Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

বড়রা কর্মহীন, কাজে পাঠানো হচ্ছে ছোটদের

নোট বাতিলের জেরে বাড়ির বড়দের বেশিরভাগ কর্মহীন হয়ে পড়াতেই উত্তর দিনাজপুর জেলার ১২ শিশু-কিশোর দালালের হাত ধরে কলকাতা পাড়ি দিচ্ছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:২১
Share: Save:

নোট বাতিলের জেরে বাড়ির বড়দের বেশিরভাগ কর্মহীন হয়ে পড়াতেই উত্তর দিনাজপুর জেলার ১২ শিশু-কিশোর দালালের হাত ধরে কলকাতা পাড়ি দিচ্ছিল।

বুধবার গভীর রাতে মালদহ টাউন স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস থেকে উত্তর দিনাজপুর জেলার যে ১২ জন শিশু-কিশোরকে উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁদের কাউন্সেলিং করে এমনই তথ্য পেয়েছে মালদহ জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি। শুধু তাই নয়, তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন স্কুল ও মাদ্রাসার পড়ুয়াও রয়েছে। যাঁরা বর্তমান পরিস্থিতিতে সংসারের হাল সামাল দিতেই লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে কলকাতায় রেডিমেড জামাকাপড় তৈরির কারখানায় কাজ করতে যাচ্ছিল। শুক্রবার বিকেলে ওই ১২ জনকে পুলিশ এসকর্ট দিয়ে মালদহ থেকে উত্তর দিনাজপুর জেলার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে. ওই কমিটিই তাঁদের পরিবারের হাতে তুলে দেবে।

মালদহ চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন চৈতালী সরকার বলেন, বুধবার রাতে উদ্ধারের পর ওই ১২ জনকে হোমে রেখা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার দিনভর সংস্থার কাউন্সিলাররা ওই ১২ জনের সঙ্গেই আলাদা-আলাদা ভাবে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘উঠে এসেছে যে, নোট বাতিলের পর থেকে ইসলামপুর থানার ওই গ্রামগঞ্জগুলির প্রচুর মানুষ কাজ পাচ্ছেন না। যাঁদের মধ্যে ওই কিশোরদের পরিবারের লোকজনও রয়েছেন। কর্মহীন হয়ে পড়ায় তাঁরা কিছুটা টাকার আশায় আইন-কানুন ভুলেই বাড়ির ছোট ছোট ছেলেদের কাজ করতে দালালের মারফত কলকাতায় পাঠাচ্ছিল।’’

অথচ ওই শিশুদের এই সময় বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করার কথা। তাঁদের অনেকে স্কুলেও পড়ে। বিষয়টি স্পর্শকাতর। তাঁরা উত্তর দিনাজপুর জেলার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিকে বলেছেন, ওই শিশুদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার পরেও তাঁদের উপরে খোঁজ রাখতে। মালদহের শিশু সুরক্ষা আধিকারিক অরুণায়ন শর্মা বলেন, ‘‘বেশ কিছু দিন ধরেই শিশুদের শ্রমিকের কাজ করাতে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এ বার যে ১২ জন উদ্ধার হল, তাদেরও কাজের জন্যই নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।’’ তিনি জানান, আসলে, কারখানায় বড়দের দিয়ে কাজ করালে মজুরি বেশি দিতে হয়। সেখানে নাবালকদের মাসে খাওয়া-দাওয়া দিয়ে হাতে আড়াই-তিন হাজার টাকা ধরিয়ে দিলেই হল। তা ছাড়া শিশুগুলিকে যেহেতু বাইরের জেলা থেকে নিয়ে যাওয়া হয়, সে কারণে তাঁদের কারখানার কাছাকাছি রেখেই বেশি সময় ধরে খাটিয়ে নেওয়া যায়। এ নিয়ে আরও সচেতনতা প্রয়োজন। মালদহ জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক অসীম রায় বলেন, ‘‘এই ঘটনা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। এখন থেকে স্টেশনে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।’’

এ দিকে, মালদহ জেলা প্রশাসন ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মালদহ টাউন স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ট্রেন ও স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে একশো তিন জন শিশু-কিশোরকে উদ্ধার করা হয়েছে। স্টেশনে এই সংক্রান্ত কাজ করা চাইল্ড লাইনের কর্মীরা, কখনও জেলা সমাজকল্যাণ দফতর, এমনকী জিআরপিও তাঁদের উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে অন্তত ৬০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে যাঁদের কাজ দেওয়ার নাম করে এই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বা ভিন রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তাঁদের বয়স ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। তবে তাঁদের কাজ দেওয়ার নাম করে পাচারের ছক ছিল কি না, সে ব্যাপারে কোনও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এ বারের ১২ জন বাদ দিলে শেষ ২০১৫ সালে মালদহ টাউন স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা দিল্লিগামী ফরাক্কা এক্সপ্রেসের সাধারণ কামরা থেকে একসঙ্গে ২৫ জন শিশু-কিশোরকে উদ্ধার করেছিল জেলা শিশু সুরক্ষা কেন্দ্র।

অন্য বিষয়গুলি:

demonetisation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy