Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
health

ঝাড়ফুঁক করিয়ে মেডিক্যালে, মৃত সর্পদষ্ট কিশোর

চিকিৎসকদের দাবি, ওই কিশোরকে সাপ কামড়ানোর পর অনেক দেরিতে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তত ক্ষণে শরীরের বিভিন্ন অংশে বিষ ছড়িয়ে পড়ে। তার জেরেই মৃত্যু হয়েছে।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:৪০
Share: Save:

সাপে কামড়ানোর পর এক কিশোরকে ওঝার কাছে নিয়ে ঝাঁড়ফুক করিয়েছিলেন পরিবারের লোকেরা। সেখান থেকে বাড়ি ফিরে কিশোর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর পরে পরিবারের লোকেরা তাকে রায়গঞ্জ মেডিক্যালে ভর্তি করেন। তত ক্ষণে প্রায় ১২ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পরে শুক্রবার সকালেই হাসপাতালে ওই কিশোরের মৃত্যু হল। মৃতের নাম শম্ভু বর্মণ (১৫)। বাড়ি রায়গঞ্জ থানার শেরপুর পঞ্চায়েতের দাউদপুর এলাকায়। ওই কিশোর স্থানীয় খোকসা হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ত। এ দিন দুপুরে হাসপাতালের মর্গে কিশোরের দেহের ময়নাতদন্ত করিয়েছে পুলিশ। চিকিৎসকদের দাবি, ওই কিশোরকে সাপ কামড়ানোর পর অনেক দেরিতে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তত ক্ষণে শরীরের বিভিন্ন অংশে বিষ ছড়িয়ে পড়ে। তার জেরেই মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতালের সহকারী সুপার অভীক মাইতি বলেন, “সাপের কামড়ে অসুস্থ বহু রোগী প্রতি বছর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সুস্থ হচ্ছেন। প্রতি ক্ষেত্রেই ঘটনার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, সেই সব রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।”
রায়গঞ্জের উকিলপাড়া এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক শান্তনু দাসের দাবি, কোনও ব্যক্তিকে সাপ কামড়ানোর পরে কমপক্ষে ৩০ মিনিটের মধ্যে অ্যান্টি স্নেক ভেনাম ইঞ্জেকশন দেওয়া হলে ওই ব্যক্তিকে বাঁচানো সম্ভব।
শম্ভুদের বাড়ি থেকে নিকটতম রায়গঞ্জ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দূরত্ব চার কিলোমিটার, রায়গঞ্জ মেডিক্যালও পাঁচ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু সেখানে নিয়ে না গিয়ে মোটরবাইকে চাপিয়ে তাকে বাড়ি থেকে ছ’কিলোমিটার দূরে ওই ওঝার কাছে নিয়ে যান পরিবারের লোকেরা। অন্ধ বিশ্বাসের জন্যই এই পরিণতি বলে মনে করছেন বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের উত্তর দিনাজপুর জেলা সহকারী সম্পাদক গৌতম সিংহ বলেন, “সাপের কামড়ে অসুস্থদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের বদলে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা এক ধরনের কুসংস্কার। খুব শীঘ্রই মঞ্চের তরফে শেরপুর পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের এই বিষয়ে সচেতন করা হবে।”
শম্ভুর বাবা কালুর দাবি, গত সোমবার রাত ১১টা নাগাদ শোওয়ার ঘরের বিছানার উপরে একটি সাপ শম্ভুর বা হাতের মধ্যমা আঙুলে কামড় দেয়। কালু বলেন, “ওই ঘটনার পর ছেলেকে আমরা মোটরবাইকে চাপিয়ে ছ’কিলোমিটার দূরে অর্থগ্রাম এলাকার এক ওঝার বাড়িতে নিয়ে যাই। ওই ওঝা ছেলেকে ঝাঁড়ফুক করে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুটো করে ও চিড়ে বিষ বার করেন। এর পরে ওঝার নির্দেশে ছেলেকে বাড়িতে ফিরিয়ে এনে তাকে সারারাত ঘুমোতে না দিয়ে বসিয়ে রাখি। বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ ছেলে বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর পরে ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করি। শুনেছিলাম ওই ওঝা নাকি সাপের কামড়ে অসুস্থদের সুস্থ করতে পারেন। ছেলেকে ওঝার কাছে না নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করলে, ছেলের হয়তো মৃত্যু হতো না। যেহেতু ভুল আমাদেরই হয়েছে, তাই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করিনি।”

অন্য বিষয়গুলি:

Health Raiganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy