সেজেগুজে বিয়েবাড়ি চলে যেতেন। আমন্ত্রিতদের ভিড়ে তিনি পাত্রপক্ষের কেউ না কি পাত্রীপক্ষের সদস্য, কেউ জিজ্ঞাসা করতেন না। এই ভাবে বিনা নিমন্ত্রণে অনুষ্ঠানবাড়িতে খাওয়া-দাওয়া সারতেন। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। পেটপুজোর পর শুরু হত হাতসাফাইয়ের কাজ। নিমন্ত্রিতদের ব্যাগপত্র থেকে টাকাপয়সা, সমস্ত নিয়ে চুপি চুপি বিয়েবাড়ি ছাড়তেন যুবক। শিলিগুড়িতে একের পর এক বিয়েবাড়িতে চুরির অভিযোগের তদন্তে নেমে এমনই তথ্য পেল পুলিশ। সিসিটিভি দেখে গ্রেফতার করা হল ওই ‘ফুলবাবু’কে।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত কয়েক মাস ধরে শিলিগুড়ি শহরের বেশ কিছু অনুষ্ঠানবাড়িতে পর পর চুরির ঘটনা ঘটে। কী ভাবে চুরি হচ্ছিল, তা নিয়ে ধন্দে পড়ে যান তদন্তকারীরা। এর মধ্যে মাস খানেক আগে শিলিগুড়ির রবীন্দ্রনগরের বাসিন্দা মৌ ভট্টাচার্যের মেয়ের বিয়ে ছিল। সেবক রোডের একটি ভবনে ভোজের আয়োজন হয়। সেখানে পাত্রীর হাতে থাকা ব্যাগ থেকে টাকা, সোনাদানা-সহ নানা উপহার চুরি যায়। তৎক্ষণাৎ জানানো হয়েছিল পুলিশকে। কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজে চোরের দেখা মেলেনি। তদন্ত চলছিল। বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়ে সম্ভাব্য অভিযুক্তকে চিহ্নিত করে পুলিশ।
এর মধ্যে রবিবার রাতে শিলিগুড়ির সেবক রোডে একটি বিয়েবাড়িতে হাজির হয়েছিলেন সেই ‘অচেনা অতিথি’। স্যুট পরিহিত সেই যুবককে দেখে এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা আধিকারিকের সন্দেহ হয়। তিনি পুলিশে খবর দেন। কিছু ক্ষণের মধ্যে পানিট্যাঙ্কি ফাঁড়ির পুলিশ অনুষ্ঠানবাড়িতে পৌঁছে যান। দেখা যায়, সিসিটিভি-তে দেখা যুবক রয়েছেন এখানেও! গ্রেফতার করা হয় তাঁকে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃতের নাম মনোজ চৌধুরী। পেশায় রং মিস্ত্রি মনোজের বাড়ি শিলিগুড়ি সংলগ্ন শিবমন্দির এলাকায়। তিনি একের পর এক অনুষ্ঠানে ঢুকে চুরি করতেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি লক্ষ করা গিয়েছে। অবশেষে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন অভিযুক্ত। সোমবার ধৃতকে শিলিগুড়ি আদালতে হাজির করানো হয়। শিলিগুড়ির ডিসিপি রাকেশ সিংহ বলেন, ‘‘অনুষ্ঠানবাড়িতে চুরির ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’’
আরও পড়ুন:
মৌ ভট্টাচার্য নামে অভিযোগকারী বলেন, ‘‘আমার মেয়ের বিয়ের সময় ওই ব্যাক্তিকে দেখে আমি ভেবেছিলাম, মেয়ের বান্ধবীর পরিবারের কেউ। মালাবদলের সময় মেয়ের হাতে থাকা ব্যাগ একপাশে রাখা হয়েছিল। তখন ব্যাগ থেকে সোনা, টাকা-সহ বেশ কিছু সামগ্রী খোয়া যায়। সিসিটিভি দেখে পরে অভিযুক্তকে শনাক্ত করা যায়। গতকাল থানা থেকে ফোন করে জানানো হয় সে ধরা পড়েছে।’’ আদালতে সওয়াল-জবাবের পরে সরকারি আইনজীবী সুদীপ বসুনিয়া বলেন, ‘‘কোট-বুট পরে সেজেগুজে উনি (অভিযুক্ত) বিভিন্ন বিয়েবাড়িতে গিয়ে চুরি করতেন। গত মাসের একটি ঘটনায় অভিযুক্তের ছবি ওই অনুষ্ঠান ভবনের নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে দেওয়া হয়েছিল। রবিবার অভিযুক্ত একই কায়দায় ওই একই ভবনে চুরি করতে গিয়েছিলেন। তাঁকে নিরাপত্তারক্ষীরা শনাক্ত করেন। ধৃত স্বীকার করেছেন যে, তিনি এই ভাবে আরও চুরি করেছেন। তাঁর কাছ থেকে সোনা-সহ মূল্যবান জিনিসপত্র উদ্ধারের জন্য আমরা রিমান্ডের আবেদন করেছি। আদালত পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।’’