Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Bangladesh Protest

আধপেটা খেয়ে দেশে পড়ুয়ারা

রবিবার সকালে যখন তাঁরা কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে ভারতের মাটিতে পা রাখলেন, কিছুটা হলেও মুখে হাসি ফুটল।

বাংলাদেশ থেকে চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে ভারতে ফিরলেন পড়ুয়ারা। রবিবার।

বাংলাদেশ থেকে চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে ভারতে ফিরলেন পড়ুয়ারা। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র।

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৪ ০৮:৫৯
Share: Save:

কেউ দু’দিন আধপেটা খেয়ে ছিলেন। কেউ ছিলেন হস্টেলে ‘বন্দি’। রবিবার সকালে যখন তাঁরা কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে ভারতের মাটিতে পা রাখলেন, কিছুটা হলেও মুখে হাসি ফুটল। সেই সঙ্গে অবশ্য কপালে চিন্তার ভাঁজও ছিল স্পষ্ট। এ দিন সাড়ে পাঁচশো জনের বেশি ছাত্রছাত্রী ওই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফেরেন। তাঁদের অনেকেই বলেন, ‘‘এ ভাবে আসতে ভাল লাগছে না। এক দিন সময় নষ্ট হওয়া মানে পড়াশোনায় পিছিয়ে যাওয়া। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, সেটাও বুঝতে পারছি না। কলেজ থেকেও কিছু জানানো হয়নি। একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি।’’

এ দিন সকাল থেকে ওই ছাত্রছাত্রীদের জন্য সেখানে পুলিশ ও বিএসএফ কর্তারা হাজির ছিলেন। রবিবার রাতেই ভারতীয় হাই কমিশনের তরফে কোচবিহার পুলিশ-প্রশাসনকে আগাম ওই ছাত্রছাত্রীদের সম্পর্কে তথ্য জানানো হয়। এ দিন যাঁরা ফিরেছেন, তাঁদের মধ্যে মধ্যে ৩৩৮ জন ভারতীয়, ১৮৬ জন নেপালের, ২৫ জন ভুটান এবং ১ জন মালদ্বীপের নাগরিক। প্ৰত্যেক ছাত্রছাত্রীকে নিজের নিজের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে বাসের ব্যবস্থা করা হয়। এর আগেও ওই সীমান্ত দিয়ে ৪৮ জন ছাত্রছাত্রী এ দেশে এসেছেন।

এ দিন ফেরেন কাশ্মীরের অনন্তনাগের মুদা শেখ। তিনি রংপুর প্রাইম মেডিক্যাল কলেজের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র। তিনি বলেন, ‘‘আমি পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশে পড়াশোনা করছি। কখনও এমন পরিস্থিতি দেখেনি। ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাইরে কার্ফু। দোকানপাট বেশিরভাগ বন্ধ। খাবার নিয়ে সমস্যায় পড়েছিলাম। দু’দিন কার্যত না খেয়ে থাকতে হয়েছে।’’ গুজরাটের এক ছাত্রী খুশি সানালিয়া বলেন, ‘‘আতঙ্কে ছিলাম। ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। আমি রংপুর মেডিক্যাল কলেজে ছিলাম। শুনেছি কয়েক জন ছাত্রের মৃত্যুও হয়েছে আশপাশে। নিজের দেশে ফিরে নিরাপদ বোধ করছি।’’

রাচির মহম্মদ শোয়েব রংপুর কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। তাঁর কথায়, ‘‘আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পরীক্ষা রয়েছে। তার আগে পড়াশোনা প্রয়োজন। আচমকা এ ভাবে মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা হতাশ। কবে, কী ভাবে কলেজ খোলা হবে তা এখনও জানি না।’’ ওই মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী, বিহারের ফতিমা ইমানিয়াত বলেন, ‘‘অগস্ট মাসেই আমাদের পরীক্ষা হওয়ায় কথা। এই অবস্থায় কী হবে বুঝতে পারছি না।’’

কোচবিহারের পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সীমান্তে পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যে কোনও প্রয়োজনে সেখান থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।’’

ছাত্রছাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্যে কয়েকটি সরকারি বাসও রাখা হয় সেখানে। সীমান্ত থেকে ওই বাসেই এনজেপি স্টেশন পর্যন্ত সকলকে পৌঁছে দেওয়া হয়। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিগমের চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে দিকে লক্ষ্য রেখেই বাস পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE