—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০২০’ চালু হওয়ার পরেই শুরু হয়েছিল পালাবাদল। প্রায় তিন দশক পরে এই নীতিতে উচ্চশিক্ষায় ‘খোলা বাতাসের’ আভাস ছিল। অনেকটা নব্বইয়ের দশকের সোভিয়েতের গ্লাসনস্ত বা পেরেস্ত্রৈকার মতো। কিন্তু, সাধ আর সাধ্যের ফারাকে ‘জাতীয় শিক্ষানীতির’ পরিপূর্ণ রূপায়ণে এখনও অনেক বাধা।
ছাত্রছাত্রীদের পুঁথি-সর্বস্ব শিক্ষাদানের চিরাচরিত ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে দক্ষ কর্মী হিসাবে গড়ে তোলার পথে যে উত্তরণের উচ্চারণ ছিল, তা অনেকাংশে ধাক্কা খায় শিক্ষাখাতে কম ব্যয়বরাদ্দ বা গ্রামীণ ভারতের ‘দুর্বল’ পরিকাঠামোর জন্য। ভারতবর্ষের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে যেখানে ন্যূনতম যোগ্যতামান বিচার্য হয় গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি দিয়ে, সেখানে মার্কিন-মডেলের অন্ধ অনুকরণ কিছু সমস্যার জন্ম দেবেই।
তা হল, উদ্ভূত সমস্যাগুলি নিয়ে চিন্তাভাবনার বদলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন মাত্র চার বছরের মাথায় ফের নিয়ে এসেছে আরও এক খসড়া শিক্ষানীতির ক্ষুদ্র সংস্করণ। এই নীতি অনুযায়ী, বছরে দু’বার ভর্তি, যখন খুশি পাঠ্যক্রম শেষ করার স্বাধীনতা। এ সব শুনতে বেশ ভাল। কিন্তু এক জন স্থায়ী শিক্ষক দিয়ে চালানো একটি বিষয় যেখানে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক নিয়ম, সেখানে তা কার্যকর করা অসম্ভব।
মহাবিদ্যালয়গুলির কথা না বলাই ভাল। আমাদের রাজ্যে এখন এমন বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে স্থায়ী ভবন নেই, শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নেই, বাজেটে ব্যয়বরাদ্দ পর্যন্ত নেই! তবে, ‘ইউনিয়ন’ রয়েছে। আর এখানেই মার্কিন-মুলুকের সঙ্গে তফাৎ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি প্রাধান্য না পেয়ে যদি শিক্ষা প্রাধান্য পায়, তবেই জাতীয় শিক্ষানীতির উচ্চাকাঙ্খী প্রত্যাশা পূরণের পথে আমরা অগ্রসর হতে পারব।
প্রতিষ্ঠানগুলির মান নির্ধারণে জন্যে ‘ন্যাক’ নামক নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়েছে। তার বিশ্বাসযোগ্যতাও প্রশ্নের মুখে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারীদের সমাবেশ সত্ত্বেও ‘ভাড়াটে সৈন্য’ দিয়ে নিজেদের মান নির্ধারণের যুদ্ধে অবতীর্ণ। ‘ন্যাক’ বলছে, ‘মিডলম্যান’ বা এজেন্সি ছাড়া পরীক্ষায় বসতে আর অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান এজেন্সিকে লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে ‘গ্রেড’ কিনতে ব্যস্ত।
আমাদের দেশে টাকাই শেষ কথা বলে। নিয়ম না-মানাই এখানে নিয়ম। আর সে কারণেই বিশ্বের কাছে যত উজ্জ্বল ছবির প্রচারই হোক না কেন, আসলে ছবি ক্রমশ মলিন হচ্ছে। উচ্চশিক্ষা নিয়ে অন্তহীন এই পরীক্ষা-পর্ব হয়তো চলতে থাকবে। কিন্তু যাদের জন্য এই পরীক্ষা, সেই ছাত্রছাত্রীরা প্রথাগত শিক্ষা থেকে ক্রমশ মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে— এই সত্য কি আজও অস্বীকার করে যাব আমরা?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy