Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

ভিটেহারা হওয়াই ভয়

এনআরসি নিয়ে পরিজন, প্রতিবেশীদের কানাঘুঁষো অসুস্থ সোলেমানের কানে পৌঁছানোয় উদ্বেগেই ছিলেন তিনি বলে দাবি পরিজনদের। শুক্রবার সকালে বাড়িতেই মারা যান সোলেমান সরকার (৬০)।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

বাপি মজুমদার
হালিমপুর শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৫:২৪
Share: Save:

দুই ছেলের কাছে কিছু দিন ধরেই খোঁজখবর নিচ্ছিলেন, সব নথিপত্র ঠিকঠাক রয়েছে কি না। ভোটার কার্ড, রেশন কার্ডে কিছু ভুল ছিল, তা ঠিক করা হয়েছে বলে বাবাকে জানিয়েওছিলেন। শ্বাসকষ্ট ও হার্টের রোগী বাবাকে এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে বারণও করেছিলেন দুই ছেলে। কিন্তু একসময় ওপার বাংলা থেকে উত্তর দিনাজপুরের হালিমপুরে এসে বসবাস শুরু করা সোলেমান সরকারের উদ্বেগ তাতে কমেনি। এনআরসি নিয়ে পরিজন, প্রতিবেশীদের কানাঘুঁষো অসুস্থ সোলেমানের কানে পৌঁছানোয় উদ্বেগেই ছিলেন তিনি বলে দাবি পরিজনদের। শুক্রবার সকালে বাড়িতেই মারা যান সোলেমান সরকার (৬০)। একে অসুস্থ ছিলেন, তার পাশাপাশি এনআরসি নিয়ে উদ্বেগের জেরেই সোলেমানের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এনআরসি হলে নিজের পাশাপাশি পরিবারের লোকজনদের ঘরছাড়া হওয়ার দুঃশ্চিন্তায় মুষড়ে পড়া সোলেমান সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না পেরে তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও।
উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার ব্লকের জয়হাট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত এলাকা হালিমপুর। ১৯৬৫ সালে ওপার বাংলা থেকে সেখানে এসে বসবাস শুরু করেন সোলেমান! কৃষিকাজ করেই সংসার চালাতেন। স্ত্রী সুফিয়া সহ রয়েছে দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। মেয়েরা বিবাহিত। বড় ছেলে সাইফুল আলি দিল্লিতে, ছোট সেলিম সরকার কলকাতায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। পারিবারিক অবস্থা তেমন স্বচ্ছ্ল নয়।

পলেস্তরা না করা ইটের দেওয়ালে টিনের ছাউনি দেওয়া ঘর। তবে স্বচ্ছলতা না থাকলেও এলাকার বাসিন্দারা সোলেমানকে বিপদে আপদে তার শরনাপন্ন হতেন। যে কারও বিপদে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়তেন বলে প্রতিবেশীদের সূত্রেই জানা গিয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি হৃদরোগেও ভুগছিলেন তিনি। তার মধ্যেই কারও কোনও সমস্যা হলে তিনি ছুটে যেতেন। কিন্তু অসমে এনআরসি চালু হওয়ার পর সব শুনে উদ্বেগে ছিলেন সোলেমান। ৭১ সালে বাড়ি বা জমির কোনও নথিপত্র না থাকলে এ রাজ্যে থাকা যাবে না, এমন কথাবার্তা তার কানেও কানাঘুঁষো পৌঁছেছিল। তারপর দিন পাঁচেক ধরে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন সোলেমান। এদিন সকালে তার মৃত্যুর পর বাসিন্দারা ভেঙে পড়েন তার বাড়িতে। পরিবারের লোকজনদের পাশাপাশি প্রতিবেশীরাও জানালেন, সোলেমানকে এনআরসি নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি আশ্বস্ত হতে পারেননি তা তার চোখমুখ দেখেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল।
বিকেলে যানাজার পর সোলেমানকে গোরস্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় ছোট ছেলে সেলিম সরকারও বলেন, বাবা নথিপত্র ঠিক রয়েছে কি না খোঁজ নিতেন। কিন্তু ৭১ সালের আগে জমি বা বাড়ির কোনও নথিপত্র না থাকায় বাবা দুঃশ্চিন্তায় ছিলেন। সেগুলোর আমরা খোঁজ করছিলাম। অসুস্থতার মধ্যে এনআরসি নিয়ে বাবা উদ্বেগে ছিলেন বলে দাবি করেছেন দুই মেয়ে নাজমা খাতুন ও আসমা বিবিও।

স্থানীয় হালিমপুর বুথের তৃণমূল সভাপতি রবিউল ইসলাম মৃতের ভাইপো। তিনিও দাবি করেছেন, কাকা অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু এনআরসি নিয়ে অনেকে উদ্বেগে রয়েছেন! অসুস্ত শরীরে কাকা সেই উদ্বেগ কাটিয়ে উঠতে পারলেন না।

ইটাহার পঞ্চায়েত সমিতির দলনেতা নজিবর রহমানও বলেন, এনআরসি নিয়ে উদ্বেগেই সোলেমান মারা গিয়েছেন। বিষয়টি বিধায়ক অমল আচার্য়কে জানিয়েছি। পরিবারটির পাশে প্রশাসন যেন দাঁড়ায় সেই আবেদনও বিধায়ককে জানিয়েছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

NRC North Dinajpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy