বিপজ্জনক: ডিজে বাজিয়ে পতিরাম ধামের পথে। ছবি: অমিত মোহান্ত
মাত্রাছাড়া শব্দ করে বলে ডিজে-বক্স বাজানো এমনিতেই নিষিদ্ধ সারা রাজ্যে। সেখানে ডিজে-বক্স বাজানো হবে পিক-আপভ্যানে তোলা হয়েছিল জেনারেটর। তবে সে জেনারেটর চালাতে হলে যে সুরক্ষা-বিধি মানতে হয়, তা মানা হয়নি। জলপাইগুড়ির জল্পেশের মন্দিরে যাবেন বলে সে গাড়িতে ঠাসাঠাসি করে চড়েছিলেন কোচবিহারের শীতলখুচির জনা ৩৬। বৃষ্টির মধ্যে তারস্বরে বাজছিল ডিজে। পুলিশের অনুমান, সে সময় ‘শর্ট সার্কিট’ হয়। লোহার কাঠামোর গাড়িতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বিদ্যুৎ। তড়িদাহত হয়ে ঝরে যায় ১০টি প্রাণ। এই দুর্ঘটনার পরে, এ ভাবে চলন্ত গাড়িতে ডিজে এবং জেনারেটর তোলার মতো কাজ কেন আগে থেকে আটকানো হয়নি পুলিশের তরফে, সে প্রশ্ন উঠেছে।
কোচবিহারের পুলিশ সুপার সুমিত কুমার বলেন, “এটা দীর্ঘ সময় ধরে হয়ে আসছে। এ বার আমরা প্রত্যেককে সতর্ক ও সচেতন করব।” জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্তের বক্তব্য, “ডিজে বাজিয়ে জল্পেশে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সব থানাকে তা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
শীতলখুচির গোলেনাওহাটি থেকে রবিবার রাতে জল্পেশ মন্দিরে যাওয়ার পথে ওই দুর্ঘটনার পরে, কোচবিহারের পুলিশ সুপার বলেছিলেন, “বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে সব স্পষ্ট হবে।” চ্যাংরাবান্ধায় পেট্রোল পাম্পের কাছে দুর্ঘটনা ঘটার পরে, গাড়ি থামে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে গাড়িতে থাকা ১০ পুণ্যার্থীকে মৃত ঘোষণা করা হয়। বাকিদের বেশির ভাগকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে, ছেড়ে দেওয়া হয়। পাঁচ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
কী ভাবে হয়ে থাকতে পারে ‘শর্ট সার্কিট’? এক সরকারি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার জানান, একটি ডিজেল চালিত জেনারেটর গাড়িতে তোলা ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারণত এমন জেনারেটর চালাতে হলে, ‘আর্থিং’ করার প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ, একটি তারের সঙ্গে বাধ্যতামূলক ভাবে মাটির সংযোগ থাকবে। গাড়িতে তা সম্ভব নয়। সে পাটও নেই। তা ছাড়া, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাইরে একটি কাঠ বা বিদ্যুতের সুপরিবাহী নয়, এমন কোনও জিনিসের উপরে জেনারেটর বসানো প্রয়োজন। বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষার জন্য জেনারেটরের উপরে ত্রিপল টাঙাতে হবে। তা হলে ‘শর্ট সার্কিট’ হওয়ার সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া না গেলেও, কম থাকবে।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, ওই ভ্যানে নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনও কিছু ঠিকঠাক মানা হয়নি। প্রথমত, জেনারেটর গাড়ির লোহার মেঝের উপরেই বসানো ছিল। দুই, পলিথিন দিয়ে জেনারেটরের কিছুটা ঢাকা থাকলেও বৃষ্টিতে তা চুপসে যায়। আরও একটি বড় সতর্কতার জায়গা ছিল জেনারেটর ও ডিজে বক্স থেকে বার হওয়া তারের ক্ষেত্রে। সেখানে দু’টি তারের সংযোগ ‘ব্ল্যাকটেপ’ বা ওই ধরনের কিছু দিয়ে ঠিক মতো বেঁধে দেওয়া হয়নি বলেই মনে করা হচ্ছে।
ওই ভ্যানে ছিলেন ‘মাইক ম্যান’ ফৈজুল মিয়াঁ। তিনি বলেন, “দশ বছর ধরে এমন ভাবে ডিজে বাজিয়ে পুণ্যার্থীদের জল্পেশে নিয়ে যাই। জেনারেটর পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হলেও বৃষ্টির জল ঢুকছিল। চ্যাংরাবান্ধায় গিয়ে বুঝতে পারি, শর্ট সার্কিট হয়েছে। ততক্ষণে অনেকে লুটিয়ে পড়েছিল।”
ঘটনা হল, যাঁরা ডিজে বক্সের কাঠের উপরে বা ভ্যানের সামনে চালকের পাশে বসেছিলেন, তাঁরা বেঁচে গিয়েছেন। যাঁরা জেনারেটর ও বক্সের মাঝখানে ছিলেন, তাঁরা আর নেই।
তথ্য সহায়তা: অর্জুন ভট্টাচার্য ও উৎপল অধিকারী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy