করার পরামর্শ দিয়েছেন। উদয়ন বলেন, ‘‘দলীয় ভাবে তাঁর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। তা রাখার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। আমরা আলাদা রাজ্যের বিরোধী। সে ভাবেই আমরা এগিয়ে যাব। সামাজিক অনুষ্ঠানে কে থাকল না থাকল সেটা আলাদা বিষয়।’’ পার্থপ্রতিম বলেন, ‘‘উন্নয়নের কাজে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সবাইকে স্পষ্ট ভাবেই বঙ্গভঙ্গ হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। আমরা আশা রাখি সবাই মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নে যোগ দেবেন।’’
রবীন্দ্রনাথ-প্রেমানন্দ শুধু নয়, অনন্তের সঙ্গে তৃণমূল নেত্রীর সম্পর্কও যো খারাপ না তা বার বার তা উঠে এসেছে নানা ঘটনায়। অনন্ত রায়ের আমন্ত্রণে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কোচবিহারে এসেছেন মুখ্যমন্ত্ৰী। শিলিগুড়িতে বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চে দেখা গিয়েছে অনন্ত রায়কে। ভাইফোঁটাতেও মহারাজের জন্য উপহার পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আবার পাল্টা অনন্ত মহারাজ মুখ্যমন্ত্রীকে উপহার পাঠিয়ে তাঁর বাড়িতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এ বারের রাসমেলায় তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার পক্ষ থেকেও অনন্ত মহারাজকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করা হয়েছে।
অন্য দিকে, আবার অনন্ত মহারাজের সঙ্গে বরাবর বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদেরও সুসম্পর্ক রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রচার মঞ্চে অনন্তকে একাধিক বার দেখা গিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মহারাজের ধুবুড়ির বাড়িতেও গিয়েছিলেন। দিন কয়েক আগে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বাড়িতেও গিয়েছিলেন মহারাজ। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি দাবি করেন, অল্প সময়ের মধ্যে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হচ্ছে কোচবিহার। অনন্ত বরাবর বলেন, তিনি কোনও রাজনৈতিক দল করেন না। তাঁর সঙ্গে সবার সম্পর্ক ভাল। বিজেপির কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক বিরাজ বসু বলেন, ‘‘অশান্তি ছড়িয়ে ফায়দা নেওয়ার রাজনীতি তৃণমূল করে, বিজেপি নয়। বিজেপির অবস্থান বরাবর স্পষ্ট।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy