ভস্মীভূত: আগুন নেভানোর পরে একটি বাসের অবস্থা। নিজস্ব চিত্র
দাউ দাউ করে জ্বলছে তিনটে বাস। ঘন কালো ধোঁয়ায় সকালেই প্রায় অন্ধকার আকাশ। জাতীয় সড়কে পরপর দাঁড়ানো পাঁচটি বাস। ভাঙচুরের কাচ ছড়িয়ে আছে রাস্তা জুড়ে। তখনও দুর্ঘটনা এবং তার অভিঘাতে আছড়ে পড়া রোষের ধাক্কা কাটেনি স্থানীয় লোকজনের। এলাকার এক প্রবীণ বাসিন্দা বলছিলেন, ‘‘এ সব তো টিভিতে দেখেছি। চোখের সামনে এমন হবে, ভাবতেও পারিনি!’’
জেলার পুলিশ-প্রশাসন থেকে রাজনৈতিক মহল, সর্বত্র এই কথাই ঘোরাফেরা করেছে দিনভর: জলপাইগুড়িতে এমন হিংসার ঘটনা ব্যতিক্রমী। যে ভাবে ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে, তাতে সকলেই দুঃখিত। সন্ধ্যা অবধি দুর্ঘটনার অভিঘাত কাটাতে পারেননি অনেকেই। একই সঙ্গে তাঁরা বলছেন, রাগের এমন বহিঃপ্রকাশও বিরল। অনেকেই সম্প্রতি জলপাইগুড়ি জেলা জুড়ে ঘটে যাওয়া গণপিটুনির কথা উল্লেখ করে বলছেন, কতকটা যেন সেই স্মৃতি উস্কে দিচ্ছে এ দিনের ঘটনা। স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর খবরে এলাকা জুড়ে যে ক্ষোভ ছড়িয়েছিল, সেটা পুলিশ মেনে নিয়েছে। দুর্ঘটনার প্রায় আধ ঘণ্টা পরে ভাঙচুর-আগুন শুরু হয়েছে। তাতেই পুলিশের একাংশের দাবি, পরিকল্পনা করেই হিংসা ছড়ানো হতে পারে। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অভিষেক মোদী বলেন, “এ দিনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চার জনকে ধরা হয়েছে। হিংসার ঘটনার পেছনে কোনও উস্কানি রয়েছে কিনা তা দেখা হচ্ছে।” স্থানীয়দের কথায়, ওই চার জনই এলাকায় বিজেপি সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
জেলা তৃণমূল সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণীর মন্তব্য, “গেরুয়া বাহিনী এর আগে ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করেছে। এখন দেখা যাচ্ছে, যে কোনও হিংসার পিছনেই বিজেপির লোক রয়েছে।” দুর্ঘটনা যেখানে হয়েছে, জলপাইগুড়ি জেলা বিজেপি সভাপতি বাপি গোস্বামীর বাড়ি ওই এলাকাতেই। তাঁর অভিযোগ, “এর আগে স্টেশনে স্টেশনে ভাঙচুর হল, তখন পুলিশ কাউকে ধরেনি। ফুলের মতো একটি মেয়েকে সরকারি বাসের চাকা পিষে দিল, তার প্রতিবাদে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ করেছে। আগুন লাগানো আটকাতে পারল না পুলিশ। অথচ নিরীহ বিজেপি কর্মীদের গ্রেফতার করল।” বাপিবাবুর এই দাবিকে নস্যাৎ করে দিয়ে মালদহ পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, হরিশ্চন্দ্রপুর ও ভালুকার ঘটনায় মোট ৩১ জনকে ধরা হয়েছিল। তাই তাঁর দাবির কোনও ভিত্তি নেই— বক্তব্য তাদের।
প্রশাসনের একাংশের দাবি, ওই এলাকায় সম্প্রতি জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। দখল সরাতে মোহিতনগর থেকে রানিনগরে উচ্ছেদ অভিযানও হয়েছে। তার কারণে এলাকায়ক্ষোভ তৈরিই ছিল বলে দাবি।সেই ক্ষোভই জনরোষ হয়ে আছড়ে পড়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy