Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Wood Smuggling

Wood Smuggling: ছক কষে ফাঁকা রাস্তায় নজর ওদের

প্রায় নিত্যদিন ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে এ ভাবেই চলে কাঠ পাচার। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, ওই পাচারের পিছনে রয়েছে কিছু বনকর্মীরও মদত।

নমিতেশ ঘোষ , পার্থ চক্রবর্তী
উত্তরবঙ্গ শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২২ ০৭:০৯
Share: Save:

কায়দা অনেকটা গরু পাচারের মতো। আগাম ছক কষে রাখা হয়, কোন পথ, কখন ফাঁকা থাকে। রাস্তায় নজরদারির জন্য রয়েছে ‘লিঙ্কম্যান’। মোটরবাইকে চেপে রাস্তায় আগে বেরিয়ে যায় ওই ‘লিঙ্কম্যান’। মোবাইলে সে সবুজ সঙ্কেত পাঠাতেই চলতে শুরু করে কাঠ বোঝাই গাড়ি। আবার বিপদ বুঝলে আগাম চলে যায় খবর। গাড়িটিকে কোনও জঙ্গলের আড়ালে লুকিয়ে রাখা হয়।

প্রায় নিত্যদিন ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে এ ভাবেই চলে কাঠ পাচার। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, ওই পাচারের পিছনে রয়েছে কিছু বনকর্মীরও মদত। আঁতাঁত রয়েছে কিছু পুলিশকর্মীর সঙ্গেও, যাঁরা সব জেনেও মুখ বন্ধ করে রাখেন। অবশ্য কেউই তা মানতে চান না। দুই বিভাগের তরফেই দাবি করা হয়, এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন।

রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘আমরা কাঠ পাচার অনেক কমিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছি। তা একেবারে একশো শতাংশ কমাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যারা ওই পাচারের সঙ্গে যুক্ত বা পিছন থেকে মদত দিচ্ছে, কেউই ছাড় পাবে না।’’

উত্তরবঙ্গের একটি বড় অংশ বনাঞ্চল। ডুয়ার্সেই বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প, জলদাপাড়া ও গরুমারা অভয়ারণ্য রয়েছে। ৭৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বক্সা বনাঞ্চল। আর সেখান থেকেই কাঠ পাচারের অভিযোগ মেলে বেশি।

বন দফতর সূত্রে খবর, এক সময়ে ওই অঞ্চলে দেদারে কাঠ পাচার হত। ট্রেনে, বাসে চাপিয়ে ডুয়ার্স থেকে কাঠ নিয়ে আসা হত কোচবিহারে। রেলস্টেশন থেকে ট্রাকে-ট্রাকে বোঝাই হয়ে তা পৌঁছত বিভিন্ন এলাকায়। পাচার হওয়া কাঠের মধ্যে ছিল মূলত শাল ও সেগুন কাঠ। চোরাবাজারে যা অনেকটাই কম দামে পাওয়া যেত। পরে, কাঠ পাচার রুখতে কড়াকড়ি বেড়ে যায়। চোরা কারবার অনেকটাই কমে আসে। ইদানীং, তা আবার বাড়ছে। পাচারের পদ্ধতিও পাল্টেছে।

বন দফতর সূত্রে খবর, এখন পাচারকারীরা কাঠ পাচারের জন্য মূলত গলিপথ ও নদীপথ ব্যবহার করে। বক্সা জঙ্গল লাগোয়া নদীতে গাছ কেটে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট জায়গায় সে কাঠ উদ্ধার করে জড়ো করা হয়। এর পরে ছোট গাড়িতে তা বোঝাই করা হয়। ত্রিপল দিয়ে চারদিক ঢেকে নিয়ে রাতের অন্ধকারে কাঠ নিয়ে ছুট দেয় গাড়ি।

বুধবার রাতে এমন ভাবেই বক্সার জঙ্গল থেকে ভাটিবাড়ি হয়ে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের কিছুটা অংশ ধরে তুফানগঞ্জের বাঁশতলায় পৌঁছে যায় চোরাই কাঠবোঝাই একটি গাড়ি। সেটির পিছু ধাওয়া করতে গিয়েই ‘দুষ্কৃতীদের’ হামলায় আক্রান্ত হন বনকর্মীরা। বক্সায় পাহারার কাজে প্রায় আড়াইশো জন বনকর্মী রয়েছেন। বন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘প্রয়োজনের তুলনায় কর্মী সংখ্যা অনেক কম রয়েছে। এক দিকে, বন্যপ্রাণী এবং অন্য দিকে কাঠ—দুই দিকে নজর দিতে গিয়ে অনেকটা জায়গা ফাঁকা পড়ে যায়।’’ সে সুযোগই নিচ্ছে দুষ্কৃতীরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Wood Smuggling North Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE