সিকিম থেকে তিস্তায় ভেসে আসা বিস্ফোরক খুঁজে ফাটিয়ে দিলেন সেনা জওয়ানেরা। মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির তিস্তার পারে। ছবি: সন্দীপ পাল।
সবুজ ধান খেতের আলবাঁধে পড়ে আছে রকেট লঞ্চারের শেল, কয়েক পা এগোলে আলু চাষের জন্য ফেলে রাখা জমিতে শুয়ে আছে বিশাল বফর্স চার্জার, কংক্রিটের রাস্তার পাশে পড়ে গ্রেনেডের মতো বিস্ফোরক। জলপাইগুড়িতে তিস্তার পার যেন যুদ্ধক্ষেত্র। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেখানে এসেছে সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞদের বাইশটি দল। গজলডোবা থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত তিস্তার পারে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য বিস্ফোরক ফাটিয়ে নিষ্ক্রিয় করছে তারা। কোথাও গর্ত খুঁড়ে সেখানে বিস্ফোরক ঢুকিয়ে, কোথাও বালির বস্তা চাপা দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠছে নদীপার, ঝলকে ওঠা আগুনে পুড়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকার ধানখেত।
মঙ্গলবার সকাল থেকে জলপাইগুড়ির তিস্তাপারে অন্তত ২০টি জায়গায় শতাধিক বিস্ফোরক ফাটানো হয়েছে। এগুলি সবই হড়পা বানে সিকিম থেকে ভেসে এসেছে। পুলিশ সূত্রের দাবি, কত বিস্ফোরক ভেসে এসেছে এবং কতটুকু উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে তার কোনও আন্দাজ সেনাবাহিনীর তরফে দেওয়া হয়নি।
তিস্তায় ভেসে আসা দুটি রকেট লঞ্চার কিনে গুদামে রাখার অভিযোগে উত্তর সুকান্তনগরের এক বাসিন্দাকে আটক করেছে পুলিশ। বিপর্যয়ের পরে ওই এলাকার এক ব্যক্তিকে দু’টি রকেট লঞ্চারের শেল নিয়ে ঘুরতে দেখা যায়। তার পরে, ওই ব্যক্তির সঙ্গে শেল দু’টি আর দেখা যাচ্ছিল না বলে দাবি। খবর পেয়ে পুলিশ এসে জেরা করতেই ওই ব্যক্তির দাবি, তিনি এলাকার বাসিন্দা লোহালক্কড়ের কেনাবেচা করা এক জনকে শেল দু’টি বিক্রি করেছেন। এ দিন দুপুরে পুলিশ গিয়ে তল্লাশি চালিয়ে গুদাম থেকে শেল উদ্ধার করে। ওই ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়।
গজলডোবা লকগেটে থিকথিকে পলি জমে রয়েছে। পলির নীচেও বিস্ফোরক চাপা পড়ে রয়েছে বলে এ দিন সেনার তরফে মনে করা হচ্ছে। ব্যারাজের নীচে বিস্ফোরক জমে থাকলে, তা আশঙ্কার কারণ।
জলপাইগুড়ির তিস্তাপারের সুকান্তনগর, সারদাপল্লি, বিবেকানন্দপল্লি, বালাপাড়ায় পড়ে থাকা বিস্ফোরক এ দিন ফাটিয়েছে সেনা। সে বিস্ফোরণ দেখতে বাসিন্দাদের ভিড় উপচে পড়ে। ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। সকাল থেকে দুপুর ঘনঘন বিস্ফোরণের শব্দ ভাসতে থাকে তিস্তাপারে। বিস্ফোরণের পরে হাওয়ায় বারুদের গন্ধ ছিল দীর্ঘক্ষণ। শব্দের আতঙ্কে মাঠে গবাদি পশুদের আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। তিস্তার পারে পরিযায়ী হাঁসের দল আসতে শুরু করেছে। পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগ, ঘন ঘন বিকট শব্দে শান্তিভঙ্গ হয়েছে তাদের। বাঁধের এক দিক থেকে আর এক দিকে দল বেঁধে উড়ে গিয়েছে পরিযায়ীর দল। তাতেও শান্তি মেলেনি, তিস্তার পারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শেল, মর্টার ফেটেছে সব দিকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy