সভামঞ্চে: সাড়ে তিন বছর পর পাহাড়ে ফিরে প্রথম জনসভায় রোশন গিরিরা। রবিবার কার্শিয়াঙে। ছবি: স্বরূপ সরকার
প্রায় সাড়ে তিন বছর পর পাহাড়ে পা রাখলেন বিমল গুরুংপন্থী মোর্চার মহাসচিব রোশন গিরি। আর এসে প্রথম সভাতেই তোপ দাগলেন বিনয় তামাং, অনীত থাপাদের বিরুদ্ধে। তাঁদের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে পাহাড়ে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা ফেরানোর চেষ্টায় নামলেন। রবিবার কার্শিয়াঙে রোশনের সভার শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই পাল্টা জবাবে বিনয়পন্থীরাও জানিয়ে দিলেন, পাহাড়ে এখন গণতন্ত্র আছে বলেই বিমলপন্থীরা সভা করতে পারছেন। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, পাহাড়ে পরস্পর-বিরোধী দুই শক্তির টানাপড়েনে নতুন করে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হল।
শনিবারই রোশন ও যুব নেতা দীপেন মালে ফিরেছেন। ২০১৭ সালে আন্দোলনের পর পাহাড় ছাড়েন বিমল-রোশনরা। গত ২১ অক্টোবর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করে প্রকাশ্যে আসেন গুরুং। এর মাস খানেকের মধ্যেই পাহাড়ে সভা করে দীর্ঘদিন পর নিজের অস্তিত্ব নতুন করে জানান দিতে মরিয়া বিমল। এতদিন পর এ দিনের সভায় বেশ ভালই ভিড় হয়েছে, যা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে। যাঁরা সভায় এসেছিলেন, তাঁদের অনেকেও তিন বছর পর প্রকাশ্যে নামলেন। ভিতরে ভিতরে অনেকেই গুরুংপন্থী হলেও সামনে এতদিন চুপ ছিলেন। রোশন বলেন, ‘এটা ছবির ট্রেলার। গুরুং পাহাডে এলে জনসমুদ্র হবে।’’
এ দিন বিজেপি বিরুদ্ধে স্বাভাবিক ভাবেই তোপ দাগেন রোশন। এরপর অবশ্য ছাড়লেন না বিনয় তামাং, অনীত থাপাদেররও। তাঁদের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির অভিযোগ সরব হলেন রোশন। জিটিএ-র অডিট থেকে তদন্তের দাবিও তুললেন। আলাদা রাজ্যের দাবি এড়িয়ে তৃণমূলকে জেতানোর ঘোষণা করে গুরুংপন্থীরা জানালেন, রাজ্য সরকার নতুন রাজ্য দেবে না। তাই এখানে সমস্যা না বাড়িয়ে ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটে যে দল সেই সময় রাজ্যের দাবির পাশে থাকবে, মোর্চা তার পাশেই থাকবে।
রোশন বললেন, ‘‘গত ১১ বছরে পাহাড়ের মানুষের জন্য বিজেপি আশ্বাস দেওয়া ছাড়া কিছু করেনি। পার্বত্য পরিষদ, জিটিএ, ভাষার স্বীকৃতি সব কংগ্রেস সরকার দিয়েছে। বিজেপি ধোঁকা দিয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আবার জেতানো।’’ তিনি আরও জানান, রাজ্য নিয়ে তৃণমূল নেত্রী স্পষ্ট কথা বলেন। উনি যা বলেন তা-ই দেন। আলাদা রাজ্য নিয়ে উনি কিছু বলতে পারবেন না। তাও তাঁরা আপাতত ওঁর সঙ্গে সমঝোতা করেই রাজনীতি করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। রোশনরা এ দিন আরও বলেন, জিটিএ-তে এতদিনে ১৭০০ কোটি টাকা এসেছে। যার হিসেব ঠিক নেই। এর তদন্ত ও অডিট প্রয়োজন। আলাদা রাজ্যের দাবি বিক্রি করে ওঁরা পাহাড়ের মানুষকে বোকা বানাচ্ছেন।
পাহাড়ের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, অনীত থাপার খাসতালুক কার্শিয়াঙে বিমলপন্থীদের এই সভার মধ্যে দিয়েই দু’পক্ষের সংঘাতের পরিবেশ তৈরি হয়ে গেল পাহাড়ে। এই বাগ্যুদ্ধের বদলে আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হয়ে না দাঁড়ায় তা দেখাই রাজ্য সরকার প্রথম কাজ।
এ দিন রোশনদের বৈঠকের পরে সন্ধ্যায় বিনয়পন্থীরা দার্জিলিঙে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এই সপ্তাহেই কার্শিয়াঙে জনসভা করতে পারেন বিনয়-অনীতরা। সভা শেষ হওয়ার কয়েকঘণ্টার মধ্যে পাল্টা জবাব দেন বিনয়পন্থীরা। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্র কেশবরাজ পোখরেল বলেন, ‘‘বিনয়-অনীতের কল্যাণে এটা নতুন পাহাড়, গণতন্ত্রের পাহাড়। তাই অনায়াসে ওরা সভা করল। তিন বছর আগে বিরোধীরা তা করতে পারত কি? আর অডিট, জিটিএ-র ৬০০ কোটি রাজ্য হিসাব চাইতেই তো গুরুং রেগে গিয়ে আন্দোলনে নেমে পড়েন। পাহাড়বাসীর সব নিশ্চয়ই মনে আছে।’’
বিনয়-অনীতকে নিয়ে রোশনের নানা মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কেশব বলেন, ‘‘পাহাড় অশান্ত করে, মানুষ মেরে এখন বিজেপির বিরুদ্ধে মুখেই কথা। বিনয়-অনীতকে না দেখে দম থাকলে বিজেপির সাংসদ, বিধায়ককে কেন ঘেরাও করছেন না?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy