Advertisement
০১ ডিসেম্বর ২০২৪
Financial Fraud Cases

ট্যাবের পরে অন্য জালিয়াতিও? উদ্বিগ্ন চোপড়া

খানিক দূরে আর এক ‘সিএসপি’। দেখে বোঝা যায়, ভালই ব্যবসা চলে। তার মালিক মনসুর আলমকে ট্যাব-কাণ্ডে ধরেছে পুলিশ।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

কৌশিক চৌধুরী
চোপড়া শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:১৪
Share: Save:

কলকাতা পুলিশের দলটি এসেছিল নভেম্বরের গোড়ায়। চোপড়ার ঘিরনিগাঁও গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজিবস্তিতে। ট্যাব-কাণ্ডে ততক্ষণে গ্রেফতার হয়ে গিয়েছে এলাকার যুবক উসমান আলি। জানা গিয়েছে, প্রত্যন্ত গ্রামটিতেও কতটা কেতাদুরস্ত কর্পোরেট অফিসের মতো সাজানো ‘সিএসপি’ বা গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র থাকতে পারে! দেখে তাক লেগে গিয়েছিল কলকাতা পুলিশের তদন্তকারীদের।

খানিক দূরে আর এক ‘সিএসপি’। দেখে বোঝা যায়, ভালই ব্যবসা চলে। তার মালিক মনসুর আলমকে ট্যাব-কাণ্ডে ধরেছে পুলিশ। সেই গ্রামেরই প্রাথমিক স্কুল মিরচা গোলগছ প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক দিবাকর দাস, যাকে শিলিগুড়ি থেকে দুই আত্মীয়ের সঙ্গে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।

ততক্ষণে অবশ্য পুলিশি অভিযানের খোঁজ পেয়ে পালিয়েছে বাবুল হুসেন, যে বাবর নামেও পরিচিত। এখনও পলাতক লক্ষ্মীপুর হাই স্কুলের এই করণিক। তার ইসলামপুরের ভাড়াবাড়িতে তালা, চোপড়ার কোটগছ-ডাঙাপাড়ায় তার নিজের বাড়িতেও লোকজন নেই বললেই চলে। তবে বাবুলের নিকট আত্মীয়, চোপড়ার মণ্ডলবস্তির সাদিক হোসেন ধরা পড়েছে। বাবরের ‘সিএসপি’ সাদিকই দেখাশোনা করত। মনসুর, দিবাকর, সাদিকের সূত্রে তদন্তকারীরা বুঝতে শুরু করেন, ট্যাব নিয়ে অনেক জালিয়াতির উৎসস্থল এই চোপড়া-ই।

স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকায় ভিন‌্ জেলা এবং জেলার পুলিশ নড়াচড়া শুরু করেছে জানতে পেরেই গা-ঢাকা দিয়েছে জালিয়াতি চক্রে জড়িত আরও অনেকে। তদন্তকারীদের অনুমান, নেপাল, বিহার, ঝাড়খণ্ডে পালিয়েছে অনেক অভিযুক্ত। চোরাপথে বাংলাদেশে কেউ ঢুকেছে কি না, তা-ও তদন্তের আওতায় রয়েছে বলে রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর।

চোপড়া ব্লক কংগ্রেস সভাপতি মহম্মদ মসিরুদ্দিনের দাবি, ‘‘পুলিশ ময়দানে নামতেই গাড়ি ভাড়া নিতে চেয়ে ৩০-৫০ হাজার টাকার টোপ দেওয়া হচ্ছিল গাড়ি মালিকদের। রাতের অন্ধকারে শিলিগুড়ি হয়ে সব পালিয়েছে বলেই মনে হয়। অন্তত ১০০ জন পালিয়েছে চোপড়া ছেড়ে।’’

তদন্তকারীদের মতে, এই অনুমান যদি ঠিক হয়, তা হলেই বোঝা যাচ্ছে, কতটা গভীরে এবং কতটা ছড়ানো রয়েছে প্রতারণাচক্রের জাল।

এলাকায় এত কাণ্ড হল, অথচ, পঞ্চায়েত ভোটে চোপড়ায় যে দল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল, সেই তৃণমূল কিছু জানতে পারল না! মসিরুদ্দিন বলেন, ‘‘ট্যাব-কাণ্ডে ধরা পড়েছে শাসক দলের প্রাক্তন প্রধানের ছেলে। অন্য অনেক অভিযুক্তও শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলেই শুনছি।’’ এলাকায় ঘোরার সময় চোপড়ার কলোনি মোড়ের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক হামিদুল রহমান কলকাতায়। মোবাইল-মেসেজে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ঘনিষ্ঠেরা দাবি করেছেন, কিছু কাজে বিধায়ক ব্যস্ত। তবে এলাকায় ‘বিধায়ক-ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত তৃণমূলের চোপড়া ব্লক সহ-সভাপতি জিয়াউল হক বলেন, ‘‘পুলিশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। ইতিমধ্যে কয়েক জনকে ধরেছে। সে যে-ই হোক না কেন, অন্যায় করলে অবশ্যই গ্রেফতার হতেই হবে।’’

রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর, ট্যাব-জালিয়াতির তদন্তে নেমে সম্প্রতি তদন্তকারীরা চোপড়ায় ‘আইপিডিআর’ (ইন্টারনেট প্রোটোকল ডিটেল রেকর্ড) সমীক্ষা শুরু করেছেন। যার দৌলতে নির্দিষ্ট কিছু ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে নজরদারি, ইন্টারনেট সিকিওরিটি বা সুরক্ষা ব্যবস্থার কাজকর্ম, নেটওয়ার্কের নানা ধরনের ব্যবহার সামনে আসছে। তাতে তদন্তকারীদের কাছে অনেকটাই স্পষ্ট, চোপড়া থেকে ছড়ানো এই জালিয়াতি-চক্রের জাল প্রায় গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। ইসলামপুর আদালতের সরকারি আইনজীবী সঞ্জয় ভাওয়ালের কথায়, ‘‘পুলিশি-তদন্তে নানা তথ্য, প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। তাতে নানা দিক সামনে আসছে। আরও হয়তো অনেক কিছু জানা যাবে।’’

সহমত এলাকাবাসীর একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, শুধু ট্যাব-কাণ্ড নয়, অন্য সরকারি প্রকল্পের ক্ষেত্রেও টাকা হাতানোর ছক কষা হয়েছে কি না চোপড়া থেকে, সেটাও পুলিশ-গোয়েন্দাদের তদন্তে স্পষ্ট হওয়া দরকার। চোপড়ার সীমান্তবর্তী গ্রামের ক্যানসার আক্রান্ত বৃদ্ধের কথায়, ‘‘এখানে অনেকে আছেন, যাঁরা কখনও অসৎ পথে পা বাড়াননি। কিছু লোকের জন্য চোপড়া আর জামতাড়া সমার্থক হয়ে যাবে, এটা তাঁরা চান না।’’

(শেষ)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy