অন্য প্রথা: বিয়ের আসরে মেয়ে-জামাইয়ের সঙ্গে সুমনা।
মহিলারা কেন স্কুলের সরস্বতী পুজোয় ‘পুরোহিত’ হতে পারবেন না— এই প্রশ্ন তুলে গত বছর এক মহিলাকে দিয়েই সরস্বতী পুজো করিয়েছিলেন জলপাইগুড়ির বিবেকানন্দ স্কুলের একদল শিক্ষিকা। সেই দলে থাকা এক শিক্ষিকা এ বার পুরোহিতের পাশে বসে বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণ করে আদায় করে নিয়েছে মেয়েকে সম্প্রদান করার ‘অধিকার’ও।
সপ্তাহকয়েক আগের কথা। জলপাইগুড়ির তিস্তা পর্যটন আবাসে মেয়ের বিয়ের আয়োজন হয়েছিল নিয়ম-রীতি মেনেই। আগে থেকে কোনও ঢক্কানিনাদ ছিল না। কিন্তু, ছাদনাতলার দৃশ্যপট অন্যরকম ভাবে পরিকল্পনা করা ছিল শহরের কেরানিপাড়ার সরকার পরিবারের। মেয়েকে হবু জামাইয়ের হাতে ‘সম্প্রদান’ করতে পিঁড়িতে বসেছিলেন মা। সাধারণত নববধূর বাবা অথবা মামা এই কাজটা করে থাকেন। পুরোহিত দর্পণে তেমনটারই উল্লেখ রয়েছে বলে দাবি করা হয়। বৈদিক মন্ত্রে বিয়ে হয়। সেই সব মন্ত্র উচ্চারণ করেন পুরোহিত, পাত্র, এবং কন্যা সম্প্রদানকারী। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী ছাদনাতলায় বসে থাকা নববধূর উচ্চারণের জন্য কোনও মন্ত্র নেই। গত ১৭ জানুয়ারি জলপাইগুড়ির তিস্তা পর্যটন আবাসের তৈরি ছাদনাতলার ধারে পিঁড়িতে বসে বাংলার শিক্ষিকা সুমনা ঘোষদস্তিদার সরকার উচ্চারণ করেছেন, “ওং, যথাবিহিতং বিবাহ কৰ্ম্ম কুরু...।” সেই মন্ত্র পুনরাবৃত্তি করলেন তাঁর হতে চলা জামাই। নব বর-বধূর চার হাত এক করে সুতো দিয়ে বেঁধে দিয়েছেন মা।
সুমনার কথায়, “কোনও রকম বৈপ্লবিক কিছু করেছি বলে মনে করি না। গর্ভে ধারণ করা মেয়েকে তো সব থেকে বেশি ভালবেসে আর্শীবাদ করতে পারি আমিই। সেই অধিকারটুকুই পালন করেছি মাত্র।”
মেয়েকে সম্প্রদান করবেন মা, সে কথা শুনে নানা জনে নানা মত দেবেন— সেটা ধরেই নিয়েছিল সরকার পরিবার। সুমনা জানাচ্ছেন, মেয়েকে সম্প্রদানের অধিকার ‘আদায়’ করার লড়াইয়ে স্বামীকে পাশে পেয়েছিলেন। যা ‘বড় প্রাপ্তি’ বলেই মনে করেন সুমনা। বনেদি ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে সুমনার স্বামী জয়ন্ত বলেন, “আমি এতে অন্যায় বা অসম্ভব কিছুই দেখিনি। মেয়েদের ছোটবেলার পড়াশোনা থেকে সব কিছু তো ওর মা-ই নজর রেখেছেন। তা হলে সম্প্রদানেই বা ব্যতিক্রম হবে কেন?”
কোচবিহারের সুনীতি অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষিকা তথা কবি মণিদীপা নন্দীবিশ্বাস বলেন, “আশির দশকে আমার এক সহকর্মীর বিয়েতে মায়ের সম্প্রদান দেখেছিলাম। তার পর আর বিশেষ শুনিনি। আমার সম্পূর্ণ সমর্থন এবং শুভকামনা রয়েছে মায়েদের সম্প্রদানে। মা-বাবা উভয়েরই তো সন্তানের প্রতি সমান অধিকার আছে।”
মহিলারা এখন পুজোও করছেন। এই দুই ঘটনাকে মেয়েদের বঞ্চিত করার বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদও মনে করেন মণিদীপা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy