Advertisement
২১ ডিসেম্বর ২০২৪

চিন্তা নিয়েই গৌড়ে ওঠেন যাত্রী, ক্ষোভ

গনিখান চৌধুরী রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ১৯৮১ সালে মালদহ ও শিয়ালদহের মধ্যে এই এক্সপ্রেসটি চালু করেন। বিগত প্রায় তিন দশক ধরে এটির উপর মালদহ ও দুই দিনাজপুরের যাত্রীরা নির্ভরশীল।

ছবি সংগৃহীত।

ছবি সংগৃহীত।

অভিজিৎ সাহা 
মালদহ শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৯ ০২:১১
Share: Save:

কখনও যৌন নিগ্রহ। কখনও বাতানুকূল কামরায় ঘটছে চুরি ও লুঠের মতো ঘটনা। গৌড় এক্সপ্রেসের একের পর এক ঘটনায় আতঙ্কিত যাত্রী মহল। অভিযোগ উঠেছে, ঢিলেঢালা নিরাপত্তার কারণেই নিরাপত্তা কমছে তিন দশকের ঐতিহ্যবাহী এই এক্সপ্রেসে। বাড়ছে দুষ্কৃতী হামলা, চুরি-ছিনতাই ও যৌন হেনস্থার মতো ঘটনা। শুক্রবার গভীর রাতে দুষ্কৃতী হামলার পর এই ট্রেনের নিরাপত্তা আরও বাড়ানোর দাবি তুলেছেন যাত্রী থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি আমলারা।

গনিখান চৌধুরী রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ১৯৮১ সালে মালদহ ও শিয়ালদহের মধ্যে এই এক্সপ্রেসটি চালু করেন। বিগত প্রায় তিন দশক ধরে এটির উপর মালদহ ও দুই দিনাজপুরের যাত্রীরা নির্ভরশীল। রাত সাড়ে নটা নাগাদ মালদহ টাউন স্টেশন থেকে ছাড়ে ট্রেনটি। শিয়ালদহে পৌঁছয় সকাল ৬টার মধ্যে। ফলে সকলেরই গন্তব্যে পৌঁছতে সুবিধে হয়। এই কারণেই তিন জেলার অধিকাংশ যাত্রীদেরই পছন্দের ট্রেন এই এক্সপ্রেস। গত কয়েক বছর ধরে এই এক্সপ্রেসে বেশ কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায় কিছুটা হলেও জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে ট্রেনটি। অভিযোগ, আতঙ্ক নিয়েই এখন এই এক্সপ্রেসে উঠতে হয়ে যাত্রীদের। মাত্র সাতদিন আগেই গৌড় এক্সপ্রেসের সংরক্ষিত কামরায় যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছিলেন মালদহের এক কলেজ ছাত্রী। তিনি সেদিন মায়ের সঙ্গে কলকাতা থেকে মালদহ ফিরছিলেন। পাশাপাশি, এই এক্সপ্রেসের বাতানুকূল কামরায় চুরি, লুঠের ঘটনা এর আগেও একাধিকবার হয়েছে। বছরখানেক আগে এই এক্সপ্রেসের বাতানুকূল কামরায় মালদহ জেলার তিন বিধায়ক তৃণমূলের সমর মুখোপাধ্যায়, কংগ্রেসের আসিফ মেহবুব ও মোস্তাক আলমের ব্যাগপত্র, মোবাইল ফোন চুরির ঘটনা ঘটেছিল। কাকতালীয় ভাবে শুক্রবার রাতেও গৌড় এক্সপ্রেসে ছিলেন রতুয়ার বিধায়ক সমর। শনিবার সকালে তিনি বলেন, ‘‘নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। ট্রেনে নিরাপত্তারক্ষীদের দেখাই মেলে না। এই সুযোগে সক্রিয় হয়ে উঠেছে দুষ্কৃতীরা।’’

ওই ট্রেনেরই সওয়ারি ছিলেন উত্তর মালদহের বিজেপির সাংসদ খগেন মুর্মু। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘গৌড় এক্সপ্রেস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন। এই ট্রেনে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা প্রয়োজন। বিষয়টি রেলমন্ত্রককে জানানো হবে।’’ মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার এবং সহ অধ্যক্ষ অমিতকুমার দাঁ বলেন, ‘‘এ দিন সকালে ব্যক্তিগত কাজে স্টেশনে গিয়েছিলাম। সেখানেই গৌড় এক্সপ্রেসের ঘটনা শুনি। গৌড় এক্সপ্রেসেই আমরা যাতায়াত করে থাকি। এ দিনের ঘটনার পর আতঙ্ক বাড়ছে।’’

প্রশ্ন উঠেছে, কেন গৌড় এক্সপ্রেসে বারবার ঘটছে যৌন হেনস্থা, চুরি ও লুঠপাটের মতো ঘটনা। রেল সূ্ত্রে জানা গিয়েছে, এই এক্সপ্রেসটি প্রথমে মালদহ ডিভিশনের অধীনে ছিল। এক দশক আগে গৌড় এক্সপ্রেসের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পায় শিয়ালদহ ডিভিশন। শিয়ালদহ জিআরপির এক অফিসার এবং ছ’জন অস্ত্রধারী পুলিশকর্মী মোতায়েন থাকে গৌড় এক্সপ্রেসে। যা যথেষ্ট নয় বলে দাবি করেছেন কর্তব্যরত রেল পুলিশের একাংশ। তাঁদের দাবি, গৌড় এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনে কমপক্ষে ন’জন নিরাপত্তারক্ষী থাকা প্রয়োজন। যদিও শিয়ালদহে গৌড় এক্সপ্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত জিআরপি অফিসার মানস মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা সাধ্যমতো নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করি। নিয়মিত ট্রেনটিতে টহলদারি চালানো হয়।’’

এ দিকে, রাতের ঘটনার পর এ দিন সকালে আরপিএফের বোলপুর, বর্ধমানের আধিকারিক এবং আরপিএফের ক্রিমিনাল ইন্টেলিজেন্সের (হাওড়া) আধিকারিকেরা ঘটনাস্থল গুসকরায় যান। দুই স্টেশনের মধ্যবর্তী ট্র্যাক পরীক্ষা করেন তাঁরা। কথা বলেন লাগোয়া এলাকার হকার ও টোটো-চালকদের সঙ্গেও। অন্যদিকে, গৌড় এক্সপ্রেস শেষপর্যন্ত এ দিন মালদহ টাউন স্টেশনে পৌঁছয় পৌনে ৮টা নাগাদ।

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Robbery Gour Express
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy