Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

রোজগারের চিন্তা ছেড়ে আধার নিয়ে ছোটাছুটি, উদ্বেগে মহল্লা

কয়েক মাস ধরে এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক চলছিল। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) লোকসভা ও রাজ্যসভায় পাশ হওয়ায় গ্রামে আতঙ্ক আরও জাঁকিয়ে বসেছে।

আশঙ্কা: আইন নিয়ে চিন্তায় গ্রামবাসী। খড়িবোনায়। নিজস্ব চিত্র

আশঙ্কা: আইন নিয়ে চিন্তায় গ্রামবাসী। খড়িবোনায়। নিজস্ব চিত্র

জয়ন্ত সেন 
খড়িবোনা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৫৬
Share: Save:

নব্বইয়ের দশকেও কাঁটাতারের বেড়া ছিল না। মুসলমান পরিবারের অনেেক তখন ওপার থেকে এপারে এসে বাড়িঘর করে থাকতে শুরু করেন। যদিও তার আগে থেকেই অনেকগুলি মুসলমান পরিবারের বাস সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম খড়িবোনায়।

কয়েক মাস ধরে এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক চলছিল। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) লোকসভা ও রাজ্যসভায় পাশ হওয়ায় গ্রামে আতঙ্ক আরও জাঁকিয়ে বসেছে। এই পরিস্থিতিতে বাসিন্দারা কী করবেন, কোথায় যাবেন, তা নিয়ে কার্যত দিশেহারা। শনিবার গ্রাম ঘুরে দেখা গেল, চায়ের ঠেক থেকে শুরু করে গ্রামের মহল্লায় মহল্লায় বাসিন্দাদের মধ্যে শুধু একটাই আলোচনা। এনআরসি আর সিএএ। একটাই প্রশ্ন, ‘‘এই দেশে থাকতে পারব তো?’’

এ দিন বেলা বারোটায় কালিয়াচক ৩ ব্লকের গোলাপগঞ্জ পঞ্চায়েতের খড়িবোনা বাজারের বেশির ভাগ দোকানপাট তখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। একটি চায়ের দোকানে বসে জনাদশেক বাসিন্দা আড্ডা দিচ্ছেন। তাঁদের বেশির ভাগই পেশায় কৃষিজীবী। পাশাপাশি দিনমজুরিও করেন কেউ কেউ। তাঁদের মধ্যে ছিলেন আব্দুর রহমান, কিরণ মিয়াঁ, সফিকুল ইসলাম, আনসার শেখ, জাহিদুল শেখরা। বিল পাশ হওয়ার পর থেকে সব আলোচনাই ঘুরে ফিরে নাগরিকত্বের প্রশ্নে এসে মিশছে। আব্দুর রহমান বললেন, ‘‘বাপ-ঠাকুরদা এই গ্রামেরই বাসিন্দা ছিলেন। ১৯৭১ সালের আগের কাগজপত্র রয়েছে। তবুও ভয় হচ্ছে। আমাদের এ দেশে থাকতে দেবে তো?’’

আর এক বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামে ২০০০ সালের পরে কাঁটাতারের বেড়া হয়েছে। কিন্তু তার আগে পর্যন্ত ওপার থেকে অনেকে এসে এপারে বসবাস শুরু করেছিলেন। এখন তাঁরা ভারতীয় ভোটার। কিন্তু সিএবি পাস হওয়ার পর সেই পরিবারগুলি চরম উদ্বেগে রয়েছে।’’ সাদিকুল ইসলাম নামে আর এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘পরিবারের ৬ জন সদস্যর ভোটার কার্ড সংশোধন করতে পেরেছি, রেশন কার্ড সংশোধন হয়েছে। কিন্তু আধার কার্ড সংশোধন করতে পারছি না। কালিয়াচকে যে আধার এনরোলমেন্ট সেন্টার রয়েছে সেখানে গেলে কেউ আসতে বলছে এপ্রিল মাসে, কেউ মে মাসে। কী যে করব ভাবতেই পারছি না।’’ ওই আড্ডার মাঝেই একজন বললেন, ‘‘শুধু আমরাই না, গোটা গ্রাম আতঙ্কে ভুগছে।’’

তাঁদের কথা যে কতটা সত্যি তা টের পাওয়া গেল গ্রামে ঢুকে। বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ রান্নাবান্নার পাট চুকিয়ে বাড়ির কাছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে জনা কয়েক মহিলা। রেশমা বিবি নামে এক জন তাঁদের মধ্যে থেকে বললেন, ‘‘একটাই চিন্তা মাথায় ঘুরছে যে আমরা আদৌ এ দেশে থাকতে পারব কিনা? বুধবার থেকেই সমস্ত কাগজপত্র জোগাড় করতে শুরু করে দিয়েছি।’’ রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল তো এনআরসি ও সিএএর বিরোধিতা করছে, তা সত্ত্বেও ভয় কেন? প্রশ্ন ছুঁড়তেই জুবেদা বিবি নামে আর এক জন বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার যদি গোটা দেশে সিএএ ও এনআরসি লাগু করে দেয়, তবে এক জন মুখ্যমন্ত্রী তা কী ভাবে রুখবেন! ভয়ে কাঁটা হয়ে আছি। কী করব, কোথায় যাব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।’’

গ্রামের এক বৃদ্ধ সহিদুল মিয়াঁ বলেন, ‘‘সিএএ এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করল যে মানুষ এখন রোজগারের চিন্তা বাদ দিয়ে দিনভর শুধু আধার কার্ড সংশোধন, ভোটার কার্ড সংশোধন, রেশন কার্ড সংশোধন, এ সব করেই ব্যস্ত হয়ে থাকছেন। এ সব বন্ধ করে উন্নয়নের কথা ভাবা উচিত সরকারের।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Citizenship Amendment Act NRC Aadhaar Card CAA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy