—প্রতীকী চিত্র।
অপর্ণা বর্মণের বাড়ি কি এটা? কেউ কাছে আসছেন না। দূর থেকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারায় জানালেন এটাই তাঁর বাড়ি। কিন্তু বাড়িতে কেউ নেই। তালা। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে বাড়িতে তালা দিয়ে কোথায় চলে গেলেন অপর্ণা!
ভাল করে কথা বলতে চাইছেন না পড়শিরা। থমথমে এলাকায় বাইরের লোক দেখে আরও যেন নিজেদের গুটিয়ে নিতে চাইছেন তাঁরা। শেষে এক যুবক একটু আড়ালে ডেকে গিয়ে বললেন, ‘‘২০১৮ সালে কেউ ভোট দিতে পারিনি আমরা। এখানে যা হয়, চুপচাপই হয়। কিছু দেখা যায় না।’’ অপর্ণা বাড়ি থেকে সরে থাকার সময় বিজেপির তরফেও দাবি করা হয়, এলাকায় সন্ত্রাস রয়েছে। যদিও এখন বাড়ি ফিরেছেন অপর্ণা এবং তার স্বামী সাগর। বুধবার সাগর বলেন, "আমরা এমনই বাড়ি থেকে দূরে ছিলাম।"
২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটের মতো ছবি কি এখনও রয়েছে জেলায়? সে বার ৩৫টি আসনে পুনর্নির্বাচন করাতে হয়েছিল। তপনের দ্বীপখণ্ডায় বাঁশের বাড়ি খেয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন লাইনে দাঁড়ানো ভোটার। এ বার মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন পর্যন্ত সব শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় থেকেই কি তা হলে শান্তি-শৃঙ্খলার নিরিখে একটু করে বদলাতে শুরু করেছে 'শান্তির দক্ষিণ দিনাজপুর'? বিরোধীদের দাবি তা-ই। যদিও উত্তরবঙ্গের অন্য জেলাগুলির তুলনায় কিছুটা কম। কিন্তু চাপ দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো অথবা প্রার্থীকে বাড়িছাড়া করে রাখার ঘটনার একাধিক অভিযোগ গঙ্গারামপুরের নন্দনপুর, সুকদেবপুর থেকে উঠেছে। কয়েক দিন আগেই সন্ত্রাস হচ্ছে বলে দাবি করে কয়েক জনকে ‘তাড়া’ করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বিজেপির জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরীর দাবি, "চাপা সন্ত্রাস হচ্ছেই। গঙ্গারামপুর থেকেই আমাদের অনেকে এখনও একাধিক ঘরছাড়া। এ রকম চললে, ভোটে সন্ত্রাসের আশঙ্কা থাকবে।" এ পর্যন্ত দুটি অভিযোগ দায়ের করেছে বিজেপি। বাকিগুলো করা হল না কেন? তাঁর দাবি, অভিযোগ দিতেও ভয় পাচ্ছেন প্রার্থীরা।
১,৩০৮টি পঞ্চায়েত আসনে মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাত্র ১১ জন জয়ী। ভোট ঘোষণা থেকে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি-সহ গ্রেফতার হয়েছে দুষ্কৃতীরা। জেলা পুলিশ সুপার রাহুল দে বলেন, "কিছু বোমাও উদ্ধার হয়েছে। যথেষ্ট সক্রিয় ভাবে অস্ত্র উদ্ধারে নেমেছে পুলিশ।" সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ১৩৩ জনের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে। তার পরেও আতঙ্কের অভিযোগ উঠছে কেন? পুলিশ সূত্রের দাবি, জেলায় তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর ভয় অন্য গোষ্ঠীকে। তা সব পক্ষের মাথাব্যথার কারণ। এ পর্যন্ত অস্ত্র-সহ গ্রেফতার হয়েছে 'ভাড়াটে সেনারাই, যারা টাকার বিনিময়ে যখনতখন, যে কারও বিরুদ্ধে খেলতেনামতে পারে।
এ রকম 'ভাড়াটে'দের হাতেই এখনও অস্ত্র রয়েছে বলেই দাবি বাম-কংগ্রেসের। দুই দলের নেতাদের দাবি, বংশীহারি, হরিরামপুরে ভয় দেখিয়ে তাদের কিছু প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য করানো হয়েছে। তার পরেও ‘চাপা হুমকি’ চলছে। তৃণমূল থেকে কংগ্রেসে গিয়ে দাঁড়ানো জেলা পরিষদ প্রার্থী সরফরাজ আলি নিরাপত্তার আবেদনও করেছেন। বামেরা কিছু লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু পঞ্চায়েত স্তরে বামেরা ৫০ শতাংশের কিছু বেশি আসনে, কংগ্রেস মোটামুটি ৩০ শতাংশ আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক নারায়ণ বিশ্বাস এবং কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অঞ্জন চৌধুরীর দাবি, জেলায় প্রচুর অস্ত্র রয়েছে। উদ্ধারে জোর দিতে হবে। জেলা নির্বাচন আধিকারিক তথা জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণ বলেন, "অভিযোগ পেলেই ২৪ ঘন্টায় নিষ্পত্তি হচ্ছে। অবাধ, নিরপেক্ষ ভোট করাতে যা করা দরকার, সবই করা হচ্ছে।"
তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃনাল সরকার অবশ্য বলেন, ''দু'-একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা, আর বিরোধীদের মনগড়া গল্প ছাড়া, কিছু নেই। ঢেলে উন্নয়ন করেছে সরকার। শাসক দল সন্ত্রাস করে কেন ভোট ভেস্তে দেবে?" কিন্তু ভোটের দিন সেই 'ঢালাও উন্নয়ন' রাস্তায় ঘুরে চোখ রাঙাবে কি না, কপালের ভাঁজে চিন্তাবিরোধীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy