এমন রাস্তার জন্য গ্রামে সামাজিক অনুষ্ঠান হচ্ছে না বলে অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র।
রাস্তার এক ধারে কচুবন। অন্য দিকে, পর পর বাড়ি। রাস্তা অবশ্য যাকে বলা হচ্ছে সেটি আদতে কিছু বড় বড় গর্ত এবং তার পাশ দিয়ে সরু হয়ে চলে যাওয়া একটা আলপথের সমাহার। এই রাস্তার জন্য যত অসুবিধা দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনের মালঞ্চা গ্রাম পঞ্চায়েতের চামটাকুড়ি সুন্দরী মোড় থেকে ধুন্দিপাড়ার বাসিন্দাদের। শুধু রাস্তা খারাপ বলেই গ্রামের মেয়েদের বিয়ে দিতে অসুবিধা হচ্ছে। কথাবার্তা এগিয়েও শেষ মুহূর্তে দু’টি বিয়ে বাতিল করে দিয়েছে পাত্রপক্ষ। কোনও সামাজিক অনুষ্ঠান হলে অন্য গ্রামের বাসিন্দারা এখানে আসেন না কেবল রাস্তার কথা ভেবে। এই অবস্থায় অবিলম্বে রাস্তার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছেন স্থানীয়েরা। তাঁদের অভিযোগ, কেন্দ্র বা রাজ্য কোনও সরকারি প্রকল্পের তালিকায় এই সাত কিলোমিটার রাস্তার জায়গা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা কিংবা পথশ্রী প্রকল্পে কেন এই রাস্তাটুকুর জায়গা হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়েরা।
অবিলম্বে পাকা রাস্তা করে দিতে হবে, এই দাবিতে বৃহস্পতিবার পথ অবরোধ করে বিক্ষোভে শামিল হন শতাধিক গ্রামবাসী। তাঁদের অভিযোগ, বার বার বলার পরেও প্রশাসনের তরফে কোনও পদক্ষেপ দেখা যায়নি। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে চলাফেরাই দায় হয়ে উঠেছে। কিন্তু, কেন রাস্তার সংস্কার হচ্ছে না, সে নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়াও পাচ্ছেন না তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দা সুবল মাহাতোর কথায়, ‘‘আমাদের এই রাস্তা এখন জমির আলে পরিণত হয়েছে। রোগীকে নিতে এলাকায় অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকতে চায় না। ছোট গাড়ি ভাড়া করলে ভাড়া বাতিল করে দেন চালক।’’ তিনি জানান, এই অবস্থায় খাটিয়া করে রোগীকে কাঁধে নিয়ে চামটাকুড়ি সদর রাস্তার মোড়ে পৌঁছোতে হয়। রাস্তার খানাখন্দের ভয়ে শিশুদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পান অভিভাবকেরা। আর বর্ষার সময় তো কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানই করতে পারেন না গ্রামবাসীরা। বাংলার জ্যৈষ্ঠ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলতে হয় শুধু রাস্তার জন্য।
সুন্দরী মোড় এলাকার বাসিন্দা উৎপল বর্মণ বলেন, ‘‘শুধু রাস্তা খারাপ বলে আমার গ্রামের দু’জনের বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ করতে হয়েছে। দিন ক্ষণ ঠিক করার পরেও পাত্রপক্ষ বিয়ে বাতিল করে দেয়। কারণ, বরের গাড়ি আমাদের গ্রাম পর্যন্ত ঢুকতেই পারবে না।’’ গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, রাস্তার জন্য লজ্জায় পড়তে হয় তাঁদের। আত্মীয়েরা বাড়ি আসতে চান না, ওই রাস্তা পার হতে হবে বলে। উৎপল জানান, বার বার প্রশাসনের কাছে দরবার করেছেন তাঁরা। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। তাই পথের দাবিতে বিক্ষোভই একমাত্র পথ।
এই সমস্যার কথা শুনে তপনের যুগ্ম বিডিও জয়ন্ত পাঠক বলেন, ‘‘রাস্তাটি যে বেহাল, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। অনেক আগেই ওই রাস্তার জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘গ্রামবাসীরা যে ভাবে রাস্তা চাইছেন, তা পঞ্চায়েত সমিতির বা স্থানীয় পঞ্চায়েতের পক্ষে করা সম্ভব নয়। এর আগে পথশ্রী প্রকল্পে যত গুলি রাস্তা নেওয়া হয়েছিল। তপন ব্লকে তা সম্পূর্ণ হয়েছে। আশা করছি, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এই রাস্তার কাজও শুরু হবে।’’ তবে রাস্তার জন্য বিয়ে বাতিলের মতো ঘটনা ঘটেছে, এমন কথা তাঁর জানা নেই বলে জানান বিডিও। তাঁর দাবি, সে ক্ষেত্রে গ্রামে ঢোকার বিকল্প রাস্তা তো আছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy