Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Traffic Jam In Darjeeling

যানজটে ভুগছে দার্জিলিং, আর্জি সমস্যা সমাধানের

পাহাড়ি রাস্তায় দীর্ঘ ক্ষণ সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছে গাড়ি। গরমের পর্যটন মরসুম শুরু হতেই যানজটে জেরবার দার্জিলিং। গাড়ি নিয়ে শহরে ঢোকা এবং বেরোনোয় ভোগান্তি হচ্ছে।

—প্রতীকী চিত্র।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২৪ ০৫:৩৪
Share: Save:

দূরত্ব ১১.২ কিলোমিটার। পুলিশের হিসাবে সব ঠিক থাকলে, ঘুম থেকে দার্জিলিং পৌঁছতে লাগার কথা আধ ঘণ্টার কম। কিন্তু বাস্তবে লাগছে তার দ্বিগুণ, তিন গুণ। পাহাড়ি রাস্তায় দীর্ঘ ক্ষণ সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছে গাড়ি। গরমের পর্যটন মরসুম শুরু হতেই যানজটে জেরবার দার্জিলিং। গাড়ি নিয়ে শহরে ঢোকা এবং বেরোনোয় ভোগান্তি হচ্ছে। সূত্রের দাবি, গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং পার্কিং-সমস্যার জেরে এই পরিস্থিতি। শুধু পর্যটক নন, স্থানীয়েরাও ভুক্তভোগী। পাহাড়ের পরিবহণ ব্যবসায়ীদের ‘জয়েন্ট কো-অর্ডিনেশন কমিটি’ সমস্যা সমাধানে দার্জিলিং জেলা পুলিশ এবং ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ)-কে এগিয়ে আসতে বার বার অনুরোধ করেছে।

জিটিএ প্রধান অনীত থাপা বলেছেন, ‘‘ভোট-প্রক্রিয়া চলছে। পরে, বিষয়টি দেখার ব্যবস্থা করতে হবে।’’ তাঁর দাবি, দার্জিলিং, কার্শিয়াংয়ের পাহাড়ে রাস্তা সংকীর্ণ। সে তুলনায় পর্যটন মরসুমে অনেক বেশি গাড়ি যাতায়াত করছে। পার্কিং ব্যবস্থা থেকে ‘ওয়ান ওয়ে’, ‘ডাবল লেন’ নতুন করে ঠিক করতে হবে। বিকল্প রাস্তার কথাও মাথায় রাখা হয়েছে।

যানজটের সমস্যা দেখা দিয়েছিল গত শীতেই (ডিসেম্বর-জানুয়ারি)। সে সময় পর্যটন সংস্থা, বাণিজ্যিক গাড়ির মালিক-চালকেরা পুলিশকে যানজট সমস্যা সমাধানের লিখিত আবেদন দিলেও কাজ তেমন হয়নি বলে অভিযোগ। দার্জিলিং জেলা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা স্তরে প্রশ্ন ওঠাও শুরু করেছে। কারণ, গত জানুয়ারি থেকেই যান চলাচল সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ দার্জিলিং পুলিশের ডিএসপি (ট্র্যাফিক) পদ ফাঁকা হয়। তার পরে, আলাদা ভাবে সে পদে কোনও অফিসার আসেননি। দার্জিলিঙের ডিএসপি (সদর)-কে ট্র্যাফিকের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া রয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার প্রবীণ প্রকাশের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

পুলিশের হিসাব বলছে, ঘুম থেকে দার্জিলিং শহর, এই ১১.২ কিমি রাস্তা যেতে সাড়ে ২৬ মিনিটের কাছাকাছি লাগার কথা। বাস্তবে তা ৫০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। বাতাসিয়া লুপ থেকে মরসুমে চার-পাঁচ হাজার গাড়ি শৈলশহরে ঢোকা শুরু করে। অথচ, শহরের সমস্ত ‘পার্কিং লট’ মিলিয়ে বড় জোর এক থেকে দেড় হাজার গাড়ি রাখা যায়। এই পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ হোটেল, লজের সামনে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়েছে। নিয়মিত বাণিজ্যিক গাড়ির চালকেরা ‘সিন্ডিকেট’ করে নিজেদের মতো গাড়ি রাখেন। পাহাড়ের অনেকের ব্যক্তিগত গাড়িও রয়েছে। অধিকাংশ গাড়িই বাড়ির সামনে রাস্তায় রাখা থাকে। সরকারি গাড়ি সব দফতরের সামনে এবং বাইরে দাঁড়ায়। তা ছাড়া, রাজ্য এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকে নিজেদের গাড়ি নিয়ে দার্জিলিঙে পৌঁছন। বর্তমানে, তেমন গাড়ির সংখ্যাও তুলনায় বেড়েছে।

মহারাষ্ট্র থেকে সপরিবার দার্জিলিঙে ঘুরতে এসেছিলে সুনীল ভোঁসলে। যানজটে ফেঁসে বাতাসিয়া লুপ থেকে শৈলশহরে এক ঘন্টায় পৌঁছে বলেন, "দার্জিলিঙে ট্র্যাফিক ব্যবস্থা খুব খারাপ। পর্যটকদের হয়রান হতে হয়।" পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর থেকে আসা পর্যটক অনিন্দিতা ঠাকুর বলেন, "অনেক বার দার্জিলিং এলাম৷ পাহাড়ে পৌঁছনোর আড়াই ঘণ্টার রাস্তা শেষে, আরও এক ঘণ্টা জুড়ছে যানজটের জন্য। গাড়ির লাইন থেকেই স্পষ্ট, এত বড় জনপ্রিয় একটি শহরের ট্র্যাফিক-পরিকল্পনা ঠিকঠাক নেই।’’

কয়েক বছর আগে, পুলিশ নতুন করে দার্জিলিঙে ১৭টি ‘পার্কিং স্পট’ খুঁজে বার করেছিল। যদিও তা নিয়ে কাজ এগোয়নি বলে অভিযোগ। সূত্রের দাবি, পার্কিংয়ের জন্য বাছাই করা কিছু জায়গায় বহুতল ভবন, হোটেল হয়ে গিয়েছে। পরিবহণ ব্যবসায়ীদের জয়েন্ট কো-অর্ডিনেশন কমিটির সভাপতি পাশাং শেরপার আশঙ্কা, ‘‘পরিস্থিতি ভয়ানক হতে যাচ্ছে।’’ আর ‘হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজ়ম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্ক’-এর সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘দার্জিলিঙের পার্কিং-সমস্যা, যানজট-সমস্যা মেটার দিশা দেখা যাচ্ছে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Darjeeling traffic congesion traffic jam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE