Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

কৃষ্ণভক্তদের জল সাকিবের

জন্মাষ্টমী উপলক্ষে এদিন পুরাতন মালদহের বাচামারি পালপাড়া রাধাগোবিন্দ মন্দিরের তরফে আয়োজন করা হয়েছিল নগর সংকীর্তন এর মাধ্যমে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার। শোভাযাত্রায় ছিল সুসজ্জিত একটি রথও।

মিলেমিশে: মির্জাপুর মোড়ে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রায় পানীয় জল বিলি করছেন সফিকুল ইসলাম, মহম্মদ সাকিব, মহম্মদ জসিমুদ্দিনরা। নিজস্ব চিত্র

মিলেমিশে: মির্জাপুর মোড়ে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রায় পানীয় জল বিলি করছেন সফিকুল ইসলাম, মহম্মদ সাকিব, মহম্মদ জসিমুদ্দিনরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
পুরাতন মালদহ শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৯ ০৫:১৮
Share: Save:

জন্মাষ্টমীর উৎসবকে ঘিরে সম্প্রীতির আবহে মাতল পুরাতন মালদহ। শুক্রবার সকালে এই উৎসব উপলক্ষে পালপাড়া থেকে বের হওয়া বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ভক্তদের জয় রাধে ও শ্রীকৃষ্ণ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে যখন মির্জাপুর মোড়ে পৌঁছয়, তখন রাস্তার পাশেই থাকা পাড়াসামণ্ডি দরগা মসজিদে জুম্মাবারের নমাজের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলেন মহম্মদ সাকিব, মহম্মদ জসিমুদ্দিন, ইব্রাহিম শেখরা। হাজারো মানুষের সেই শোভাযাত্রা যখন মসজিদের কাছে আসে, তখন মসজিদের বাইরেই পেতে রাখা টেবিল থেকে পানীয় জলের বোতল ও চকোলেট নিয়ে কয়েকশো কৃষ্ণ ভক্তের তেষ্টা মেটালেন সাকিব ও ইব্রাহিমরা। যা দেখে-শুনে সেই শোভাযাত্রাতেই অংশ নেওয়া এলাকার সাংসদ, বিধায়ক, পুরপ্রধানরাও খুশি। সাংসদ বললেন, ‘‘আমাদের ঐতিহ্যবাহী এই সম্প্রীতি যেন অটুট থাকে।’’

জন্মাষ্টমী উপলক্ষে এদিন পুরাতন মালদহের বাচামারি পালপাড়া রাধাগোবিন্দ মন্দিরের তরফে আয়োজন করা হয়েছিল নগর সংকীর্তন এর মাধ্যমে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার। শোভাযাত্রায় ছিল সুসজ্জিত একটি রথও। সামনের সারিতে খোল-করতাল নিয়ে চলছিল নাম সংকীর্তন। আর শোভাযাত্রার পিছন দিকে ছিল সাউন্ডবক্সে বাজানো হচ্ছিল ভক্তিগীতির সুর। মাঝে ছিলেন হাজারেরও বেশি ভক্ত। কারও মুখে শ্রীকৃষ্ণের স্লোগান, কারও বা গলায় শ্রীকৃষ্ণের নামাঙ্কিত উত্তরীয়, আবার কারও হাতে উড়ছিল শ্রীকৃষ্ণ নামের পতাকাও। পালপাড়া থেকে নতুনপল্লি, সারদাপল্লি, খইহাট্টা, ঘোষপাড়া, মঙ্গলবাড়ি, বাঁধরোড হয়ে সেই শোভাযাত্রা ফের শেষ হয় পালপাড়াতেই। মির্জাপুর মোড়ে এই ভিন্ন মাত্রা পেল সম্প্রীতির আবহে।

কেমন?

পুরাতন মালদহ পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সফিকুল ইসলাম সহ স্থানীয় বেশ কয়েক জন যুবক বৃহস্পতিবার রাতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাঁরা শ্রীকৃষ্ণ ভক্তদের জল ও চকলেট বিলি করবেন। যেমন সিদ্ধান্ত, তেমনই কাজ। এ দিন সকাল সাতটার আগেই মির্জাপুর মোড়ে থাকা পাড়াসামণ্ডি দরগা মসজিদের সামনে চলে এসেছিলেন তাঁরা। মসজিদের সামনে পাতা হয় প্লাস্টিকের কয়েকটি টেবিল। তার উপর রাখা হয় কয়েকশো জলের বোতল। সকাল সাড়ে ন’টার দিকে বিশাল ওই শোভাযাত্রা যখন মসজিদের কাছে আসে তখন সফিকুল, সাকিব, জসিমুদ্দিনরা কৃষ্ণভক্তদের মধ্যে সেই জলের বোতল ও চকলেট তুলে দেন। ক্লান্ত কৃষ্ণভক্তরা ওই জল দিয়েই তেষ্টা মেটান। বাচামারি পালপাড়ারই এক কৃষ্ণভক্ত রাধারানি হালদার বলেন, ‘‘সম্প্রদায় বুঝি না। এক জন মানুষ আমায় জল দিলেন। তা দিয়ে আমার তৃষ্ণা মেটালাম। এটাই বড় কথা।’’ কাউন্সিলর সফিকুল বলেন, ‘‘কয়েক হাজার মানুষ এই গরমে প্রায় ছয় থেকে সাত কিলোমিটার পরিক্রমা করেন। তাই তাঁদের জলদান করেছি।’’ বিধায়ক ভূপেন্দ্রনাথ হালদার বলেন, ‘‘সম্প্রীতি আজ প্রশ্নের মুখে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মুসলিমদের এই জলদান কর্মসূচি সম্প্রীতির একটা ভাল বার্তা দিল।’’ পুরপ্রধান কার্তিক ঘোষ বলেন, ‘‘সম্প্রীতি রক্ষার এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানাই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Janmashtami Hindu Muslim Pilgrim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy