Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪
Gajol

বিস্তর অমিল সুর ও তালে

অনেক পার্টি কর্মী বলছেন, এত দিন যাঁকে স্থানীয় নেতা বা নেত্রী হিসেবে চিনেছি, এ বার তাঁর বা তাঁদের সঙ্গে আমাদের সমীকরণ কী হবে?

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অনির্বাণ রায়
শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:৪৮
Share: Save:

শেষ বিধানসভা ভোটে তিনি জিতেছিলেন সিপিএমের টিকিটে। তাঁকে সমর্থন করেছিল কংগ্রেস। সে বছরই দলবদলে চলে আসেন তৃণমূলে। আর এ বারে চলে গেলেন বিজেপিতে। দীপালি বিশ্বাস মেদিনীপুরে অমিত শাহের মঞ্চে উঠে বিজেপির পতাকা হাতে নেওয়ার পরে গাজলে তৃণমূল পার্টি অফিসে বাজি ফাটানোর খবর মিলেছে। কিন্তু স্থানীয় মানুষজন হতচকিত। তাঁদের অনেকেরই প্রশ্ন, তা হলে এরপরে কোন তালে বাজবে জনগণের প্রতি দীপালির আশ্বাসবাণী?

এই প্রশ্ন শুধু গাজলে নয়, এখন গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে। অনেক পার্টি কর্মী বলছেন, এত দিন যাঁকে স্থানীয় নেতা বা নেত্রী হিসেবে চিনেছি, এ বার তাঁর বা তাঁদের সঙ্গে আমাদের সমীকরণ কী হবে? সাধারণ মানুষের অবস্থা আরও খারাপ। তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, বাম আমলে নানা অভিযোগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে তৃণমূলকে ভোট দেওয়া হয়েছিল। গত লোকসভা ভোটে তৃণমূল আমলের নানা অভিযোগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ভোট দেওয়া হয়েছে বিজেপিকে। এ বারে মুখগুলোই যদি বাম থেকে তৃণমূল হয়ে গেরুয়া শিবিরে ঢুকে পড়ে, সেই ক্ষমতার মধ্যেই থেকে যায়, তা হলে অন্যায়ের প্রতিকার হবে কি? তাল আর লয়েই যদি না মেলে, তা হলে ন্যায়টা মিলবে কী করে— প্রশ্ন ওঁদের।

এই যেমন বাম আমলে তিনি ছিলেন ডুয়ার্সের চা বলয়ের শেষ কথা। কংগ্রেসের হলেও তাঁকে আলিপুরদুয়ারের বাম নেতারাও নাকি সমঝে চলতেন। তাঁকে জনপ্রতিনিধিও করেছিল কংগ্রেস। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসতেই তিনি চলে এলেন ঘাসফুলে এখন তিনি ‘বেসুরো’ গাইছেন। যদিও ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, “দাদা আসলে সুরটা ধরে রাখার চেষ্টা করছে।’’ নানা জনে বলছেন, তিনি নাকি বিজেপির দিকে পা বাড়িয়েছেন। কেন? বামেদের দাবি, যাতে ‘তাল-লয়’ ঠিক থাকে, চা বলয়ে যেন তাঁর সুরেই সকলকে গলা মেলাতে হয় সে বন্দ্যোবস্ত করে রাখাই উদ্দেশ্য।

কোচবিহারের দাপুটে নেতা কমল গুহ যখন সক্রিয়, তখন এই নেতা বাম শিবিরে বামেদের জনপ্রতিনিধিও ছিলেন। তখনও ছিলেন নানা ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত, এখনও যেমন আছেন। রাজ্য জুড়ে পরিবর্তনের হাওয়ায় তিনি তৃণমূলে এসেছিলেন বছর কয়েক আগে। এখন সেই নেতার রাজনৈতিক গানের সুর বদলে গিয়েছে। যদিও সংশোধন করে দিচ্ছেন অনুগামীরাই। বলছেন, “দাদার সুর মোটেই বদলায়নি। বাম শিবির থেকেও তো তিনি প্রতিবাদী গান গেয়েই বেরিয়ে তৃণমূলে এসেছিলেন। দাদা বরাবরই প্রতিবাদী।”

এই নেতার সঙ্গে বেশ মিল জলপাইগুড়ি জেলার এক বিধায়কের। তিনি বাম দলের হয়ে রেকর্ড ভোটে জিততেন। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে তৃণমূলে যোগ দিলেন। গত বিধানসভায় তৃণমূল তাঁকে ফের টিকিট দেয় এবং সে বারও রেকর্ড ভোটে জেতেন তিনি। কিন্তু লোকসভা ভোটের নিরিখে তাঁর আসনটিতে তো গো-হারা হেরেছে তৃণমূল। বিধানসভা ভোটের আগে সুর বদলেছেন সেই বিধায়ক। প্রায়দিনই ভোট কুশলী পিকে থেকে জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন। তাঁর সঙ্গে জেলা সদর থেকে সুর মেলাচ্ছেন আরেক নেতা, একদা যিনি ছিলেন কংগ্রেসের পুর-রাজনীতির মুখ। এখন তৃণমূলের টিকিটে জিতে নিজের পুরোনো পদেই আসীন। তিনি বলছেন, “অপেক্ষা করুন। কিছুদিন পরেই মুখ খুলব।”

তৃণমূল জেলা নেতারা বলছেন, ওই নেতাও মুখ খুললেই নাকি বেসুরো সুর বেরোবে। কেমন সে বে-সুর? ‘গুপি গাইন বাঘা বাইনের’ উদাহরণ টেনে সহাস্যে চায়ের আড্ডায় কেউ কেউ বলছেন, ‘‘সেই যে রাজার বাড়ির দিকে মুখ করে গুপি গাইছিল, কতটা তেমনই। মানে, এত দিনকার কাজের সঙ্গে কারও সুর-তাল মিলছে না।’’ শনিবার অমিত শাহের সভায় কিন্তু এক দীপালি ছাড়া এই কাহিনির বেসুরো গায়কেরা কেউ ছিলেন না। তবে কি ক্রমশ প্রকাশ্য?

অন্য বিষয়গুলি:

Gajol BJP TMC MLa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE