শোক: ছেলেকে থেঁতলে মেরেছে হাতি। বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন অর্জুনের মা সুমিত্রা দাস। জগৎ যেন শূন্য হয়ে গিয়েছে তাঁর। ছবি: সন্দীপ পাল
ছেলের প্রথম মাধ্যমিক পরীক্ষা। তবু ফালাকাটায় কাজে যেতেই হয়েছিল অমল দাসকে। বৃহস্পতিবার সকালে এক আত্মীয়ের সঙ্গে ছেলে বাইকে রওনা হয়েছে, সে খবরও পেয়েছিলেন। হঠাৎই ফোনে খবর আসে বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গলপথ দিয়ে বেলাকোবার কেবলপাড়া হাইস্কুলে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার পথে হাতির হানায় পড়শি অর্জুন দাসের মৃত্যু হয়েছে। অর্জুনকে চেনেন অমল দাস। তাঁরই ছেলের বন্ধু। খবর পেয়ে শোকে যেন ভেঙে পড়েছেন তিনি।পরক্ষণেই মনে পড়ে কিছু আগে তো বাইকে চেপে তাঁর ছেলেও ওই একই পথ দিয়ে একই কেবলপাড়া হাইস্কুলে গিয়েছে। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায় তাঁর। দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।দেরি করেননি তিনি আর, ফিরে আসেন বাড়িতে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে অর্জুনের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “আতঙ্কে আছি, মাঝেমধ্যে গা গুলোচ্ছে। আমার ছেলেও তো একই পথ দিয়ে পরীক্ষা দিতে গেল।” জলপাইগুড়ির মহারাজঘাট এলাকার একাধিক পরীক্ষার্থীর মাধ্যমিক কেন্দ্র বেলাকোবার কেবলপাড়া হাইস্কুল। জঙ্গলপথ এড়িয়ে গেলে অন্তত ১২ কিলোমিটার বেশি ঘুরতে হয়, সে কারণে কয়েক দশক ধরেবাসিন্দারা এই জঙ্গলপথেই যাতায়াত করেন। এমন ঘটনা আগে ঘটেনি বলে দাবি বাসিন্দাদের। তবে এ দিনের ঘটনায় আতঙ্ক বেড়েছে। এ বার পরীক্ষার্থীরা কী ভাবে যাবে, চিন্তা বাড়ছে। তা ছাড়াও অন্যান্য দিন স্কুলে যাওয়ার ক্ষেত্রেও পড়ুয়ারা এই পথ ব্যবহার করে। এলাকারবাসিন্দা গোবিন্দ দাস বলেন, “এ দিকে কোনও বাস নেই। স্কুলে যাওয়ার এখন কী হবে জানি না। আমরা তো ছেলেমেয়েদের আর জঙ্গলপথেপাঠাব না।”
মাধ্যমিকের বাকি দিনগুলিতেও পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের উপায় কী হবে সে কথা ভাবাচ্ছে জঙ্গল-লাগোয়া মহারাজঘাটকে। ঘুরপথে যেতে হলে তো ভোরে রওনা দিতে হবে, আশঙ্কা বাসিন্দাদের। প্রশাসন কি বিকল্প কোনও পদক্ষেপ করবে, জিজ্ঞাসা এলাকাবাসীর।
জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “এই এলাকা থেকেও পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। সেগুলি ব্যবহার করতে পারেন এলাকাবাসীরা।” এ দিনই এই দুর্ঘটনার পর রাজ্য সরকারের তরফে বনাঞ্চল এলাকায় পরীক্ষার্থীদের যাতায়াত সুনিশ্চিত করতে বিশেষ নির্দেশ জারি করা হয়েছে। তবে এই মহারাজঘাট এলাকায় তা কতটা প্রযোজ্য হবে, তা নিয়ে সন্দিহান এখানকার বাসিন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy