—প্রতীকী চিত্র।
মা এবং মেয়ের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। রবিবার দুপুরে শিলিগুড়ি পুরনিগমের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিনগর এলাকায় একই বাড়ি থেকে জোড়া দেহ মেলার ঘটনার তদন্তে নেমে একটি চিরকুট পেয়েছে পুলিশ। তাতে নাম রয়েছে এক স্থানীয় তৃণমূল নেতার। এটা জানাজানি হতেই এলাকায় শোরগোল শুরু হয়েছে।
রবিবার শোয়ার ঘরের বিছানার উপর এক তরুণীর দেহ মেলে। মায়ের দেহ মেলে ঝুলন্ত অবস্থায়। আশিঘর ফাঁড়ির পুলিশ তদন্ত শুরু করে ওই ঘটনার। ইতিমধ্যে দু’টি দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের একটি সূত্রে খবর, যে ঘর থেকে দেহ উদ্ধার হয়, রবিবার রাতেই সেখান থেকে একটি চিঠি পাওয়া গিয়েছে। সেখানে আত্মহত্যার কারণ হিসাবে রয়েছে জমি সংক্রান্ত সমস্যার কথা। সেখানে তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা কমিটির অন্যতম সম্পাদক প্রসেনজিৎ রায়ের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি তৃণমূল কর্মী সুনীল দাস, সুজিতকুমার ঘোষ, সুভাষ দাস, প্রদীপকুমার চৌধুরীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ওই চিঠির উপর ভিত্তি করে রবিবার রাতেই আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে।
মৃতদের পরিবারের অভিযোগ, অনেক দিন ধরে তৃণমূল নেতা প্রসেনজিৎ তাঁর দলবলকে ওই বাড়িতে পাঠাতেন। ওই লোকজনের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকত। মৃতা লতা সরকারের স্বামী সাধন সরকারের অভিযোগ, ‘‘বছর খানেক আগে প্রসেনজিতের কাছ থেকে একটি জমি কিনেছিলাম। সেই জমি প্রসেনজিৎ নিজেই ‘ডিসপুট ল্যান্ড’ তৈরি করে আরও টাকা চায় আমার কাছে। এ নিয়ে সমস্যা চলছিল। আমি পেশায় প্রোমোটার। তার পরও আরও একটি জমি কিনি। কিন্তু, সেখানেও প্রসেনজিৎ সমস্যার সৃষ্টি করেন। বার বার করে টাকার চাপ দেওয়া হয়। দেওয়া হয় প্রাণে মারার হুমকিও। আমার বাড়িতে ছেলে পাঠিয়েও হুমকি দিত। বাড়িতে বিবাহযোগ্য মেয়ে, এ নিয়ে আমার স্ত্রী বেশ কয়ে কয়েক মাস ধরেই চিন্তিত ছিল। মাঝে আমাকে আমার স্ত্রীকে অপহরণ বা তুলে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হবে বলে হুমকি দেওয়া হত। এগুলোই সহ্য করতে না পেরে ওরা নিজেদের শেষ করে দিয়েছে।’’ সাধন আরও বলেন, ‘‘প্রসেনজিতের মতো বড় নেতার সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষমতা আমার নেই। থানায় জানিয়েছি ঠিকই। কিন্তু আদৌও কোনও লাভ হবে কি না জানা নেই।’’
স্ত্রী এবং কন্যার মৃত্যুতে তৃণমূল নেতার শাস্তি চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন করেছেন সাধন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘আমার এখন বেঁচে থেকেই বা কী লাভ! স্ত্রী যদি আমাকে ওদের পরিকল্পনার কথা জানাত, তা হলে আমিও ওদের সঙ্গে মরে যেতাম।’’
অন্য দিকে, তৃণমূল নেতা প্রসেনজিৎ অভিযোগ করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘সাধন সরকারকে আমি চিনি। কিন্তু ওঁর পরিবারের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। উনি আমার বিরুদ্ধে যা অভিযোগ আনছেন, তার একটিও প্রমাণ করতে পারবেন না। কোনও প্রমাণ নেই ওঁর কাছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমার অনুগামীরা কখনও ওঁর বাড়িতে যায়নি। আসলে সাধন সরকার নিজেই সঠিক লোক নন। আমার সন্দেহ এই ঘটনার (স্ত্রী-কন্যার মৃত্যু) পিছনে উনিই জড়িত।’’ এই ঘটনা নিয়ে শিলিগুড়ি পুরনিগমের মেয়র গৌতম দেবের প্রতিক্রিয়া, ‘‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা। ওঁর পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা থাকবে। একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গিয়েছে বলে শুনেছি।’’ পাশাপাশি তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে মেয়র বলেন, ‘‘দল দলের মতো চলবে। প্রশাসন প্রশাসনের মতো চলবে। এটা মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ। দলে কোথাও কাউকে বলা হয়নি, এ সব কাজ করতে। আমরা জমি মাফিয়াদের রেয়াত করি না। আমাদের দলেও বেশ কয়েক জন গ্রেফতার হয়েছে। যতটা পেরেছি জমি মাফিয়াদের আটকেছি। বহু জমি উদ্ধার করেছি।’’
এই ঘটনার তদন্ত সম্পর্কে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি শুভেন্দ্র কুমার বলেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এখনই সুইসাইড নোট বা এ ধরনের বিষয় নিয়ে তদন্তের স্বার্থে কোন কথা বলতে চাইছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy