বেহাল: ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়েই যাতায়াত চলে পাঞ্জিপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র।
এ বছর নবমীর দিনটা আজীবন হানা দেবে ডালখোলার চৈতু দাসের মনে।
এক বছরের মেয়েকে নিয়ে করণদিঘিতে শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছিলেন তিনি ও তাঁর স্ত্রী ছবি। দোমহনার কাছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে একটা বড় গর্ত এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন যখন, পিছন থেকে একটি ট্যাঙ্কার ধাক্কা দেয় তাঁর মোটরবাইকে। ছিটকে পড়েন তিন জনই। একরত্তি মেয়েটি গিয়ে পড়ে গর্তের মধ্যে। এবং ঘটনাস্থলেই মারা যায়। চৈতু এবং তাঁর স্ত্রী দু’জনই রায়গঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে কয়েক দিন আগে ছাড়া পেয়েছেন। স্ত্রীর কোমরে এখনও চোট রয়েছে। সে দিনের কথা উঠলেই ডুকরে ওঠেন চৈতু, ‘‘এই রাস্তা আমারে মেয়েটাকে কেড়ে নিল!’’
স্থানীয়রা বলছেন, এমন দুর্ঘটনা আরও ঘটেছে এই অঞ্চলে। যেমন, নভেম্বরের গোড়ায় ইসলামপুরে। এই শহরের মধ্যে দিয়েছে গিয়েছে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক। তাতে গর্তের মধ্যে মোটরবাইক নিয়ে পড়ে পা ভাঙলেন বেসরকারি ব্যাঙ্কের এক কর্মী। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তিনি।
রায়গঞ্জ থেকে ডালখোলা হয়ে ইসলামপুর, চোপড়া— রাস্তা একটাই, নাম দুটো। প্রথম অংশটি পরিচিত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক হিসেবে। তার পরে ডালখোলা পূর্ণিয়ার মোড় থেকে চোপড়ার সোনাপুর (উত্তর দিনাজপুর ও দার্জিলিং জেলার সীমানা) পর্যন্ত এই রাস্তার নাম ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক। পরিসংখ্যান বলছে, রায়গঞ্জ থেকে চোপড়া পর্যন্ত বিস্তৃত এই জাতীয় সড়কে গত এক মাসে দুর্ঘটনায় ৪০ জনের বেশি জখম হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েক জনের।
এত দুর্ঘটনার কারণ কী? প্রশাসন সূত্রে বলা হচ্ছে, বড় কারণ রাস্তার সম্প্রসারণ। গোটা পথটাই চার লেনের হচ্ছে। সেই কাজ চলছে। ফলে বহু জায়গাতেই রাস্তার অবস্থা খারাপ। এর সঙ্গে তৈরি হয়েছে অজস্র খানাখন্দ। টানা লকডাউন চলায় সে সব মেরামতি এবং রাস্তা সম্প্রসারণ, দুই কাজই দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। তার পরে শুরু হলেও তা গতি পেতে অনেক সময় লেগেছে। ইসলামপুর পুলিশ জেলা ও রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার কর্তারাও মেনে নিচ্ছেন যে, দু’টি জাতীয় সড়কের উপর দুর্ঘটনা বাড়ছে। এ বিষয়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হচ্ছে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
স্থানীয় মানুষ থেকে বাস মালিক সংগঠন, সকলেই কিন্তু রাজ্যে প্রশাসন ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ের অভাবে বিরক্ত। উত্তর দিনাজপুর বাস মালিকদের সংগঠনের সম্পাদক প্লাবন প্রমাণিকের অভিযোগ, ‘‘প্রায় রোজ বাসের যন্ত্রাংশ ভাঙছে।’’ চালক, যাত্রীদের একাংশের প্রশ্ন— যেখানে রাস্তায় টোল আদায় করা হচ্ছে, সেখানে সড়কের এমন হাল কেন?
এর সঙ্গে বাড়তি আতঙ্ক, ডালখোলা ও ইসলামপুর শহরের যানজট। অভিযোগ, দুই শহরেই বাইপাসের কাজ চলছে ধীর গতিতে। ফলে স্থানীয়রা তো বটেই, দূরপাল্লার বাস দীর্ঘ সময় আটকে থাকায় অতিষ্ট অন্য জেলার লোকজনও।
সেপ্টেম্বর মাসে হৃদরোগে আক্রান্ত বাবাকে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে মালদহ থেকে শিলিগুড়ি যাচ্ছিলেন আব্দুল হাসিম। ডালখোলায় দাঁড়াতে হয় কম করে দু’ঘণ্টা। গোটা রাস্তারই যা অবস্থা, তাতে কোথাও গাড়ি গতি বাড়াতে পারেনি। শেষে সন্ধ্যায় যখন পৌঁছন শিলিগুড়িতে ততক্ষণে বাড়তি কয়েক ঘণ্টা লেগে গিয়েছে। স্কুল শিক্ষক হাসিম জানালেন, গোটা রাস্তায় বাবাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন।
খানাখন্দ কিন্তু শুধু জাতীয় সড়কে নেই। ডালখোলার যানজট এড়াতে করণদিঘি বোতলবাড়ি, রসাখোলা হয়ে ইসলামপুর ধনতলা পর্যন্ত যে রাজ্য সড়কটি গিয়েছে (বেঙ্গল টু বেঙ্গল রাস্তা বলেই এই রাস্তাটি পরিচিত), দু’বছর ধরে তার অবস্থাও অত্যন্ত খারাপ।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জাতীয় সড়কের খানাখন্দ সংস্কারে কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কর্তারা জানিয়েছেন, সড়ক সংস্কার ও বাইপাসের কাজ চলছে। ২০২১ মার্চ মাসে দুটি জাতীয় সড়কের বাইপাস চালু হয়ে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy