নিজস্ব চিত্র
স্কুলে একটাই ক্লাসঘর। ওই ঘরের এক দিকে বসে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়ারা। আর এক দিকে ষষ্ঠ শ্রেণির। যখন পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস নেন স্কুলের একক শিক্ষক, তখন তা চুপচাপ বসে শোনে ষষ্ঠ শ্রেণির ছেলেমেয়েরা। শিলিগুড়ি মহকুমার ফাঁসিদেওয়া ব্লকের বারোঘরিয়া জুনিয়র হাই স্কুলে বেলার দিকে গেলে এমনই ছবি দেখা যায়। এই ছবি সামান্য ভিন্নও হতে পারে। কারণ, একই ভাবে সপ্তম আর অষ্টম শ্রেণিরও ক্লাস হয় ওই ঘরে। শিক্ষকও ওই এক জনই। পঞ্চানন সিংহ। গত ন’বছর ধরে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের এ ভাবেই ক্লাস করাতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন তিনি। গ্রামের লোকেরা বলেন, ‘পঞ্চানন মাস্টার’ আছেন বলেই ফাঁসিদেওয়ার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা আজও লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে। ফি বছর পড়ুয়াদের সংখ্যা বাড়লেও এই একক শিক্ষকের কারণেই বারোঘরিয়ার জুনিয়র হাই স্কুলে আজও তালা ঝোলেনি।
২০১৩ সালে গ্রামের মানুষের আর্জি শুনেই একটি বড় হল ঘরকে স্কুল বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনের তরফে। তারই নাম দেওয়া হয় চটহাট বারোঘরিয়া জুনিয়র হাই স্কুল। তখন এই স্কুলে সহশিক্ষক হিসাবে যাঁকে নিযুক্ত করা হয়েছিল, তিনি হলেন এই ‘পঞ্চানন মাস্টার’। গ্রামবাসীরা প্রথমে ভেবেছিলেন, পরে হয়তো আরও শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। কিন্তু সেই দিন আজও আসেনি। পঞ্চানন যখন পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস করান, তখন স্কুলের বাকি পড়ুয়ারা হয় নির্বাক শ্রোতা নয় পার্শ্বস্থিত একটি মাঠে খেলাধুলো করে তাঁরা। তৈরি হওয়ার পর থেকে এই ভাবে চলছে স্কুলের কারবার। মাঝে এক জন অতিথি শিক্ষক এসেছিলেন স্কুলে। কিন্তু কিছু দিনের তিনিও অবসর নেন। স্থানীয়েরা বলছেন, প্রশাসনের তরফে স্কুলের উন্নয়নে হাজার গাফিলতি থাকা সত্ত্বেও গত ন’বছরে কোনও দিন কাজে ফাঁকি দেননি পঞ্চানন। স্কুলে ক্লার্কের কাজ থেকে মাস্টারি সব তাঁকেই করতে হয়।
স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী আলফা খাতুন বলে, ‘‘শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রয়োজন আমাদের স্কুলে। একই ঘরে দুটো ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের বসতে হয়। এ ভাবে পড়াশোনা হয় নাকি!’’ অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সরস্বতী বাসকির কথায়, ‘‘মিড-ডে মিলের ঘর নেই। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা— দুপুর বেলা গাছ তলায় বা খোলা মাঠে বসে খেতে হয় আমাদের। একটি ঘর তৈরির কাজ শুরু হলেও তা আজও শেষ হয়নি।’’
পঞ্চানন বলছেন, “একটা ঘরে দুটো ক্লাস চালানো খুব সমস্যার। ধরুন পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস চললে অষ্টম শ্রেণির বাচ্চারা নির্বাক শ্রোতা। ওইটুকু সময় ওরা মাঠে খেলে আসে। এ ভাবেই চারটি ক্লাসের পড়াশোনা হয় এখানে। শুধু তাই নয়, স্কুলের অন্য কাজও করতে হয় আমাকে। সরকারের কাছে আবেদন, একটু গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষক আর ক্লার্ক নিয়োগ করা হোক স্কুলে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy