রায়গঞ্জের তুলসীতলা মোড়ে নিজের ভাড়া বাড়ির সামনে আততায়ীদের গুলিতে নিহত হন দীনেশ। —নিজস্ব চিত্র।
সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালি বলতে যা বোঝায়, ঠিক তেমনই ছাপোষা ছিলেন দীনেশ সাহা। সরকারি চাকুরে। বীজ নিগম দফতরের কর্মী ছিলেন। তাঁকে কেন কেউ খুন করবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না প্রতিবেশীরা। দীনেশের সম্পর্কে প্রাথমিক খোঁজখবর করার পর পুলিশকর্তারাও ধন্দে পড়ে গিয়েছিলেন খুনের নেপথ্য-কারণ নিয়ে। কিন্তু দীনেশের সঙ্গে জুয়াচক্রের যোগ প্রকাশ্যে আসতে ধীরে ধীরে সেই জট খুলতে শুরু করেছে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীদের একাংশ।
বুধবার রাতে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের তুলসীতলা মোড়ে নিজের ভাড়া বাড়ির সামনে আততায়ীদের গুলিতে নিহত হন দীনেশ। তাঁর বাড়ি রায়গঞ্জের উকিল পাড়া এলাকায়। তিনি দীর্ঘ দিন মালদহে কর্মরত ছিলেন। মাস পাঁচেক আগে সেখান থেকে রায়গঞ্জে ফিরে আসেন। পুলিশ সূত্রে খবর, সম্প্রতি নিজের বাড়ির কিছু অংশ বিক্রি করে দিয়েছিলেন দীনেশ। তার পর থেকেই তিনি ভাড়াবাড়িতে থাকা শুরু করেন। বুধবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ বাড়ির পাশের দোকানে ডিম কিনতে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে তাঁকে গুলি করে খুন করা হয়। গুলির আওয়াজ শুনতে পেয়ে প্রতিবেশীরা ছুটে এসেছিলেন। এসে দেখেন, মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন দীনেশ। পরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, দীনেশের কাছ থেকে তিনটি দামি মোবাইল ও একটি ল্যাপটপ উদ্ধার হয়েছে। তার থেকে বেটিংচক্রের সঙ্গে দীনেশের যুক্ত থাকার প্রমাণ মিলেছে। সেই সূত্র ধরে খুনে জড়িত থাকার সন্দেহে তিন জনকে আটক করা হয়েছে জানিয়েছে ওই সূত্র।
তদন্তকারীদের অন্য একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, দীনেশের একমাত্র মেয়ে কলকাতায় পড়াশোনা করেন। স্ত্রী অধিকাংশ সময় মেয়ের সঙ্গেই থাকেন কলকাতায়। পরিবারের লোক এবং পড়শিদের সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, দীনেশ সুদে টাকা খাটাতেন। সম্প্রতি তিনি যে বাড়ির একাংশ বিক্রি করেছিলেন, তা-ও দেনা শোধ করতে। এ সবের সঙ্গে খুনের কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যদিও এ ব্যাপারে সরকারি ভাবে পুলিশের তরফে কিছু জানানো হয়নি।
বৃহস্পতিবারই হত্যাকাণ্ডের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে আসে। ভিডিয়োটিতে দেখা গিয়েছে, বাইকে করে এসেছিলেন দু’জন আততায়ী। দীনেশকে গুলি করার আগে এক জন তাঁর সঙ্গে বেশ কিছু ক্ষণ কথাও বলেন। এর থেকেই তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান, ওই ব্যক্তি দীনেশের পরিচিত কেউ। তা না হলে এত ক্ষণ কেউ দাঁড়িয়ে কথা বলবেন না নিশ্চয়ই! দেখা যায়, কথা বলতে বলতেই হঠাৎ কোমরে থাকা পিস্তল বার করে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি চালিয়ে দেয় আততায়ী। উত্তর দিনাজপুর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তন্ময় সরকার বলেছেন, ‘‘এই ঘটনার তদন্ত দ্রুত শেষ করা হবে। আততায়ীরা গ্রেফতার হবেন। প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়েছে, খুব পরিচিত মানুষ এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy