Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

কুইন্টালে ছ’কেজি ধান মাগনা!

একই সঙ্গে উদয়পুরের কিসানমান্ডিতে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার প্রক্রিয়ায় ওজনে কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন চাষিরা। চাষিদের বক্তব্য, কিসানমান্ডিতে ওজনযন্ত্রের কাঁটা বিকল। ফলে মিলমালিকদের আনা বৈদ্যুতিন দাড়িপাল্লার মাধ্যমে ওজন হচ্ছে।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

গৌর আচার্য 
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:৫১
Share: Save:

একদিকে অতিরিক্ত ধান দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। অন্য দিকে ওজনে কারচুপি। রায়গঞ্জে খাদ্য এবং সরবরাহ দফতরের উদ্যোগে চাষিদের কাছ থেকে সহায়ক মূল্যে ধান কেনার ক্ষেত্রে এটাই নিয়ম হয়ে উঠেছে। ধান কেনার দায়িত্বে থাকা সরকারি অফিসারদের সামনেই চাষিদের কাছ থেকে কুইন্টাল পিছু ধানে ৬ থেকে ১২ কেজি ধান অতিরিক্ত নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। চাষিদের অভিযোগ, ওই অতিরিক্ত ধানের দাম দেওয়া হচ্ছে না। কোনও চাষি তা দিতে না চাইলে তাঁর ধান কেনা হবে না বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাধ্য হয়ে তাঁরা বিনে পয়সায় বাড়তি ধান দিচ্ছেন।

একই সঙ্গে উদয়পুরের কিসানমান্ডিতে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার প্রক্রিয়ায় ওজনে কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন চাষিরা। চাষিদের বক্তব্য, কিসানমান্ডিতে ওজনযন্ত্রের কাঁটা বিকল। ফলে মিলমালিকদের আনা বৈদ্যুতিন দাড়িপাল্লার মাধ্যমে ওজন হচ্ছে। তাতে কৌশলে কম দেখিয়ে চাষিদের ঠকিয়ে ধান কেনা চলছে বলে অভিযোগ। রায়গঞ্জের ছটপড়ুয়া এলাকার বাসিন্দা শঙ্কর সিংহ নামে এক চাষির দাবি, ‘‘প্রশাসনের সামনেই চালকল মালিকরা চাষিদের কাছ থেকে মাগনায় অতিরিক্ত ধান নিচ্ছে। ওজনেও কারচুপি করছে।’’

সরকারি উদ্যোগে রায়গঞ্জ ব্লকের ৩ এলাকায় শিবির করে চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনা শুরু হয়েছে। সেখানে উপস্থিত চালকল মালিকেরা তা নিয়ে নিচ্ছেন। রায়গঞ্জের উদয়পুর এলাকার কিষাণমান্ডি, বাহিন ও চাপদুয়ারে গত ১ নভেম্বর থেকে ধান কেনার শিবির চলছে। ওই তিনটি শিবিরে বেশি ধান দিতে হচ্ছে। সব ক’টি জায়গাতেই ওজনে কারচুপি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। রায়গঞ্জ ব্লকে ধান কেনার কাজে খাদ্য দফতরের তরফে নিযুক্ত সহকারি পরিদর্শক ইমানুর রহমানের দাবি, ‘‘অনেক সময় চাষিদের দেওয়া ধানের একাংশ খারাপ হয়। তাই চালকল মালিকরা লোকসান রুখতে কিছু অতিরিক্ত ধান নেন। তবে সরকারি নির্দেশ নেই। চাষিদের কাছ থেকে সঠিক ওজন করেই ধান কেনা হয়।’’

১ নভেম্বর থেকে উত্তর দিনাজপুর জেলার নয়টি ব্লকের কিষাণমান্ডি সহ বিভিন্ন এলাকায় শিবির করে ক্যুইন্ট্যাল প্রতি ১৭৭০ টাকায় ধান কেনার কাজ করছে খাদ্য ও সরবরাহ দফতর। প্রতিটি শিবিরে আগাম নথিভূক্ত চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনা হচ্ছে। পাশাপাশি, অনথিভূক্ত চাষিদের সচিত্র সরকারি পরিচয়পত্র ও জমির নথি দেখেও ধান কেনার কাজ চলছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এবছর এখনও পর্যন্ত জেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি। খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের আধিকারিকদের নজরদারিরে বিভিন্ন চালকল মালিকরা চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনছেন।

রায়গঞ্জের মহারাজপুরের খগেশ্বর সরকার ২০০ মন ধান ফলিয়েছেন। শুক্রবার কিসানমান্ডিতে ৩০ কুইন্টাল ধান বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘‘মোট ১৮০ কেজি ধান অতিরিক্ত দিতে হল। দামও মেলেনি!’’ রায়গঞ্জের রামপুরের বাসিন্দা শঙ্কর সরকারের অভিযোগ, ধান কেনা কাজ শুরু হওয়ার পর গোড়ায় চাষিদের কাছ থেকে কুইন্টাল পিছু ধানে কখনও ৮ কেজি আবার কখনও ১০ বা ১২ কেজি করে অতিরিক্ত ধান নেওয়া হচ্ছিল বিনে পয়সায়। চাষিরা তা নিয়ে হইচই করায় গত দু’সপ্তাহ ধরে ৬ কেজি করে অতিরিক্ত নেওয়া হচ্ছে।

জেলা খাদ্য সরবরাহ আধিকারিক অমিত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চাষিরা খারাপ ধান আনলে তা বাদ দেওয়া যায়। কিন্তু কোনও ভাবেই বাড়তি ধান নেওয়া যায় না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Scam Rice Trading Weight
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy