আগামী বছর রাজ্যের বিধানসভা ভোট। এখন থেকে তার তোড়জোড় শুরু করে দিতে নেতৃত্ব এবং কর্মীদের নির্দেশ দিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী তথা দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ। সোমবার দলীয় সভা থেকে মন্ত্রীর দাওয়াই, ‘‘যেখানে ক্যাপসুলের প্রয়োজন সেখানে ক্যাপসুল দিতে হবে। যেখানে হোমিয়োপ্যাথির গুলিতে হবে, সেখানে হোমিয়োপ্যাথির গুলি এবং যেখানে অপারেশনের প্রয়োজন হবে, সেখানে অপারেশন করতে হবে।’’ বিরোধীদের অভিযোগ, মন্ত্রীর মন্তব্যে উস্কানি স্পষ্ট। তিনি তৃণমূলের বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ভাষায় কথা বলছেন। এখন থেকেই বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীদের উপর আক্রমণের উস্কানি দিচ্ছেন। যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, ভোটের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় সহজ কথায় কর্মীদের বোঝাচ্ছিলেন উদয়ন।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কোচবিহার জেলায় ভরাডুবি হয় তৃণমূলের। জেলার ন’টি বিধানসভা আসনের ছ’টিতে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থীরা। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে ওই সমস্ত আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া তৃণমূল নেতৃত্ব। সোমবার কোচবিহারের রবীন্দ্রভবনে অনুষ্ঠিত হয় তৃণমূলের ‘বর্ধিত সভা’। সেখানে উপস্থিত উদয়ন ভোটে জয়ের জন্য নানা কৌশলের কথা বলেন। তিনি জানান, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার— এই তিনটি জেলা প্রতিবেশী রাজ্য অসমের পাশে। বিজেপি-শাসিত ওই রাজ্যের পদ্মশিবিরের নেতারা টাকা ছড়িয়ে, গুন্ডামি করে যে ভাবেই হোক বাংলার তিন জেলা ‘নিয়ন্ত্রণ’ করার চেষ্টা করবেন। কিন্তু তৃণমূলকে সেটা রুখে দিতে হবে। উদয়নের কথায়, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেস ওই সমস্ত এলাকায় যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সে জন্য অসমের বিজেপি নেতাদের দায়িত্ব দেবে তাঁদের দল। বিজেপি কী ধরনের ‘স্টেপ’ নিতে পারে, কী রকমের গন্ডগোল করতে পারে, তা মেপে নিয়ে (আমাদের) আলোচনায় বসতে হবে। তাদের রুখে দিতে যে যে পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত, তা করতে হবে।’’
তার পর উদয়ন বলেন, ‘‘অর্থাৎ, যেখানে ক্যাপসুলের প্রয়োজন সেখানে ক্যাপসুল, যেখানে হোমিওপ্যাথির গুলিতে হবে, সেখানে হোমিয়োপ্যাথি গুলি এবং যেখানে অপারেশনের প্রয়োজন হবে, সেখানে অপারেশন করে বিজেপি নেতাদের বুঝিয়ে দিতে হবে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কোচবিহার জেলার নয়টির নয়টি আসন আমাদের দখল করতে হবে।’’
আরও পড়ুন:
উদয়নের এই ‘দাওয়াই’ ছড়িয়ে পড়ার পর বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি সুকুমার রায় বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী এবং তাঁর দলের সঙ্গে আর সাধারণ মানুষ নেই। তাই জোর করে ভয় দেখিয়ে ভোট করানো ছাড়া তাঁদের কাছে আর কোনও রাস্তা নেই। তাই উনি মাঝেমধ্যেই এই সমস্ত হুমকি দেন।’’ বিজেপি নেতার পাল্টা চ্যালেঞ্জ, ‘‘২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যদি তৃণমূল জোর করে ভয় দেখিয়ে ভোট করানোর চেষ্টা করে তা-হলে বিজেপিও ছেড়ে দেবে না।’’