Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Farming

Self help group: ধান রোয়া থেকে পুজোর ভার, সবেতেই ক্লান্তিহীন মুক্তি-স্বপ্নারা

শিলিগুড়ি মহকুমার লোয়ার বাগডোগরা গ্রামের মুক্তি বর্মণ, স্বপ্না বর্মণ, বিশাখা বর্মণেরা এর আগে কখনওই এ ভাবে ভাবেননি।

ধান রোপণে ব্যস্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা।

ধান রোপণে ব্যস্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। নিজস্ব চিত্র

নীতেশ বর্মণ
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২১ ০৭:১৪
Share: Save:

করোনার জেরে কাজ হারিয়ে বেশ সঙ্কটেই পড়েছিল পরিবারগুলি। সংসারের হাল ধরতে মাঠে নামেন বাড়ির মেয়েরা। গ্রামের সবাই মিলে তৈরি করেন স্বনির্ভর গোষ্ঠী। জমিতে ধান রোয়া থেকে বাড়িতে মাশরুম চাষ, মুরগি পালনের মতো কাজের শুরু, সেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ছাতার তলায়। জেদ এবং পরিশ্রম দিয়ে কিছু দিনের মধ্যেই আসতে শুরু করে সাফল্য, সঙ্গে কিছুটা সচ্ছলতাও। এ বার গ্রামে পুজোর ভারও নিয়েছেন ওঁরা।

শিলিগুড়ি মহকুমার লোয়ার বাগডোগরা গ্রামের মুক্তি বর্মণ, স্বপ্না বর্মণ, বিশাখা বর্মণেরা এর আগে কখনওই এ ভাবে ভাবেননি। ওঁদের কথায়, করোনাই তাঁদের লড়াইয়ের মাঠে নামতে শেখাল। করোনার জেরে অনেকেরই ছেলে বা স্বামী ভিন রাজ্যে কাজ হারিয়েছেন, কেউ স্থানীয় ভাবেই হয়ে পড়েছেন কর্মহীন। মেয়েদের বক্তব্য, সংসার তো থেমে থাকতে পারে না। তাই এলাকার প্রশাসনিক আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনা করে স্বনির্ভর গোষ্ঠীই তৈরি করে ফেলেন ওঁরা। ১০ বিঘা জমি লিজ়ে নেন। শুরু করেন চাষবাস, মুরগি পালন। সেই যে শুরু ব্যস্ততা, তার পর আর কাউকে বসে থাকতে হয়নি। মুক্তি বলেন, ‘‘একটা কর্মযজ্ঞে নেমেছি বলতে পারেন। নিজেদের কাছে নিজেদের শক্তি প্রমাণ করতে এবং অবশ্যই সংসারের স্বার্থে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘পুরুষেরাই বা একা কাজ করবে কেন? আমাদেরও তো করা দরকার! তাই বেরিয়ে এসেছি বাইরে।’’

তা হলে পুজোটাই বা বাদ যায় কেন? গোষ্ঠীর এক সদস্য জানালেন, বাগডোগরা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাতলাবাড়িতে ২২ বছর ধরে পুজো হয়ে আসছে। কিন্তু গত বছর থেকে কাজ চলে যাওয়ায় ছেলেরা পুজোর ব্যাপারে উৎসাহ হারাচ্ছিলেন। তাই মেয়েরা পুজোর দায়িত্বও নিয়েছে এ বার। তাই এই ক’দিন বাড়িতে ছেলেমেয়েদের দেখভাল, রান্নাবান্না এবং গোষ্ঠীর কাজকর্মের পাশাপাশি চাঁদাও তুলতে বেরোচ্ছেন ওঁরা। পুজো কমিটির সভানেত্রী দেবশ্রী সিংহ বলেন, ‘‘সমাজে মেয়েদের স্বাবলম্বী হতে গেলে ঘরে-বাইরে সমান ভাবে দায়িত্ব নিয়ে এগোতে হবে।’’ মুক্তির বক্তব্য, ‘‘সারা বছর কাজের মধ্যেই থাকি। পুজোর এই কয়েকটা দিনই তো আনন্দ হয়।’’ মুক্তি, স্বপ্না বর্মণ, বিশা বর্মণের মতো একদল মহিলাই যেন সমাজের দুর্গা। তাঁদের এই লড়াইয়ের কথা এলাকার ঘরে ঘরে।

পুজো কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এলাকার বেশির ভাগ পরিবার চাষি নয়তো দিনমজুর। করোনায় সংকটে তাঁরা ঘরে বসে না থেকে প্রশাসনের আধিকারিকদের সাহায্যে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দল তৈরি করেন। কাজের সংকটে পরিবারের প্রধানরা বেশিরভাগ সময় বাড়ির বাইরে থাকেন। তাই বলে তো আর পুজোটা বন্ধ থাকতে পারে না। আলোচনা করে পুজো কমিটি করেন। তাঁরা দায়ভার নিলে শুরু হয় পুজো।

মুক্তিরা জানান, ব্যস্ততার ফাঁকে কখন সময় পেরিয়ে যায় তার খেয়ালও রাখাতে পারেন না। সবুজ ধান খেতের একপাশে সাদা কাশ যখন মাথাচাড়া দেয় মনে এক রকম আনন্দ হয়। কাজ শেষে ঘরে ফিরলে ছেলেমেয়েরা নতুন পোশাকের বায়না ধরে। তখন আরও অভাবের জড়তাকে কাঠিয়ে ওঠার শক্তি পান তাঁরা। মুক্তি বলেন, ‘‘সারা বছর আনন্দের অপেক্ষার অবসান পুজোর কয়েক দিনে হয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Farming Self help group
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy