উজ্জ্বল: রেজিনা খাতুন।
বছর খানেক আগে মেয়ের বিয়ে দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন হায়দর মিয়াঁ। কিন্তু শিক্ষকদের কথায় শেষপর্যন্ত পিছিয়ে যান। বাড়িতে তাঁর অভাব নিত্যসঙ্গী। তবু এরপর আর মেয়ের লেখাপড়া থামাননি বাবা।
বাবার মান রেখেছেন মেয়ে। এবছর উচ্চ মাধ্যমিকে কলা বিভাগে ৪৮৭ নম্বর পেয়ে সসম্মানে উত্ত্ীর্ণ হয়েছেন রেজিনা খাতুন। বাংলায় পেয়েছেন ৯৮, ইংরেজিতে ৮৬, দর্শন শাস্ত্রে ৯৮ , ইতিহাসে ৯৫ , ভূগোলে ৯৮ এবং সংস্কৃতে ৯৮। দিনহাটা-১ ব্লকের পেটলা নবিবক্স হাইস্কুল থেকে পরীক্ষা দেন রেজিনা।
ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যকর্মী হতে চান তিনি। বর্তমানে করোনা সংক্রমণে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে মানুষ। স্বাস্থ্যকর্মীরা দিনরাত কাজ করে চলছেন। আগামী দিনে তাই স্বাস্থ্যকর্মী হয়ে মানুষের সেবা করতে চান রেজিনা। শনিবার জামাদরবস গ্রামে ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর উচ্চশিক্ষার যাতে কোনও অসুবিধা না সেদিকে লক্ষ্য রেখে পাশে থাকার আশ্বাস দেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহ অন্যেরা।
গত বছর একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন রেজিনা। তখনই মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল পরিবার। এ কথা জানাজানি হতেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক উদয় ভট্টাচার্য হায়দার মিয়াঁকে স্কুলে ডেকে পাঠান। শান্ত স্বভাবের রেজিনা পড়াশোনাতেও বেশ ভাল। মেধাবী রেজিনা যাতে আরও পড়াশোনা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে স্কুলের পক্ষ থেকে তাঁর বাবাকে উৎসাহিত করা হয়। তারপর থেকেই শুরু হয় রেজিনার নতুন লড়াই।
রেজিনারা তিন ভাই, এক বোন তাঁরা। মা দোলেনা বিবি গৃহবধূ। রেজিনার বাবা হায়দার বলেন, ‘‘পেটলার জামাদরবস এলাকায় একটি ছোট ইটভাটা রয়েছে। সেখানেই আমি শ্রমিকের কাজ করি। সামান্য মজুরি দিয়ে কোনওরকমে দিন চলে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে ভেবেছিলাম মেয়ের বিয়ে দেব। কিন্তু শিক্ষকেরা আমাকে নানা ভাবে আশ্বস্ত করেন।’’ তবে মেয়ে ভাল ফল করলেও উচ্চশিক্ষা নিয়েও চিন্তিত বাবা। পড়াশোনার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। কোথা থেকে সেই টাকা জোগাড় হবে তা নিয়েও সংশয়ে তিনি।
রেজিনা বলেন, ‘‘স্কুলের শিক্ষকদের পাশাপাশি গৃহশিক্ষকেরাও সহযোগিতা করেছেন।’’ তিনি বলেন, ‘‘ ফল কিছুটা ভাল হওয়ায় নার্সিং এ সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই সুবিধা হবে। সে ক্ষেত্রে মানুষের পাশে থেকে যেমন স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া যাবে তেমনি বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটানো যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy