এখনও অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ফালাকাটায়। — রাজকুমার মোদক
অ্যাকাউন্টে মজুরি জমা পড়লেও ব্যাঙ্ক থেকে নগদ তুলতে লম্বা সময় লাগছে। কয়েক কিলোমিটার দূরের ব্যাঙ্কে গিয়ে লাইন দেওয়ায় কোপ পড়ছে কাজে। লাগোয়া হাটগুলি সুনসান।
শীতের হাটে তেলেভাজার কড়াই থেকে চালের গুঁড়োর পিঠে তৈরির উনুনের আঁচ নিভেছে। সকাল-বিকেলের কেনাকাটা ব্যস্ততা নেই। আজ শুক্রবারের পরে চা বলয়ের স্বাভাবিক ছন্দ ফেরার আশায় শ্রমিক-মালিক সব পক্ষই।
সরকারি ঘোষণা মতো আজ শুক্রবার ব্যাঙ্কের বিধি নিষেধ শিথিল হওয়ার কথা। গত ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের ঘোষণার পর ৫০ দিন কেটে গেলেও ছোট এবং মাঝারি চা শ্রমিকদের অধিকাংশের মজুরির অনেকটাই বাকি রয়েছে। নগদের অভাবে মজুরি হয়নি। যাদের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয়েছে, তাঁরাও হাতে নগদ পাননি। বৃহস্পতিবারই জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া চাউলহাটির একটি ব্যাঙ্কের শাখায় টাকা তুলতে গিয়েছিলেন ছোট চা বাগানের শ্রমিক নব বর্মন। ২ হাজার টাকা তোলার ফর্ম জমা দিয়ে পেয়েছেন মাত্র ৫০০ টাকা। শিলিগুড়ির বিধাননগরের চা বাগান লাগোয়া হাট সন্ধের আগেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নকশালবাড়ি বাজারে দেখা যাচ্ছে না চা শ্রমিকদের।
ক্ষুদ্র চা চাষীদের স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে। দালাল এবং ফড়েদের হাত থেকে রক্ষা পেতে গোষ্ঠী গড়েছেন চা শ্রমিকরা। গত নভেম্বরের পর থেকে জলপাইগুড়ির অন্তত ৫টি গোষ্ঠীর সদস্য চাষি-শ্রমিকরা টাকা তুলতে পারেননি। পাঙ্গার উত্তম মণ্ডল একটি ছোট চা বাগানে শ্রমিকের কাজ করেন। নভেম্বর মাসে তিন সপ্তাহের মজুরি পাননি তিনি। গত সপ্তাহে অ্যাকাউন্টে মজুরি জমা হয়েছে। সেই মজুরি তুলতে গিয়েই সমস্যা পড়েছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সরকারি নির্দেশ মতো ব্যাঙ্কে তো টাকা জমা হল। কিন্তু তুলতে পারছি কোথায়? ব্যাঙ্ক থেকে জানানো হচ্ছে, টাকা নেই। ঘণ্টা দু’তিনেক লাইন দিয়ে ৫০০ করে টাকা পাচ্ছি। কাজ বাদ দিয়ে প্রতি দিন লাইন দেওয়া সম্ভব নয়।’’ নকশালবাড়ির চা শ্রমিক হান্দ্র টোপ্পো গত পঞ্চাশ দিনে মাত্র দেড় হাজার টাকা তুলতে পেরেছেন। হান্দ্রু বললেন, ‘‘টাকা না পেলে তো আর ভাঙচুর করতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে আধপেটা খেয়ে থাকতে হচ্ছে।’’
শ্রমিকদের অনেকেই ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকায় কাজেও প্রভাব পড়ছে। একটি বড় চা বাগান গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত নিরঞ্জনকুমার বসু বলেন, ‘‘অনেকেই দেখছি কাজে আসছেন না। জিজ্ঞেস করলে বলছে ব্যাঙ্কের লাইনে গিয়েছিল। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ জন করে অনুপস্থিত তাকছে। কাজের ক্ষতি হচ্ছে।’’
বাগডোগরার হাঁসকুয়া চা বাগানের পাসেই জমজমাট হাট। বিকেল থেকে তেলেভাজা-চালের গুঁড়োর দোকানের সারি থাকে হাটে। নোট বাতিলের ধাক্কায় সেই হাটও সুনসান। তেলেভাজা বিক্রি করা সুশীল দত্তের কথায়, ‘‘শীতের শুরুটা ভালই হয়েছিল। কিন্তু এখন তো ১০০ চাকার পেঁয়াজিও বিক্রি হয় না।’’
গত সপ্তাহ থেকে দোকান বন্ধ রেখেছেন তিনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তবেই ফের উনুনে কড়াই চাপাবেন বলে জানালেন। আশায় রয়েছে চা মালিকরাও। ক্ষুদ্র চা শ্রমিক সংগঠনের সর্বভারতীয় সংগঠনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যে যতই আশ্বাস দিন না কেন, ব্যাঙ্ক থেকে এত দিন বেশি টাকা মেলেনি। টাকা তুলতে গেলে একের পর এক কাগজ চেয়ে হয়রান হতে হয়েছে। তাই মজুরিও হয়নি অনেক বাগানে। নগদের জোগান না বাড়লে চা বলের অর্থনীতি স্বাভাবিক হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy