গবেষক: সুভাষচন্দ্র রায়।নিজস্ব চিত্র
কার্তিক শেষ। আজ থেকে শুরু অগ্রহায়ণ। মাঠে মাঠে শুরু হয়েছে ফসল কাটার ব্যস্ততা। গ্রামে গ্রামে শুরু হয়ে গিয়েছে নবান্নের প্রস্তুতি। নতুন ফসল গোলায় তোলার আগেই উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত তুলাইপাঞ্জি চাল নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছেন ধান গবেষক তথা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বটানি বিভাগের প্রধান সুভাষচন্দ্র রায়। প্রজননের মাধ্যমে তুলাইয়ের সঙ্গে আইআর-৬৪, গোবিন্দভোগ, বাসমতি, রঞ্জিত প্রভৃতি ধানের সংকরায়ণ ঘটিয়েছেন সুভাষ। তাঁর দাবি প্রতিটি ক্ষেত্রেই একাধিকবার সফল উৎপাদন হয়েছে। ইতিমধ্যেই তুলাই ও রঞ্জিতের সংকরায়ণের কাজ নথিভুক্ত করেছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (আইসিএআর)। সুভাষ জানিয়েছেন, তাঁর কাজ সরকারি স্বীকৃতি পেলে শুধু খারিফ ফসল হিসাবেই নয়, তুলাই চাষ হবে বোরো মরসুমেও। তাঁর দাবি, তুলাই থেকে তৈরি হবে বিরিয়ানি, দাম আসবে মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে। বিভিন্ন প্রজাতির ধানের গুণগত মান, উৎপাদন বৃদ্ধি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই গবেষণা করছেন সুভাষ।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কেবলমাত্র উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ, হেমতাবাদ ও কালিয়াগঞ্জে চাষ হয় সুগন্ধি তুলাইপাঞ্জি ধান। শ্রাবণের শেষে বোনা ওই ধান কাটা হয় অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহেই। অর্থাৎ খারিফ মরসুম বা আমন মরসুমের ফসল হিসাবেই চাষ হয় ওই ধান। নতুন কী করেছেন সুভাষ? বেশি ফলনশীল ও বোরো মরসুমের ধান আইআর-৬৪ এর সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে তুলাইয়ের সংকরায়ণ ঘটিয়েছেন। ফলে বোরো মরসুমেও চাষ হতে পারে তুলাইয়ের। সেক্ষেত্রে দুই মরসুমেই তুলাইয়ের ফলন হবে বলে জানাচ্ছেন সুভাষ।
তুলাইয়ের সঙ্গে উচ্চ ফলনশীল ধান রঞ্জিতেরও সংকরায়ণও ঘটিয়েছেন ওই শিক্ষক। তিনি জানিয়েছেন, বিঘা প্রতি তুলাইপাঞ্জি উৎপাদন হয় গড়ে ৭ মণ বা ২৮০ কেজি। আর রঞ্জিত উৎপন্ন হয় গড়ে ১৬ মণ বা ৬৪০ কেজি। এই সংকরায়ণের ফলে তুলাইয়ের উৎপাদন বাড়বে বলে দাবি। তুলাইয়ের সঙ্গে বাদশা ভোগ এবং আইআর-৬৪ তিনটি ধানের সংকরায়ণ করেছেন সুভাষ। এছাড়াও তুলাইয়ের সঙ্গে বাসমতিরও সংকরায়ণ করেছেন। সুভাষ জানিয়েছেন, বাদশাভোগের প্রতিটি শিসে গড়ে ৩০০টি ধান থাকে। সেখানে তুলাই ও আইআর-৬৪-র শিসে ধানের সংখ্যা গড়ে ৯০ ও ১৩৫টি। সংকরায়ণের ফলে উৎপাদন, গুণগতমান ও সুগন্ধ বাড়বে বলেই দাবি সুভাষের। তিনি বলেন, ‘‘লম্বা না হওয়ায় তুলাইপাঞ্জি বিরিয়ানি তৈরিতে ব্যবহার করা যায় না। বাসমতির সঙ্গে সংকরায়ণ করে তুলাই চালকে লম্বা করা সম্ভব হয়েছে।’’
কী ভাবে স্বীকৃতি পেতে পারে তাঁর গবেষণা? আইসিএআর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভ্যারাইটি ট্রায়ালের জন্য তাদের কাছে ধান পাঠাতে হবে। ট্রায়ালে সফলতা পেলেই মিলবে সরকারি স্বীকৃতি। সুভাষ জানিয়েছেন, চলতি বছরই তিনি সবকটি ধান ট্রায়ালের জন্য পাঠাবেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিটি সংকরায়ণের ক্ষেত্রেই তুলাইয়ের গুণগত মান বজায় রাখা হয়েছে। একাধিক ক্ষেত্রে অন্য ধানের বেশ কিছু গুণগতমান সংযুক্ত হয়েছে। বছরে দু’বার চাষ হলে,
উৎপাদন বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই চালের দাম কমবে। স্বীকৃতি মিললে উত্তরবঙ্গের ধান চাষের ক্ষেত্রে নতুন দরজা খুলে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy