সাহিন হক। নিজস্ব চিত্র
কিছুদিন আগের ঘটনা। গ্রামেরই সপ্তম শ্রেণির একটি ছেলে আবু কালাম আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়ে। পেটের যন্ত্রণায় ছটফট করছিল। কাছাকাছি দিনহাটা হাসপাতালে দ্রুত নিয়ে যেতে হলে নদী পেরোতে ভরসা একমাত্র নৌকা। কিন্তু সেদিন সন্ধে হয়ে যাওয়ায় সেই পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে বিএসএফের স্পিড বোট চাওয়া হয়। কিন্তু বাঁচানো যায়নি বছর তেরোর কালামকে। স্পিড বোটেই মারা যায় সে। ওই ঘটনা এখনও তাড়া করে বেড়ায় উচ্চমাধ্যমিকে সফল সাহিন হককে। তাঁর একটাই দুঃখ, তাঁর গ্রামে কোনও ডাক্তার নেই। তাই বড় হয়ে ডাক্তার না হন, অন্তত স্বাস্থ্যকর্মী হতে চান তিনি।
গ্রামের নাম জারিধরলা-দরিবসগ্রাম। গীতালদহ বাজার থেকে এই জোড়া গ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে ধরলা নদী। এই গ্রাম থেকেই উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছেন সাহিন। হাজারও কষ্টের মধ্যে পড়াশোনা করে পরীক্ষায় সফল হয়েছেন। ভবিষ্যতে গ্রামের মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার ইচ্ছা তাঁর। তবে পরিবারের আর্থিক সঙ্গতি তাঁর ভবিষ্যতের পড়াশোনায় বাধা হয়ে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাও প্রবল। দুশ্চিন্তায় সাহিনের পরিবারও। সাহিন বিজ্ঞান নিয়ে পাশ করায় খুশি গীতালদহ-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মনছুর আলি মিয়াঁ-সহ অনেকেই। সাহিনের প্রাপ্ত নম্বর ৩৩২। বাংলায় ৬৫, ইংরেজিতে ৬২, রসায়নে ৭০, পদার্থবিজ্ঞানে ৭০ এবং জীববিজ্ঞানে ৬৫।
বর্ষায় ধরলার জলে প্লাবিত হয় গ্রাম। গ্রীষ্মে জল কমে যাওয়ায় চর পেরিয়ে পৌঁছতে হয় গন্তব্যে। গ্রামের একদিকে বাংলাদেশ। আর একদিকে গিতালদহ বাজার। চাইলেই যে কোনও সময় বাজারে যাওয়া যায় না। গিতালদহের দিকে নদীর ধারে বিএসএফের কড়া প্রহরা। সাহিনের বাবা আতর আলি ছোটখাটো ব্যবসা করেন। কয়েক বিঘা জমি থাকলেও আর্থিক সমস্যার জন্য সেই জমি চাষ করতে পারেন না। দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে সাহিন ছোট।
নদী পেরিয়ে যাতায়াত ওঁদের কাছে এক বিভীষিকা। তাই অনেক কষ্ট হলেও সাহিনকে গোসানিমারি এলাকায় কাজী নজরুল হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করান ওঁর বাবা। আলোকঝাড়ীতে একটি মিশনে থাকতেন সাহিন। আতর আলি বলেন, “আর্থিক সঙ্কট সংসারে। বাইরে পাঠিয়ে পড়ানো সম্ভব নয়।” সাহিন বললেন, “আজও কোনও সরকারি সাহায্য মেলেনি। পেলে হয়তো
আমার স্বপ্ন বাস্তব হবে।” এলাকার বিধায়ক জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া বলেন, “ওই ছাত্র কেন স্কলারশিপ পায়নি, তা দেখব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy