Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Drug Addiction at Malda

‘সবই পুরিয়ার জন্য!’

জেলা পুলিশের কর্তাদের দাবি, মালদহে মাদক কারবার ঠেকাতে কড়া নজরদারি চলে। সম্প্রতি কোটি টাকার মাদক ধরা পড়েছে জেলার নানা প্রান্ত থেকে।

Drugs

—প্রতীকী চিত্র। Sourced by the ABP

অভিজিৎ সাহা
  মালদহ শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:৩৩
Share: Save:

আঁচড়ানো চুল। ক্লিন শেভড। বছর পঁচিশের ছেলের চেহারা দেখে একগাল হাসি পঞ্চাশোর্ধ্ব দম্পতির। ‘‘বাবা, তোকে আর যাতে এখানে (নেশামুক্তি কেন্দ্র) নিয়ে আসতে না হয়!’’, মায়ের কথায় ঘাড় নাড়েন ছেলে। সে সময়ই দোতলার আর এক ঘর থেকে ভেসে আসে চিৎকারের শব্দ। মুহূর্তে ফ্যাকাশে হলেন আঁচড়ানো চুল, ক্লিন শেভড। বিড়বিড় করলেন ‘‘পুরিয়া! সব পুরিয়ার জন্য!’’ কিসের পুরিয়া? প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই ছেলের হাত টেনে সামনের দিকে পা বাড়ালেন দম্পতি।

কী এই ‘পুরিয়া’? আম বাগান ঘেরা নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে এলেন হাতে ট্যাটু আঁকা বছর পঁয়ত্রিশের এক যুবক। তাঁর কথায়, “পোশাকি নাম ব্রাউন সুগার (মাদক)। পুরিয়ার নেশায় আমারও সব শেষ হতে বসেছিল। কোনও রকমে পুরিয়ার ফাঁদ থেকে বেরিয়ে এসেছি। তবে দেখছি, এখন মালদহের অলিগলিতে পুরিয়ার নেশায় বুঁদ যুব সমাজের একাংশ।”

জেলা পুলিশের কর্তাদের দাবি, মালদহে মাদক কারবার ঠেকাতে কড়া নজরদারি চলে। সম্প্রতি কোটি টাকার মাদক ধরা পড়েছে জেলার নানা প্রান্ত থেকে। গ্রেফতার হয়েছে কারবারি। পুলিশ সূত্রে খবর, কালিয়াচকের মোজমপুর হোক, বা আদিবাসী প্রধান হবিবপুরের বুলবুলচণ্ডী, পুরাতন মালদহ থেকে চাঁচল, হরিশ্চন্দ্রপুর, গাজল—জেলার নানা প্রান্ত থেকে উড়ে আসে ‘বিষ’ ব্রাউন সুগারের ধোঁয়া। মাদক কারবারের আনাচ-কানাচ জানা থাকলে, হাত বাড়ালে মিলবে ব্রাউন সুগারের ‘পুরিয়া’। কোথাও তার নাম ‘পাতা’ বা ‘পয়েন্ট’।

জানা গিয়েছে, মাত্র এক গ্রাম ব্রাউন সুগার দিয়ে আট থেকে দশটি ‘পুরিয়া’ তৈরি হয়। প্রতিটি ‘পুরিয়া’ দিয়ে এক থেকে দু’বার পর্যন্ত নেশা করা যায়। প্রতি পিস ‘পুরিয়া’ মাদকের বাজারে ২০০ টাকা দামে বিক্রি হয়। এক থেকে দেড় দশক আগেও ব্রাউন সুগারের নেশা মালদহের মতো জেলায় সহজলভ্য ছিল না, দাবি নেশা থেকে বেরিয়া আসা যুবকদের একাংশের। এমনই এক জন যুবকের কথায়, ‘‘কলকাতায় পড়াশোনা করার সময় ব্রাউন সুগারের নেশায় আসক্ত হয়েছিলাম। সে সময় জেলায় ব্রাউন সুগারের চল খুবই কম ছিল। সহজে যে কেউ নাগাল পেত না। এখন হাতে হাতে ঘুরছে ব্রাউন সুগারের পুরিয়া।’’

কী ভাবে চলছে ব্রাউন সুগারের কারবার? তা জানতে কান পাততে হবে মালদহের মাদকের কালোবাজারে। পুলিশের তদন্তকারী আধিকারিকদের একাংশের দাবি, ব্রাউন সুগারের ‘বাস্তুতন্ত্রে’ একেবারে নিচুতলায় আছে ‘পেডলার’। তাদের হাতে ‘পুরিয়া’ পৌঁছে দেওয়া এবং খবরদারির কাজ করে ‘লিঙ্কম্যান’। ‘লিঙ্কম্যান’ নিজস্ব যোগাযোগের সুবাদে ‘ক্লায়েন্ট’ (খদ্দের) ধরে। এক পেডলারের কথায়, “লিঙ্কম্যানরা পুরিয়া নিয়ে আমাদের নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছতে বলে। তার পরে লোক এসে সে পুরিয়া নিয়ে যায়। আমাদের সঙ্গে লিঙ্কম্যানদের দেখা হয় না।” ‘লিঙ্কম্যানদের’ উপরে ‘সাব-ডিলার’ ও ‘ডিলার’ রয়েছে। কোনও স্তরের সঙ্গে কোনও স্তরের বিশেষ কারণ ছাড়া দেখা হওয়ার জো নেই। সিআইডির এক কর্তা বলেন, “ব্রাউন সুগারের কারবার অনেকটা পেঁয়াজের মতো। একটার পরে একটা খোসা ছড়ানো হলেও, মাথার হদিস মেলে না।” (চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Malda Rehab Center
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy