বাঁ দিকে সুপ্রিয়া দত্ত, ডান দিকে প্রবাল সরকার। — ফাইল চিত্র।
নাম প্রবাল সরকার ওরফে ছোট। গায়ের রং শ্যামলার দিকে। উচ্চতা সাড়ে ৫ ফুটের সামান্য বেশি। বয়স চল্লিশের আশপাশে। পরনে লালকালো ডোরাকাটা টিশার্ট এবং কালো রঙের ফেডেড জিন্স। মুখে দিন কয়েকের না কামানো খোঁচা খোঁচা কাঁচাপাকা দাড়ি। দেখতে খুবই সাধারণ। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে বধূহত্যার ঘটনায় কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্ধার বাসিন্দা সেই প্রবালকেই বুধবার বিকেলে ফালাকাটা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, নিহত সুপ্রিয়া দত্তের মতো প্রবালও বিবাহিত। নিজের ‘সুখী পরিবার’ সম্পর্কিত নানা ছবি এবং তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি একাধিক সমাজ সচেতনতার বার্তাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রবালের ফেসবুক প্রোফাইলে। তা দেখে ঘুণাক্ষরেও টের পাওয়া যাবে না এমন এক জন ‘সমাজ সচেতন’ এবং ‘সুখী পরিবার’-এর প্রধান খুনের দায়ে অভিযুক্ত। যা অবাক করেছে তদন্তকারীদের। ধৃতকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করে পুলিশ। প্রবালকে ১০ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
গত ১১ নভেম্বর বিকেলে রায়গঞ্জের রবীন্দ্রপল্লি এলাকায় বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় সুপ্রিয়া দত্তের গলার নলি কাটা দেহ। খুনের সময় একচল্লিশ বছরের ওই মহিলা বাড়িতে একাই ছিলেন বলে জানা যায় পরিবার সূত্রে। সেই খুনের তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথম থেকেই সন্দেহ করছিল, এর পিছনে হয়তো রয়েছে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক। প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দাদের ধারণা হয়, ‘বিশেষ’ বন্ধুর হাতেই খুন হয়েছেন সুপ্রিয়া। প্রবাল গ্রেফতারের পর আবার এক বার সেই সন্দেহের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন ডিএসপি (সদর) রিপন বল। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানিয়েছেন, হয়তো বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তিনি আরও জানান, খুনের উদ্দেশ্য নিয়ে এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। সেই কারণে প্রবালকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হবে বলেও জানিয়েছেন ওই পুলিশ আধিকারিক।
তদন্তকারীদের মতে, প্রবালের সঙ্গে সুপ্রিয়ার পরিচয় গভীর হয়েছিল লকডাউন চলাকালীন, ফেসবুকের মাধ্যমে। পুলিশের মতে, লকডাউন ধাপে ধাপে উঠতে শুরু করলে সুপ্রিয়া এবং প্রবালের সামনাসামনি দেখাও হয় বেশ কয়েক বার। অথচ ঠিক সেই সময়েই প্রবাল নিজের প্রোফাইলে ‘সুখী পরিবার’-এর ছবি তুলে ধরেছিল কয়েক বার। প্রবালের এক পুত্রসন্তানও রয়েছে। ঘটা করে ছেলের জন্মদিন পালন করেছিলেন প্রবাল। ফেসবুকে স্ত্রী এবং পুত্রের সঙ্গে সেই ‘সুন্দর মুহূর্ত’-এর ছবি শেয়ার করেছিলেন তিনি। এমনকি, ঠিক সেই সময়েও ফেসবুকে নারী সচেতনতার বার্তা দিতে দেখা যায় খুনের অভিযোগে অভিযুক্তকে। পাশাপাশি, কখনও আবার বিবেকানন্দের ছবি পোস্ট করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষকে উৎসাহব্যাঞ্জক বার্তাও দিতে দেখা গিয়েছে প্রবালকে।
বুধবার বিকেল ৩টে-সাড়ে ৩টের মধ্যে ফালাকাটার একটি হোটেল থেকে গ্রেফতার করা হয় প্রবালকে। পুলিশ যাতে তাকে না চিনতে পারে সেই জন্য মাথা প্রায় কামিয়ে নিয়েছিল সে। কিন্তু তাতে শেষরক্ষা হয়নি। ফালাকাটার ওই হোটেল থেকে মিলেছে প্রবালের বাইক। পাওয়া গিয়েছে সুপ্রিয়ার বাড়ি থেকে উধাও হওয়া দু’টি মোবাইলও। পুলিশের মত, রায়গঞ্জের রবীন্দ্রপল্লিতে সিসি ক্যামেরায় যার ছবি ধরা পড়েছিল সে আসলে এই প্রবালই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy