দল বেঁধে জলপান, রবিবার বিকেলে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক সংলগ্ন পোরো নদীতে বুনো হাতির দল।– ছবি: নারায়ন দে।
আজকাল ‘ইকো-টুরিজ়ম’ বা সবুজ পর্যটন নিয়ে প্রায়ই কথা হয় বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু সেটা নিয়ে অধিকাংশ মানুষেরই সম্যক ধারণা নেই। আবার যাঁদের আছে, তাঁরা সাধারণ পর্যটক বা সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দা নন। তাঁরা একেবারেই পড়াশোনা করা শিক্ষিত মানুষ বা বিশেষজ্ঞ। এ ব্যাপারে আমার কিছু বক্তব্য রয়েছে। গত ১ ডিসেম্বর মাদারিহাটের একটি রিসর্টে ডুয়ার্সের অরণ্য ও সাহিত্যসভার আয়োজন করা হয়। সেই সভায় বন সংরক্ষণ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনার নির্যায় হল, সংরক্ষণ ছাড়া ‘ইকো-টুরিজ়ম’ সম্ভব নয়। যে এলাকায় আমরা যাব সেখানকার খাদ্যাভাসে আমাদের অভ্যস্ত হতে হবে, সেই এলাকার স্থানীয় চাল, জৈব সারে ফলানো শাকসব্জি খাওয়ার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। ‘ইকো-টুরিজ়মে’র নামে ব্যাপক এলাকার গাছকাটা চলবে না। ‘ইকো-টুরিজ়ম’ যেন সুস্থায়ী উন্নয়নের পথকে সুগম করে। সেজন্য বাহ্যিক সুবিধা কম হলেও সেটাকেই মেনে নিতে হবে। প্রকৃতির নিজস্ব ভৌত শর্তগুলিকে বজায় রাখতে হবে।
উত্তরবঙ্গের পার্বত্যভূমি থেকে শুরু করে তরাই-ডুয়ার্সের বেশ কয়েকটি এলাকাকে সংরক্ষণ করা জরুরি। পূর্ব ডুয়ার্সের দক্ষিণ খয়েরবাড়ি, ধুমচীপাড়া, লঙ্কাপাড়া, অত্যন্ত জীববৈচিত্রপূর্ণ স্থান, যেগুলিকে ভবিষ্যতে অভয়ারণ্য ঘোষণা করে সংরক্ষণ করা জরুরি। মোরাঘাট, বৈকুণ্ঠপুর, রেতি প্রভৃতিকে অভয়ারণ্যের মর্যাদা দেওয়া প্রয়োজন। গজলডোবার জলাভূমি ও রসিকবিলের জলাশয়কে গুরুত্ব না দিলে আগামী দিনে জলজ জীবের ক্ষতির সম্ভাবনা প্রবল।
সংরক্ষণ না হলে সেই এলাকার বৃক্ষচ্ছেদন, চোরাপাচার, প্রাণিহত্যা চলতেই থাকবে, যা স্থানীয় জীববৈচিত্রকে নষ্ট করবে। স্থানীয় জলবায়ুর উপর প্রভাব পড়বে। জঙ্গল অপসারণ করে কৃষিভূমি সম্প্রসারণ, পর্যটনের নামে কংক্রিটের জঙ্গলের সম্প্রসারণ বাড়বে। বন্যপ্রাণী আইন, ১৯৭২ সেকশন ২৬ অনুসারে, কোনও একটি সংরক্ষিত অরণ্য অভয়ারণ্য পরিণত হতে গেলে এলাকাটির ‘জিওমরফোলজিক’ গুরুত্ব, উদ্ভিদ ও প্রাণিবিষয়ক গুরুত্ব থাকতে হবে। অসমের জীববৈচিত্র উত্তরবঙ্গের চেয়ে বেশি হলেও, উত্তরবঙ্গে যে জৈব সম্পদ রয়েছে, তাকে অটুট রাখাও দরকার।
বিদ্যালয় স্তরে পরিবেশ বিষয়টি অবশ্যই পৃথক বিষয়রূপে পাঠদান করার বিষয়েও পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলিকে দাবি করতে হবে। জাতীয় শিশু বিজ্ঞান কংগ্রেসে পরিবেশকে প্রাধান্য দিয়ে প্রকল্প রূপায়ণের উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। কিশোর মনে যত পরিবেশ ও জীববিষয়ক সচেতনতা বাড়বে ততই সংরক্ষণের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীকে ষষ্ঠ গণবিলুপ্তির (মাস এক্সটিংশন) হাত থেকে রক্ষা করতে জীববৈচিত্রপূর্ণ স্থানগুলিকে জাতীয় উদ্যান ও অভয়ারণ্যরূপে ঘোষণা করা অত্যন্ত জরুরি।
(প্রাক্তন শিক্ষক, জলপাইগুড়ি জেলা স্কুল)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy