শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সহকারি সভাধিপতি রোমা রেশমি এক্কা এবং তাঁর গাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।
শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সহকারী সভাধিপতির গাড়িতে নীলবাতি। গাড়িতে নীল আলো জ্বালিয়ে মহকুমার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরছেন তিনি। বিভিন্ন বৈঠকে আসছেন শিলিগুড়িতে। এই নীল আলোতেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। মহকুমা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি তাঁর গাড়িতে নীলবাতি ব্যবহার করতে পারেন কি? শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি অরুণ ঘোষের জানা নেই। ইতিমধ্যে এ নিয়ে শুরু হয়েছে শোরগোল।
শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে রাজনীতির ময়দানে উঠে এসেছেন অভিনেত্রী রোমা রেশমি এক্কা। মহকুমা পরিষদের সিংহভাগ এলাকা আদিবাসী অধ্যুষিত। কাজেই আঞ্চলিক ভাষায় সিনেমার পরিচিত মুখ রোমাকে তুরুপের তাস করে তৃণমূল। বামেদের এক সময়কার দুর্গ ভেঙে বিপুল ভোটের ব্যবধানে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ দখল করে তৃণমূল। মহকুমা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি হন রোমা। সেই রোমা কেন নীলবাতিওয়ালা গাড়ি চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাই নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
দীর্ঘ সময় ধরে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ ছিল বামেদের দখলে। সহকারী সভাধিপতির নীলবাতির গাড়ি চড়া নিয়ে বামেদের প্রাক্তন মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি তাপসকুমার সরকার বলেন, ‘‘কলকাতা হাই কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে কারা নীলবাতি ব্যবহার করতে পারবেন, আর কারা লালবাতি লাগাতে পারবেন। আমি যখন সভাধিপতি হই, নির্দেশিকা দেখে তার পরই গাড়িতে আলো লাগিয়েছিলাম। মহকুমা পরিষদের শুধুমাত্র অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক (এইও) এবং সভাধিপতির গাড়িতে আলো লাগাবার নির্দেশ রয়েছে।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘এটা তৃণমূলের চরিত্র। মানুষের সামনে এরা নিজেকে কেউকেটা হিসাবে তুলে ধরছেন। রোমাও তাঁদের মধ্যে এক জন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এমন কোনও কারণ নেই যে সহকারী সভাধিপতিকে গাড়িতে নীল আলো ব্যবহার করতে হবে। উনি অত বড় নেত্রীও নন যে, আলাদা করে নিরাপত্তারক্ষী লাগবে। এটা আসলে আইনের অপমান। মহকুমা পরিষদের মানুষদের অপমান করা।’’
সরকারি নিয়ম বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ যাঁরা করেন, সেই উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের গাড়িতে এবং আপৎকালীন পরিষেবা দেওয়া হয় এমন গাড়িতে নীলবাতি ব্যবহার করা যাবে। রোমা-বিতর্কে দার্জিলিঙের জেলাশাসক প্রীতি গয়ালের মন্তব্য, ‘‘বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে।’’ অন্য দিকে, মহকুমা পরিষদের বিজেপির কিসান মোর্চার সাধারণ সম্পাদক অনিল ঘোষের দাবি, এমন ঘটনা ‘লজ্জাজনক’। মহকুমা পরিষদের সহকারি সভাধিপতিকে নিশানা করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ওঁর কোনও ধারণাই নেই, কে নীলবাতি বা কে লালবাতি নিয়ে ঘুরতে পারেন। বিডিও, এসডিও, ডিএম বা পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা নীলবাতি লাগাতে পারেন গাড়িতে। জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত তাঁরা গাড়িতে নীলবাতি লাগাতে পারেন। কিন্তু উনি তো স্রেফ জনপ্রতিনিধি। মানুষের পাশে থাকা তাঁর কাজ। ওঁর গাড়িতে কেন নীলবাতি থাকবে? সাধারণ মানুষ এদের সামনে যাতে না যেতে পারে, মানুষের অভাব এবং অভিযোগ যাতে শুনতে না হয় তার জন্যই এই নীলবাতি।’’
সংশ্লিষ্ট বিতর্কে মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি অরুণ ঘোষ জানাচ্ছেন, রোমার গাড়িতে নীলবাতি লাগানোর কথা তিনি জানেন না। দেখেননি। তাই এ নিয়ে কিছু বলতে পারবেন না। আর রোমার দাবি, বুধবার পর্যন্ত তাঁর গাড়িতে নীলবাতি ছিল না। বৃহস্পতিবার তাঁর গাড়ির চালক নীলবাতি লাগিয়ে দেখেছিলেন, কেমন লাগে। তাঁর কথায়, ‘‘নীলবাতি লাগানো থাকলে প্রশসানিক কাজের সুবিধা হবে। কাজের জন্য আমাকে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। রাস্তায় যানজট থাকলে জরুরি বৈঠকে পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়। গাড়িতে লাগানো বোর্ড অনেক সময় ট্র্যাফিকের দায়িত্বে থাকা লোকজনের চোখে পড়ে না। তাই নীলবাতি থাকলে ভাল।’’ কিন্তু এই বিতর্কের মধ্যে কি আর নীলবাতি লাগিয়ে রাখবেন গাড়িতে? মহকুমা পরিষদের সহকারী সভাধিপতির জবাব, ‘‘নীলবাতি লাগানোর নির্দেশিকা যদি সরকার থেকে পাওয়া যায়, তা হলে খুবই সুবিধে হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy