কনকনে ঠান্ডাতেও সরস্বতী পুজোর বাজারে কোনও উপকরণ ছুঁতে গেলেই হাত পুড়ে যাওয়ার উপক্রম!
মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি, কোচবিহার-আলিপুরদুয়ার, মালদহ-উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের ছবিটা এমনই। কারণ, পুজোর সব সামগ্রীর দামই চড়া। শিলিগুড়িতে ৫টা পলাশ ফুল বিকিয়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। মালদহে সেটা কিনতে লেগেছে ১০ টাকা। খাগের কলম, দোয়াত, কুলের দামও যে যেমন পেরেছেন নিচ্ছেন। ছোট্ট একটা মাটির সরস্বতীর দামও মওকা বুঝে ১৫০ টাকা চাওয়া হয়েছে। আপেল-শাকালুর দাম শুনলে চমকে উঠতে হয়। আর কমলালেবু? সবচেয়ে ছোটটাও এক একটা ১০ টাকা!
তাই শিলিগুড়ির বিধান মার্কেটে বাজারে দাঁড়িয়ে সুচরিতা বন্দ্যোপাধ্যায় গজগজ করছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও একটা পুজো এলেই রাতারাতি জিনিসপত্রের দাম চড়ে যায়! একটা পলাশ ফুল কখনও ৫ টাকা হতে পারে?’’
সত্যিই পলাশ ফুলের এত দাম কেন! লাটাগুড়ি, মাদারিহাট, কুমারগ্রামের রাস্তার ধারে রাশি রাশি পলাশ দেখা যায়। সেখান থেকেই বস্তায় ভরে পলাশ নিয়ে শিলিগুড়ির পাইকারি ফুল বাজারে আসেন নিতাই রায়, সুদেব বর্মনরা। তাঁরা জানান, ফুল আনতেও তো খরচ আছে! সুদেব বলেন, ‘‘আমরা তো এক বস্তা ফুল ২০০ টাকায় বিক্রি করি। খুচরো ব্যবসায়ীরা তা ৫ গুণ দামে বেচেন।’’
এর উপরে রয়েছে নোট বাতিলের ধাক্কা। এখন গ্রামের এটিএম থেকে পর্যাপ্ত টাকা মেলে না। ফলে এ বারে কোপ পড়েছে গৃহস্থ বাড়ির সরস্বতী পুজোয়। ফলে বংশীহারি, কুমারগঞ্জ, তপন থেকে হিলিতে ব্যাপারীদের বাণিজ্যে এ বার টান।
তবে নানা সমস্যা সত্ত্বেও জলপাইগুড়ির অনুভব হোমে সরস্বতী বন্দনা ঘিরে কিন্তু খুশির হাওয়া। এখানে সরস্বতী আধুনিকা। তাঁর এক হাতে বীণা, অন্য হাতে কম্পিউটারের মাউস। হোমের আবাসিক সান্ত্বনা সরকার, লক্ষ্মী মণ্ডলদের কথায়, ‘‘এ বছর প্রতিমায় একটু আধুনিকতার ছোঁয়া লাগাতে চেয়েছিলাম৷ তাই...৷’’
আক্রার বাজারে ডুয়ার্সেও জমজমাট পুজোর আয়োজন। সরস্বতী পুজোয় শিল্পের সাধনাতে নজর কাড়তে তৈরি মালবাজারের আদর্শ বিদ্যাভবন। বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের সময়কার বিষ্ণুর দশাবতার তাসে এ বার তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। গত বছর যামিনী রায়ের শিল্পকলার থিমে মণ্ডপ গড়ে কলকাতার সেরা স্কুলগুলোকে টপকে আন্তর্জাতিক একটি সংস্থার বিচারে সেরার সম্মান পায় এই স্কুল।
মালদহ ও দুই দিনাজপুরে গত বছর পর্যন্ত চাহিদা ছিল রেডিমেড মণ্ডপের। এ বার কিন্তু তেমন নেই। ইংরেজবাজারের ব্যবসায়ী মঙ্গলু সাহা, ফুল কুমার শর্মারা বলেন, সবই নোট বাতিলের ফল। না হলে এখনও কারখানায় এত মণ্ডপ পড়ে থাকে! আদ্দেক দামেও বিকোচ্ছে না! উল্টো দিকে, ইংরেজবাজারের কলেজ পড়ুয়া সৌমেন হালদার, বাবাই দাসেরা বলেন, মাত্র হাজার টাকা চাঁদা তুলতেই ঘাম ছুটে যাচ্ছে। রেডিমেড মণ্ডপ কিনব কী করে!
এই বাজারে ফিরেছে শীত। তাতে গরম গরম খিচুড়ি খুব জমবে বলে মঙ্গলবার থেকেই আয়োজনের ধুম পড়েছে। মালদহের নেতাজি মার্কেটে সরস্বতী পুজোর বাজার করতে আসা সুজাতা বিশ্বাস বলেন, ‘‘সোমবার থেকে ফের শীত পড়েছে জাঁকিয়ে। তাই খিচুড়ি তো করতেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy