মায়ের দেহ কাঁধে নিয়ে ছেলে। — নিজস্ব চিত্র।
হাসপাতাল থেকে মায়ের দেহ কাঁধে তুলেই বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলেন ছেলে। সঙ্গী হলেন বাবাও। বৃহস্পতিবার এই ছবি দেখা গেল জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে। যা নিয়ে দানা বেঁধেছে বিতর্ক। অভিযোগ উঠেছে, অ্যাম্বুল্যান্স চালকরা লাগামছাড়া ভাড়া চেয়েছিলেন। তা দিতে না পেরে মায়ের দেহ কাঁধে তুলে রওনা দেন ওই যুবক। যদিও পরে তাঁকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে যায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
জলপাইগুড়ির ক্রান্তি ব্লকের নগরডাঙ্গি এলাকার বাসিন্দা লক্ষ্মীরানি দেওয়ান (৭২)। তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছিল জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজে। কিন্তু হাসপাতালে মৃত্যু হয় লক্ষ্মীরানির। বৃহস্পতিবার হাসপাতাল চত্বরে দেখা যায়, লক্ষ্মীরানির ছেলে রামপ্রসাদ দেওয়ান মায়ের দেহ কাঁধে নেওয়া অবস্থায়। ওই অবস্থায় তাঁকে কিছুটা হাঁটতেও দেখা যায়। রামপ্রসাদের অভিযোগ, ‘‘মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স ৩ হাজার টাকা দাবি করেছিল। কিন্তু আমাদের পক্ষে সেই টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। বার বার ভাড়া কম নেওয়ার অনুরোধ করেছি। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্স চালকরা ভাড়া কমাতে রাজি হননি। তাই বাবা এবং আমি দু’জনে মিলে মায়ের মৃতদেহ কাঁধে করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিই।’’
বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় জলপাইগুড়ির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাঁরা অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে লক্ষ্মীরানির মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছে দেন। এ নিয়ে অবশ্য জলপাইগুড়ি জেলার অ্যাম্বুল্যান্স সংগঠনের সম্পাদক দিলীপ দাস পাল্টা অভিযোগ করেছেন, ‘‘গোটা বিষয়টিই ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাজানো ঘটনা।’’
তবে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অঙ্কুর দাস বলেন, ‘‘যাঁরা বিনামূল্যে এই পরিষেবা দেন বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অ্যাম্বুল্যান্সকে হাসপাতালে ঢুকতে দেওয়া হয় না। কিন্তু ওরা রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকাকে অমান্য করে কাজ করছে। আজকের ঘটনা জলপাইগুড়ির লজ্জা।’’
এই কাণ্ড নিয়ে জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের সুপার কল্যাণ খাঁ বলেন, ‘‘এটা অমানবিক ঘটনা। আমি মৃতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু এই ঘটনা ঘটার কথা নয়। বিনামূল্যে সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা চালু রয়েছে। মৃতের পরিবার হয়তো কোনও ভাবে সেটা বুঝে উঠতে পারেননি। তাঁরা রোগী সহায়তা কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই সমস্যার সামধান হয়ে যেত। তবে প্রশাসনিক ভাবে তা প্রচারে যাতে জোর দেওয়া হয় সে দিকটাও দেখছি আমরা।’’
এ নিয়ে রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিষ চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘ওই পরিবারটির উচিত ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা। কিন্তু আমি খবর নিয়ে দেখেছি ওঁরা তা করেননি। মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে হাঁটতে শুরু করেন। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অ্যাম্বুল্যান্সে করে মৃতদেহ পৌঁছে দিয়েছে। এটার জন্য একটা খবর তৈরি হয়েছে। গরিব মানুষের জন্য অনেক সময় অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা দেওয়া হয়। সেটা কারা দেখভাল করে তা আমরা খোঁজ নিচ্ছি। এ ক্ষেত্রে হয়তো সেটা করা হয়নি।’’ এ সব ক্ষেত্রে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য় বার্তা দিয়েছেন স্নেহাশিস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy