ফাইল চিত্র।
বিএসএফের এক্তিয়ার বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কি ঘুরপথে রাজ্য তথা উত্তরবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করতে চাইছে? এই প্রশ্নেই এখন উত্তপ্ত উত্তরবঙ্গ। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল দাবি করেছে, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে। অন্য দিকে, কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির বক্তব্য, দেশের সুরক্ষা শক্তিশালী করতেই এমনটা করা জরুরি।
এমন সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষের মনেও প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেরই বক্তব্য, একে তো এর ফলে পুলিশ ও বিএসএফের মধ্যে এক্তিয়ার নিয়ে গোলমাল শুরু হবে। অন্য দিকে, আইনের অপব্যবহারের আশঙ্কাও করছেন অনেকে। উত্তরবঙ্গে সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকলে বেশ কিছু শহর বিএসএফের আওতায় চলে আসার কথা। সে ক্ষেত্রে সেই শহরের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাও কি তবে বিএসএফ নিয়ন্ত্রণ করবে— এই প্রশ্নও উঠেছে।
রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র বলেন, ‘‘বিজেপি সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা রাখতে পারেনি। এখন রাজ্য সরকারকে অন্ধকারে রেখে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতেই এমন পদক্ষেপ। এটা মানুষ মেনে নেবে না।”
রাজ্যের সেচ ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘‘কোনও রকম আলোচনা না করে এ ভাবে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার আসলে রাজ্যের আইনি ব্যবস্থার উপর হস্তক্ষেপ করতে চাইছে। এত দিন তো বিএসএফ সীমান্ত থেকে ১৫ কিলোমিটার এলাকায় কাজ করছে। তার পরেও মালদহের সীমান্ত দিয়ে জাল নোট, গরু, কাফ সিরাপ, গাঁজা পাচার তারা বন্ধ করতে পারছে না কেন? আসলে এটা পশ্চিমবঙ্গের উপর রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।’’
দেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক অবশ্য বলেন, “যে কোনও সময় অন্তর্বর্তী সুরক্ষাকে আরও বেশি শক্তিশালী করার জন্য এবং সীমান্ত সুরক্ষাকে মজবুত করার জন্য বিএসএফ তাদের এলাকা বাড়াতে পারে।” নিশীথ প্রামাণিক আরও বলেন, “দেশের সুরক্ষাকে নিশ্চিত করার জন্য শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, অসম থেকে শুরু করে, রাজস্থান থেকে শুরু করে নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম— সব জায়গায় বিএসএফের এলাকা বাড়ানো হয়েছে।” রাজ্য বিজেপির নবনিযুক্ত সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘এটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। এই নতুন নির্দেশিকায় বিএসএফ আরও বেশি কাজ করতে পারবে।”
যদিও নিশীথ ও সুকান্তের বক্তব্যের পাল্টা যুক্তি দিয়ে তৃণমূলের একাংশ বলছেন, এত দিন তো অসম, ত্রিপুরা লাগোয়া বাংলাদেশ সীমান্ত বিএসএফই পাহারা দিয়েছে, দুই রাজ্যেই বিজেপি সরকার। তা হলে কী ভাবে দিনের পর দিন সেই সীমান্ত পার হয়ে রোহিঙ্গারা এসে ট্রেনে উঠেছে? শেষ পর্যন্ত তারা ধরা পড়েছে এনজেপি-তে। তার আগে পর্যন্ত বিএসএফ ঘুণাক্ষরেও টের পেল না কেন?
রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও এ দিন দিনহাটার জনসভায় বলেন, ‘‘দখলদারি রাজনীতি করা হচ্ছে। কিন্তু বিএসএফ দিয়ে, সেনা দিয়ে দখল করতে পারবে না। কারণ দিল্লিতে এর পরে তুমি নিজেও থাকবে না।’’
দেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, এ ভাবে বিএসএফের এক্তিয়ার বাড়িয়ে দেওয়ার অর্থ, যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা ভেঙে ঘুরপথে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা হাতে নিতে চাইছে কেন্দ্র। বিএসএফ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অধীনে। ফলে সবটাই তাঁর হাতে চলে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গের কোচবিহার থেকে মালদহ পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে ৫৪৯ কিলোমিটার বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। ফলে উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ এলাকা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আওতায় চলে আসবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy