মেজাজে: হলং পিলখানায় ‘ছোটা ভীম’। নিজস্ব চিত্র
গত জুনে বয়স দু’বছর পেরিয়েছে। স্বাস্থ্যও ফিরেছে অনেকটা। মনে এসেছে চনমনে ভাব। দস্যিপনাতেও কিছু কম যায়না। কখনও শুঁড় উচিয়ে ‘বড়দের’ মতো হুঙ্কারের ভঙ্গিমা করছে, কখনও আবার হাবেভাবে অন্যদের সঙ্গে জঙ্গলে যাওয়ার ‘বায়নাক্কা’ বেশ বুঝিয়ে দিচ্ছে। খেলার ছলে কখনো ‘পাঠ’ও নিচ্ছে। সব মিলিয়ে একাই যেন জলদাপাড়া জমিয়ে রেখেছে ছোটা ‘ভীম’! ছোটদের প্রিয় কার্টুন চরিত্র নয়, জলদাপাড়ার আবাসিক ‘ছোটা’ভীম আসলে একটি হস্তিশাবক। বন কর্মীদের যত্নআত্তি আর কুনকি মা ‘হাতিদের’ ভালবাসা, স্নেহতে ছোটবেলার ‘রুগ্নতা’ কাটিয়ে উঠে দিব্যি আছে ছোট্ট হাতিটি।
জলদাপাড়ায় হলং পিলখানার আবাসিক ছোটা ‘ভীমে’র শৈশবেই মাকে হারায়। জন্মের দশদিনের মধ্যেই মায়ের কোলছুট হয়েছিল হাতিছানাটি। জঙ্গল পথ হারিয়ে একাকী দিশাহীন হয়ে চলে এসেছিল ঝাড়গ্রামে। বনকর্মীরা খাবার, পানীয়ের অভাবে ঝিমিয়ে পড়া অবস্থায় শাবকটি উদ্ধার করেন। পরে হস্তিশাবকটিকে কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয়। সেখানে নামকরণ হয় ‘ভীম’। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ঠিকানাবদল হয় তার। সেইথেকে জলদাপাড়া জঙ্গলের হলংয়ের পিলখানাই ‘ছোটা ভীমে’র আশ্রয়স্থল।
বন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, ওই পিলখানাতেই ভীমের সঙ্গে দেখা হয় প্রিয়দর্শিনী, ডায়না, জেনিদের মতো কুনকি হাতিদের। প্রত্যেকেই সন্তান স্নেহে আগলে রাখে ছানাটিকে। জলদাপাড়া আসার পরে মাঝেমধ্যে কুনকি মায়ের স্তন্যপানও করেছে শাবকটি। জলদাপাড়া যে বন্যপ্রাণ বিভাগের আওতাধীন, সেই কোচবিহার বন্যপ্রাণ বিভাগের ডিএফও কুমার বিমল বলেন, “আরও ছোট বয়সে ভীমের খাবার হজম ঠিকভাবে হত না। চিকিৎসকেরা নিয়মিত দেখভাল করেন। কর্মীরাও ভীষণ যত্ন নেয়। বিশেষভাবে প্রিয়দর্শিনী, ডায়না নামের দুটি হাতি দারুণভাবে ওকে আগলে রাখে। সবার চেষ্টাতেই হস্তিশাবকটি বেশ ভাল আছে।”
বন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, ‘ছোটা’ ভীমের দেখভালের জন্য অমর ওঁরাও নামে একজন মাহুতকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রুটিন করে শাবকটিকে খিচুড়ি, কচি ঘাসপাতা, গুঁড়ো দুধ গুলিয়ে খাওয়ানো হয়। জলদাপাড়ার এক বনকর্তা জানান, একরকম খাবার সবসময় তো ভাল লাগে না। তাই কিছুদিন হল রুচিবদলে মাঝেমধ্যে কলা দেওয়া হচ্ছে। নিমেষে সেই কলা শুঁড় উঁচিয়ে সাবাড় করে দিচ্ছে সে। প্রিয়দর্শিনী, ডায়নারা অন্য জায়গায় ‘ডিউটি’তে গেলে জেনি নামের অন্য একটি কুনকি হাতিও বেশ দেখভাল করে শাবকটির। যত্ন দেখে মনে হওয়ার উপায় নেই ভীম তার ‘পালক সন্তান’।
আর দস্যিপনা? প্রশ্ন শুনেই হেসে কুটোপুটি এক বনকর্মীর কথায়, একটা দুরন্ত বাচ্চা যেমন হয় ঠিক তেমনই। নতুন পরিবেশে আসার পর অনেকদিন খানিকটা ‘মনমরা’ থাকত। মাহুতের ইশারায় কখনো খেলার ছলে আদব কায়দা শেখার ‘পাঠ’ও নিচ্ছে। জঙ্গলে পাহারা দিতেও সে মাঝেমধ্যে বড়দের পিছু নিতে চায়। মাহুতরা বলছেন, ‘‘ভবিষ্যতে ‘কুনকি’ হয়ে চাকরিতে যোগ দিতেই যেন চাইছে সে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy