বিনিময়ে কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের কমিশন। নিজস্ব চিত্র।
ধান ফড়ের এবং তা বিক্রি থেকে ‘লাভ’ও ফড়ের। শুধু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট কৃষকের। এমনই ‘বন্দোবস্তে’ সরকারি ধান বিক্রি কেন্দ্রে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে ‘ফড়ে-রাজ,’ অভিযোগ জলপাইগুড়িতে।
যে কৃষকেরা ধান নিয়ে সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে না গিয়ে খোলা বাজারে ধান বিক্রি করছেন, তাঁদের একাংশের নথিপত্র, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ধান বিক্রি করছে ফড়ের দল। তার বিনিময়ে ওই কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের কমিশন।
জলপাইগুড়ির ধাপগঞ্জের কৃষক নারায়ণ মণ্ডল মঙ্গলবার দাবি করেন, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ভাড়া’ নিয়েছে ফড়েরা। তিনি বলেন, “আমিও ধান চাষ করেছি। কিন্তু সরকারি কেন্দ্রে বিক্রি করব না। আমার অ্যাকাউন্ট আর কাগজ অন্য লোককে দিয়েছি। সে আমাকে কিছু টাকা দেবে।” ওই গ্রামেরই বিষ্ণু রায়, যাদব মণ্ডল, গোপাল পালেরা এখন মাঠ থেকে ধান তুলে এনে ঘরে রাখছেন। সকলেরই দাবি, সরকারি কেন্দ্রে তাঁদের নাম নথিভুক্ত আছে। কিন্তু ধান নিয়ে কেউই যাবেন না সরকারি কেন্দ্রে। তাঁদের অ্যাকাউন্ট ‘অন্য’ লোককে দেওয়া আছে।
খোলা বাজারের চেয়ে সরকারি কেন্দ্রে তো বেশি দাম দিচ্ছে! তার পরেও কেন কৃষকেরা ফড়েদের প্রস্তাবে রাজি হচ্ছেন? এ প্রশ্ন করায় জবাবে নারায়ণ মণ্ডল বললেন, “সরকারি কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার অনেক অসুবিধে। বিক্রির জন্য অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়। সরকারি কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার খরচ রয়েছে। কেন্দ্রে কিছু ধান ওজন থেকে বাদ যায়। বিক্রির পরে টাকা পেতেও সমস্যা হয়।” অন্য দিকে, বিষ্ণু রায় বললেন, “আমি তো এখন ধান বিক্রি করব না, সেই শ্রাবণ মাসে করব। এখন আলুর চাষের জন্য টাকা লাগবে।” ফড়ের দল নগদ টাকা নিয়ে আলু চাষের আগে কৃষকদের বাড়ি-বাড়ি ঘুরছে। টাকার বিনিয়মে কৃষকের থেকে নাম রেজিস্ট্রেশনের নথি এবং অ্যাকাউন্ট ‘ভাড়া’ নিচ্ছে।
সরকারি কেন্দ্রে নাম নথিভুক্ত করাতে কৃষকের নথির প্রয়োজন হয়। সে সময়ে কৃষকের পরিচয়পত্র যাচাই করা হয় ধান বিক্রয় কেন্দ্রে। মিলিয়ে দেখা হয়, যিনি নাম লেখাতে এসেছেন আর যাঁর নামের কাগজপত্র জমা দেওয়া হচ্ছে সেগুলি একই ব্যক্তির কিনা! কিন্তু ধান বিক্রির সময়ে পরিচয়পত্র যাচাই করা হয় না বলে অভিযোগ। সেই সুযোগেই ‘উদো’র কাগজ নিয়ে ‘বুধো’ ঢুকে পড়ছেন বলে অভিযোগ।
এক ব্যবসায়ীর মন্তব্য, “সব কৃষকের পক্ষে ভ্যান বা ট্রাক্টর ভাড়া করে ধান সরকারি কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সে ধান আমরা সরকারি কেন্দ্রে বিক্রি করিয়ে দিই। তার বদলে কিছু টাকা নেওয়া হয়। এতে কৃষকদের সুবিধেই হয়।” এই প্রবণতা বেআইনি বলে দাবি। কৃষকের ধান কৃষকেই বিক্রি করতে হবে বলে সরকারি নির্দেশিকা রয়েছে। খোলাবাজার থেকে কম দামে কৃষকের ধান কিনে সরকারি কেন্দ্রে এসে মুনাফা কামাচ্ছে ফড়েরা, অভিযোগ।
জেলার খাদ্য নিয়ামক রিনচেন শেরপা বলেন, “প্রতিটি ধান ক্রয় কেন্দ্রে পরিদর্শন চালানো হচ্ছে। ফড়েরা যাতে ঢুকতে না পারে তা নিশ্চিত করতে কৃষকদের পরিচয়পত্র দেখা হবে, হচ্ছেও।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy