Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Glacial Lake

চিন্তা বাড়াচ্ছে ‘গ্লেশিয়াল’ হ্রদের আয়তন বৃদ্ধি, সমীক্ষা সিকিমে

গত জুনে পশ্চিম সিকিমের উপরিভাগে পূর্ব রাথং হিমবাহ এলাকায় ঘুরে এসেছে একটি বিশেষ দল। দক্ষিণ লোনাক হ্রদে বিপর্যয়ের পরে, সিকিম জুড়ে তিস্তার গতিপ্রকৃতির সমীক্ষা চলছে।

দক্ষিণ লোনাক হ্রদ।

দক্ষিণ লোনাক হ্রদ। ফাইল ছবি।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৪ ০৮:২৯
Share: Save:

গত কয়েক বছরের আবহাওয়া পরিবর্তনের জেরে, সিকিমে হিমালয়ের কোলে একের পরে এক ‘গ্লেশিয়াল লেক’ (হিমবাহ থেকে তৈরি হ্রদ)-এর আয়তন বৃদ্ধি সরকারি স্তরে ‘উদ্বেগ’ তৈরি করছে। গত অক্টোবরে দক্ষিণ লোনাক হ্রদের পাড় ভেঙে হড়পা বানের তাণ্ডব গোটা দেশ দেখছে। সরকারি সূত্রের খবর, বিশেষ করে ১৬টি হ্রদের আকার বদল হচ্ছে বলে খবর পেয়ে, নিয়মিত নজরদারি বাড়াচ্ছে সিকিম সরকার। সঙ্গী কেন্দ্রীয় সরকার এবং সেনা বাহিনী।

সিকিমের ভারত-চিন সীমান্ত বিদেশ মন্ত্রকের কাছে দেশের মধ্যে ‘অত্যন্ত স্পর্শকাতর’ এলাকাগুলির মধ্যে একটি বলে চিহ্নিত। সমুদ্রপৃষ্ঠের ৩০০ মিটার থেকে ৮,৬০০ মিটার উঁচুতে সিকিমের বিভিন্ন এলাকা রয়েছে। সিকিমের দুই তৃতীয়াংশ উঁচু পর্বতে মোড়া। সেখানে ৪৩৬ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে ৮০টি হিমবাহ রয়েছে। প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে ২৬৬টি ‘গ্লেশিয়াল লেক’। তাদের মধ্যে ১৬টিকে নিয়ে ‘উদ্বেগ’ রয়েছে বলে দাবি সূত্রের।

সিকিম সরকারের এক সচিব পর্যায়ের আধিকারিকের কথায়, ‘‘উন্নয়নের কাজের সঙ্গে হিমবাহের পরিস্থিতিতে নজর রাখাটা সিকিম সরকারের দায়িত্বের মধ্যে থাকছে। গত অক্টোবরের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে, দায়িত্ব আরও বেড়েছে। তাই সমীক্ষা এবং নানা স্তরে নজরদারি শুরু হয়ে গিয়েছে।’’

গত জুনে পশ্চিম সিকিমের উপরিভাগে পূর্ব রাথং হিমবাহ এলাকায় ঘুরে এসেছে একটি বিশেষ দল। দক্ষিণ লোনাক হ্রদে বিপর্যয়ের পরে, সিকিম জুড়ে তিস্তার গতিপ্রকৃতির সমীক্ষা চলছে। নতুন করে একটি সমীক্ষক দল উত্তর সিকিমের উপরে এখনও কাজ করছে বলে সূত্রের খবর। তবে পর্যবেক্ষণ এবং সমীক্ষা মিলিয়ে যা তথ্য আসছে, তাতে হিমালয়ের বুকে থাকা হিমবাহ থেকে তৈরি হ্রদগুলির পাড় কোনও সময় ধসে গেলে, কী মাত্রার বিপর্যয়ে হতে পারে তা ভেবে শঙ্কিত বিজ্ঞানী ও আধিকারিকেরা।

ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সাহায্যে উত্তর, পশ্চিম সিকিম-সহ নানা এলাকায় উপগ্রহের মাধ্যমে ছবি এবং তথ্য সংগ্রহ চলছে। বর্ষা শেষ হতেই কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি দল সিকিমে হিমালয়ের কোলে যে সব হ্রদ নিয়ে চিন্তা রয়েছে, সেগুলির ক্ষেত্র সমীক্ষা ধাপে ধাপে সম্পূর্ণ করতে চাইছে। সে দলে ‘ন্যাশনাল রিমোট সেনসিং সেন্টার’, সেনা বাহিনীর বিশেষজ্ঞ, ‘জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’, ‘ন্যাশনাল ডিজ়াস্টার ম্যানেজমেন্ট অথিরিটি’র প্রতিনিধিরা থাকছেন।

প্রশাসন সূত্রের খবর, গত ১২ জুলাই সিকিমের বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি দফতরের বিজ্ঞানী, অফিসারদের নিয়ে সিকিম সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্তাদের বৈঠক হয়েছে। তাতে সিকিমের সাংসদ ইন্দ্রহাং সুব্বাও উপস্থিত ছিলেন। গত এপ্রিলে ‘ইন্ডিয়ান স্পেস রিসা‌র্চ অর্গানাইজেশন’ (ইসরো) একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছে, তাতে একের পরে এক ‘গ্লেশিয়াল লেক’-এর আয়তন বাড়ছে, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। শীর্ষ স্তরের ওই বৈঠক থেকে সিকিমে একটি নতুন করে ‘রিজিওনাল সেন্টার ফর গ্লেশিওলজি’ তৈরিতে সকলে সম্মত হয়েছেন। রাজ্যের ছাড়পত্র নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে তা নিয়ে আলোচনা শুরুও হয়েছে।

সিকিমের বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘দক্ষিণ লোনাকের মতো একটি হ্রদ থেকে এক রাতে কী মাপের বিপর্যয় হতে পারে, তা সিকিমের চারটি জেলা দেখেছে। তাই আগাম নজরদারি এবং সাধ্য মতো ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

sikkim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE