Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

হেলিকপ্টার উড়তেই দ্বন্দ্ব লেগে গেল

সরাসরি নেতাদের নাম না থাকলেও, কে কার অনুগামী, তার আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল ফেসবুকের লড়াইয়ে।   যা দেখে অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছিল কয়েক বছর আগে মালদহের কথা।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৫১
Share: Save:

সোমবার কোচবিহারে এসে কর্মিসভাতেও মুখ্যমন্ত্রী দলের নেতাদের নাম করে করে এক সঙ্গে কাজ করার জন্য বলেন। এমনকি তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলে কেউ নেতা নন, নেতা হল ঘাসফুল।’’ তার পরে মঙ্গলবার তাঁর হেলিকপ্টার কোচবিহারের আকাশসীমা ছাড়াতেই কিন্তু কোচবিহারেও শুরু হয়ে গেল বিভিন্ন নেতাদের অনুগামীদের মধ্যে ফেসবুকে লড়াই। মুখ্যমন্ত্রী এ বারের সফরে এসে কোন নেতাকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন, কাকে বকাবকি করেছেন, সে সব নিয়ে দলের কয়েকজন নেতার অনুগামীরা ফেসবুকে পোস্ট করতে শুরু করেন। সেই পোস্টে নানা মন্তব্য পড়তে শুরু করে।

সরাসরি নেতাদের নাম না থাকলেও, কে কার অনুগামী, তার আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল ফেসবুকের লড়াইয়ে। যা দেখে অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছিল কয়েক বছর আগে মালদহের কথা। সেখানেও হেলিকপ্টারে ওঠার আগে মমতা দলের বিবাদ মেটাতে নেতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁর হেলিকপ্টার আকাশে ওড়ার পরেই যদিও ওই গোষ্ঠীগুলোর বিবাদ শুরু হয়ে যায়। তবে কোচবিহারের নেতাদের সোজা কথা, দলে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। দলনেত্রীর নির্দেশ মেনে সকলে এক সঙ্গেই কাজ করবেন।

কী ভাবে মানুষের সঙ্গে মিশে কাজ করতে হবে, তার একটি নজিরও যেন মমতা এ দিন দিয়ে গেলেন। হেলিপ্যাডে যাওয়ার সময় রাস্তার দু’পাশে ভিড় দেখে তাঁর গাড়ি গেল ধীরে ধীরে। কোথাও দাঁড়িয়ে পড়লেন, কোথাও হাত নাড়লেন।

বেলা ১২টা নাগাদ কোচবিহার সার্কিট হাউস থেকে বেরিয়ে পড়েন তিনি। সুনীতি রোড ধরে কোচবিহার রাজবাড়ি স্টেডিয়ামে পৌঁছন। সেখানেই তৈরি করা হয়েছিল হেলিপ্যাড। এক কিলোমিটারের ওই যাত্রাপথে রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়েছিলেন স্কুল পড়ুয়া থেকে সাধারণ মানুষ। ধীরগতিতে চলা গাড়ি থেকে হাত নাড়েন মুখ্যমন্ত্রী।

সার্কিট হাউসের কাছেই সুনীতি রোডের পাশে কোচবিহার পুলিশ লাইন প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই স্কুলের শিক্ষক, পড়ুয়াদের অনেকে আগে থেকেই রাস্তার ধারে অপেক্ষায় ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর দেখা পেয়ে তাঁরা অভিভূত। স্কুলের শিক্ষক মিঠু দের কথায়, “আমরা খুবই খুশি।” পায়েল পাসোয়ান, সুধন পাসোয়ান, রাজু মিঁয়ার মতো খুদে পড়ুয়ারা জানায়, তারা হাত নাড়তে মুখ্যমন্ত্রীও সাড়া দিয়েছেন।

এলাকার উৎসাহী বাসিন্দারাও অনেকে সে সময় রাস্তার ধারে ছিলেন। তাঁদের এক জনের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে দেখার ইচ্ছে নিয়েই দাঁড়িয়েছিলাম। হেলিপ্যাডে যাওয়ার পথে তাঁর কনভয়ের গতি কমে যাবে ভাবিনি। হয়তো আগে থেকে জানলে মুখ্যমন্ত্রী নেমেও আসতেন। সব সময় তো কনভয় থামানো যায় না।’’ কোচবিহারে এ দিন অন্যত্র মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় থেমেছিল। সেখানে স্থানীয়দের চিঠিও নেন তিনি।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বিশেষ ব্যবস্থা করে একটি আবেদনপত্র পাঠানো হয়। তাতে ব্যস্ততম রাস্তা লাগোয়া ওই প্রাথমিক স্কুলে সীমানা প্রাচীর তৈরি, স্কুলের মাঠ সংস্কারের আর্জি জানানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর হাতে চিঠি পৌঁছলে দ্রুত সমস্যার সমাধানের আশা করছেন তারা।

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন কনভয় থামিয়ে হাসপাতালের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা জনতার কয়েক জনের সঙ্গে কথাও বলেন।

স্টেডিয়ামে পৌঁছে দুই থেকে তিন মিনিট দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সেখানে তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ, কার্যকরী সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়, যুব সভাপতি বিষ্ণুব্রত বর্মণ, মহিলা তৃণমূলের সভাপতি শুচিস্মিতা দেবশর্মা থেকে শুরু করে ভূষণ সিংহ, আব্দুল জলিল আহমেদ, অভিজিৎ দে ভৌমিকরা। দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীও সেখানে ছিলেন।

দলীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী এদিনও সবাইকে স্পষ্ট ভাবে এক সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গেই প্রচারে জোর আনার জন্য নির্দেশ দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর সেখানে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি জানিয়ে দেন, সময় হাতে নেই। তাঁকে দ্রুত গঙ্গারামপুর যেতে হবে প্রশাসনিক বৈঠকে। বিনয় বলেন, “আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ ভাবেই চলছি। নেত্রীর নির্দেশ মতোই কাজ করা হবে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy